v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-09-28 15:41:08    
পোশাক ডিজাইনার ফোং লিং

cri
    চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে তা সান চি নামক এক অঞ্চল আছে , সেখানে অনেক শিল্পী থাকেন । পোশাক ডিজাইনার ফোং লিং তাদের মধ্যে একজন । আজকের সংস্কৃতি সম্ভার আসরে পোশাক ডিজাইনার ফোং লিংকে শ্রোতাবন্ধুদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি ।

    মাদাম ফোং লিংয়ের বয়স চল্লিশের উপর । তিনি তা সান চি অঞ্চলে একটি পোশাক দোকান খুলেছেন । আমাদের সংবাদদাতা তার দোকানে গিয়ে দেখেছেন সেদিন ফোং লিংয়ের গায়ে তার নিজের ডিজাইন করা সৈন্যবাহিনীর ইউনিফর্মের মতো সবুজ রংয়ের ফতুয়া ও শর্টপেন্ট , দেখতে অল্পবয়সী মেয়ের মতো ঝলমলে মনে হয় । সৈন্যবাহিনীর ইউনিফর্মের সবুজ রং হচ্ছে তার দোকানের প্রধান রং , তার ডিজাইন করা বেশীর ভাগ পোশাক এই রংয়ের কাপড় দিয়ে তৈরী হয় । এই সবুজ রংয়ের পোশাক তার দোকানের বৈশিষ্ট্য বলা যায় ।

    ফোং লিং আমাদের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , তার ডিজাইন করা পোশাকগুলোর মধ্যে ছি ফাও , ইউনিফর্ম ও লেনিন স্টাইলের পোশাক আছে । তিনি যে ইউনিফর্ম সবুজ রং বেছে নিয়ে তার বেশীর ভাগ পোশাক তৈরী করেছেন , তার এক প্রধান কারণ হলো গত শতাব্দীর ষাটের দশকে এই সবুজ রং তার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । সেই সময় সমগ্র চীনের যুব সমাজ বীরকে শ্রদ্ধা করেন , তারা একজন সৈন্য হওয়াকে গৌরবের ব্যাপার মনে করেন । ইউনিফর্ম সবুজের পোশাক তাদের সবচেয়ে প্রিয় পোশাক । সেই আমলে রাস্তায় অনেকে এই রংয়ের পোশাক পরেন । যুবতী মেয়েরা ' লেনিন চুয়ান ' নামক এক ধরনের   পোশাক পছন্দ করতো । এই পোশাক সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সৈন্য বাহিনীর ইউনিফর্ম অনুসরণ করে তৈরী হয় , পোশাকটির কোমরের অংশ সরু , সামনে দুই লাইন বোতাম । যুবতী মেয়েরা এই ধরনের পোশাক পরে নিজেদের সুন্দর দৈহিক গড়ন দেখাতে পারেন । গত শতাব্দীর ষাটের দশকে এই ধরনের পোশাক খুব প্রচলিত ছিলো । সেই সময় লোকেরা লাল রংয়ের পোশাকও পছেন্দ করতেন । লাল বিপ্লবও উত্তেজনার প্রতীক । এই সব তার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে । তিনি বলেছেন , আমি মনে করি ইউনিফর্ম সবুজ শক্তির ও ক্ষমতার প্রতীক । লাল রংও ক্ষমতার প্রতীক , কিন্তু আমার ধারনায় লাল রং হচ্চে সেক্সি রং। আমি আমার পোশাক ডিজাইনে শক্তি ও সেক্সের সমন্বয়ের চেষ্টা করছি । ইউনিফর্ম সবুজ ও লাল রংয়ের উপযুক্ত মিলন খুবই সুন্দর দেখায় ।

    ফোং লিং তার পোশাক ডিজাইনে চীনের ঐতিহ্যিক স্টাইল ও পাশ্চাত্যের পোশাকের মিলনের প্রয়াসও চালিয়েছেন । যেমন তিনি পাশ্চাত্য দেশগুলোতে প্রচলিত শেনেলের শর্ট স্কাট চীনের ঐতিহ্যিক ছি ফাওয়ের ডিজাইন ব্যবহার করেছেন , নারীর সুন্দর গড়ন প্রকাশের জন্য ফোং লিং ডিআও মার্কার পোশাকের সরু কোমর ডিজাইনে ব্যবহার করেছেন । তা ছাড়া ঐতিহ্যিক পোশাকগুলোকে আরো আধুনিক ও সেক্সি করার জন্য তিনি ভিভিয়েন ওয়েস্টওডের বড় কলার তার ডিজাইনেও ব্যবহার করেছেন ।

    ফোং লিং আমাদের সংবাদদাতাকে তার ডিজাইন করা কয়েকটি পোশাক দেখিয়েছেন । যেমন মহান ব্যক্তির ছবি আঁকা গেঞ্জি , কলারে সূচিকর্ম সম্বলিত লেনিন স্টাইলের কোট আর পিঠে পাঁচটি লাল লংয়ের তারকা সম্বলিত সাদা রঙয়ের কোর্ট । তার ডিজাইন করা পোশাকে চীনের বৈশিষ্ট্য আছে , খুঁটিনাটি বিষয়ের ডিজাইন পোশাকের গুনমান বাড়িয়েছে।

    পেইচিংয়ে অবস্থানরত বিদেশীরা ফোং লিংয়ের ডিজাইন করা পোশাক পছন্দ করেন , এর একটি প্রধান কারণ হলো তারা এই সব পোশাকের চীনা বৈশিষ্ট্য পছন্দ করেন । চীনারাও ফোং লিংয়ের ডিজাইন করা পোশাক পছন্দ করেন । ত্রিশ থেকে চল্লিশ বছর বয়সের চীনাদের গত শতাব্দীর ষাটের দশকের জীবনের অভিজ্ঞতা আছে , সেই স্মৃতির জন্য ফোং লিংয়ের পোশাক পছন্দ করেন । অল্পবয়সী মেয়েরা মনে করেন , তার ডিজাইন করা পোশাকগুলোতে সাহসের সঙ্গে লাল ও সবুজ এই দুটি রং সুন্দরভাবে ব্যবহার করেছেন , তার তৈরী পোশাক পরে নিজেকে আরো সেক্সি ও আকর্ষনীয় মনে করেন তার । ফোং লিং বলেছেন , তিনি ভাবতেও পারেন নি যে এতো বেশী ক্রেতা তার পোশাক পছন্দ করবেন। তিনি বলেছেন , আমি মনে করি ফ্যাসনকে অনুসরণ করা উচিত নয় , নিজের উপযোগী পোশাকই সবচেয়ে ভালো পোশাক । অনেকে সব সময়ই প্রচলিত ফ্যাসন অনুসারে পোশাক বেছে নেন , কিন্তু আমি ডিজাইনে চিরস্থায়ী কিছু উপাদান খুঁজে বের করতে চাই । আমি আশি করি ক্রেতারা আমার ডিজাইন পোশাক পরে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যাবেন এবং বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের প্রশংসা পাবেন ।

    ফোং লিং পোশাক ডিজাইনে সাফল্য অজর্ন করেছেন , কিন্তু তিনি এ ক্ষেত্রে তার কোনো বিশেষ প্রশিক্ষন ছিল না । ১৯৯০ সালে ফোং লিং উত্তর-পূর্ব চীনের হারবিন শহরের চারুকলা ইন্সটিটিউটের তৈল চিত্র বিভাগ থেকে স্নাতক হওয়ার পর একটি স্কুলে চিত্রশিল্প শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন । ২০০০ সালে তিনি একজন মডেল হন । তিনি প্রায়ই স্বহস্তে নিজের অভিনয়ের পোশাক ডিজাইন করেন। । এই সময়পর্বে তিনি ইউরোপ ও পৃথিবী বিভিন্ন দেশে পোশাক ডিজাইন প্রদর্শনী পরিদর্শনের সুযোগ পান । এই সব অভিজ্ঞতা তাকে পোশাক ডিজাইনে ক্রমেই আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করেছে । ২০০৩ সালে তিনি পোশাক ডিজাইনকে নিজের পেশা হিসেবে গ্রহণ করে একটি পোশাক দোকান খোলার সিদ্ধান্ত নেন । তিনি বলেন , আমি মনে করি , আমি যে অনেক বছর ছবি আঁকার শিক্ষকের কাজ করার পর পোশাক ডিজাইনের কাজ বেছে নিয়েছি , তা' এক স্বাভাবিক ব্যাপার । আমি চারুকলা ও বাস্তব জীবনের সমন্বয় দেখতে চাই । তাই আমার পক্ষে পোশাক ডিজাইন একটি উপযুক্ত কাজ

    ফোং লিংয়ের পোশাক দোকান সুষ্ঠুভাবে চলছে । ব্যস্ত হলেও তিনি আনন্দবোধ করেন । এক ব্যর্থ বিয়ের পর ফোং লিং এখন তার ছেলের সঙ্গে থাকেন । ফোং লিং একা ছেলেকে দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছেন । প্রতি দিন দোকানের কাজ শেষ করে বাড়ী ফিরে তাকে ছেলের পড়াশুনা ও খাওয়া পরা ইত্যাদি বিষয়ের খোজখবর নিতে হবে । তিনি বলেছেন , তিনি এটাকে তার জীবনের এক পরীক্ষা বলে গণ্য করেন । তিনি গর্বের সঙ্গে বলেছেন , মানুষের শক্তির সীমা নেই । যে কোনো কাজ করতে চাইলে আমি তা করতে পারি । এখন ফোং লিংয়ের ছেলে বড় হয়েছে , তার ডিজাইন করা পোশাকগুলো ক্রমেই ক্রেতার সমাদর পাচ্ছে , তাই ফোং লিং আনন্দবোধ করেন । তিনি তার ডিজাইনে বিভিন্ন বয়সের ক্রেতার চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছেন । তিনি বলেছেন , তার একটি স্বপ্ন হলো তার ডিজাইন ও তৈরী পোশাক বিদেশেও সুনাম পাবে ।