গুরু শিষ্য যেতে যেতে একদিন এক হ্রদের ধারে পৌঁছুলেন । হঠাত্ এক ড্রাগন লাফ দিয়ে হ্রদ থেকে উঠে আচার্যের সাদা ঘোড়া খেয়ে ফেললো । আচার্যকে শুন্যে তুলে নিয়ে চোখের নিমেষে পালিয়ে গেলো উখোং ।
একটু পরে উখোং হ্রদের ধারে এসে চিত্কার করে তার গুরুদেবের ঘোড়ে ফেরত চাইলেন । ড্রাগন হ্রদ থেকে উঠে এলো । উখোং-এর সঙ্গে শুরু হলো লড়াই ।
হেরে গিয়ে ড্রাগন একটা সাপে পরিণত হলো । বানর তাকে আবিশ্রান্ত গালাগালি করছিল । হঠাত্ আকাশে দেখা গেলো দেবি কুয়ান ইনকে । দেবি হ্রদের দিকে তাকিয়ে রাজকুমার বলে ডাক দিলেন । ড্রাগন মানুষের বেশে উপরে উঠে এসে আচার্যকে প্রণাম করলো ।
দেবি বানরকে বললেন , পথে বিপদ হলে প্রথমেই বলবে তির্থ যাত্রার কথা । দেবি রাজকুমারের দিকে চেয়ে বললেন , "বদলাও" । অমনি সে একটি সাদা ঘোড়া হয়ে গেলো । দেবি ঘোড়াকে আদেশ দিলেন , তির্থ যাত্রায় আচার্যকে সাহায্য করার জন্য । বৌদ্ধ শাস্ত্র গ্রন্থ সংগ্রহের পর সে আবার ড্রাগনের রুপ ফিরে পাবে ।দেবি চলে গেলেন ।
উখোং সাদা ঘোড়া নিয়ে এসে আচার্যকে সব কথা খুলে বললো ।
আচার্য দেবির উদ্দেশ্যে প্রণাম জানালেন । তারপর হ্রদ পার হয়ে ঘোড়া সহ আচার্য এবং উখোং যেতে থাকলো পশ্চিম দিকে । ভারতর্বষের উদ্দেশ্যে ।
আচার্য সুন উখোং-কে নিয়ে এক পাহাড়ের উপর মন্দিরের সামনে এসে থামলেন । তাঁরা দেখলেন যে সেটি কুয়ানইন বুদ্ধের মন্দির । তিনি ওখানে বসে পুজা করলেন ।
দুজন ভিক্ষু একজন পুরোহিতকে সঙ্গে নিয়ে আচার্যের কাছে এলেন । আচার্য প্রশ্ন করে জানলেন , পুরোহিতের বয়স ২৭০ বছর । পুরোহিত জানালেন , থাং সাম্রাজ্যে থেকে এসেছেন শূনে আচার্যকে তিনি দেখতে এসেছেন । কথাবার্তা বলতে লাগলেন তাঁরা ।
এক কিশোর ভিক্ষু চমত্কার পেয়ালায় তিন জনের জন্য চা নিয়ে এলো । আচার্য পেয়ালার প্রশংসা করলেন । বৃদ্ধ আচার্যের কাছে কি মূল্যবান বস্তু আছে তা দেখতে চাইলো ।
উখোং বললো , তার কাছে খুব মূল্যবান একটি কাষা বস্ত্র (চীনা চিয়াশা বা চাশা শব্দ থেকে কাষা শব্দটি নেয়া হয়েছে । এর অর্থ ঢিলা কারুকাজ করা এক ধরনের পোশাক, বৌদ্ধ ভিক্ষুরা উত্সব অনুষ্ঠানে কোট জাতিয় এই ঢিলা পোশাক পরে) আছে ।
বৃদ্ধ তার সাত আটশো নিল্কের কাষা দেখালো । তারপর সুন দেখালো তার কাষাখানা । মনি মুক্তো খচিত কাষা ঝলমল করে উঠলো । ভিক্ষুদের চোখ বিস্ময়ে ছানাবড়া । বৃদ্ধ প্রলুব্ধ হলো । সে বস্ত্রটা পেছনের ঘরে নিয়ে একান্তে দেখতে চাইলো । আচার্য ভয় পেলেন । উখোং অভয় দিলো এবং বস্ত্রটা দেখতে দিলো তাঁকে । লোভি ভিক্ষুরা আচার্যের ঘরে আগুন লাগিয়ে সব পোড়াবার অছিলায় কাষাটি চুরি করতে চাইলো ।
মাঝ রাতে লোক চলাচলের আওয়াজে উখোং-এর ঘুম ভেঙে গেলো । কি হচ্ছে বাইরে তা দেখার জন্য মৌমাছি হয়ে বেরিয়ে এলো সে । দেখলো , ভিক্ষুরা ঘরে আগুন দেয়ার জন্য কাঠ জমা করছে ।
এক ডিগবাজি দিয়ে সে স্বর্গরাজ্যের দক্ষিণ দরজায় এলো । প্রধান দ্বারপালের কাছে সব বিপদের কথা বললো । তারপর "অগ্নি প্রতিরোধ আচ্ছাদন" ধার চাইলো দ্বারপালের কাছে ।
উখোং-তাড়াতাড়ি এসে আচার্য , সাদা ঘোড়া ও মালপত্র সব ঢেকে ফেললো । তারপর কাষা রক্ষা করার জন্য সে বৃদ্ধের ঘরের ছাদে গিয়ে বসলো । আগুন জ্বললে যাদুমন্ত্র প্রয়োগ করে উখোং হাওয়া দিতে লাগলো । আগুন ছড়িয়ে পড়লো মন্দিরের সর্বত্র । হায় হায় করে উঠলো ভিক্ষুরা ।
|