v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-09-26 14:49:08    
উত্তরমেরুতে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ চীনের মেরু অঞ্চলে পর্যবেক্ষণের একটি নতুন তপ্তস্থলে পরিণত হচ্ছে

cri
    সাধারণ মানুষের মনে উত্তরমেরু আর দক্ষিণমেরু নির্জন ও স্বাধীন দু'টি গোপন জগত এবং মানুষের জীবন-যাপনের সবুজ বিশ্বের সঙ্গে হাজার হাজার পর্বত আর সাত সমুদ্র তের নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ দু'অঞ্চল নিয়ে বিরাটাকারের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণমূলক কার্যকলাপ চালানোর প্রয়োজন নেই বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু আসলে তা নয়। পৃথিবী একটি সামগ্রিক সত্তা বলে অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে উত্তরমেরু ও দক্ষিণমেরুর অস্তিত্ব ও পরিবর্তনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। বহু বছর ধরে মেরু অঞ্চলের গবেষণা বিভিন্ন দেশের অনুসন্ধানকারী ও বিজ্ঞানীদের আকর্ষণ করে আসছে।

    গত শতাব্দির আশির দশক থেকে চীন মেরু অঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিণ মেরুতে তার পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। কিন্তু গত কয়েক বছরে দক্ষিণ মেরুতে পর্যবেক্ষণ করার সঙ্গে সঙ্গে উত্তরমেরুও চীনের মেরু পর্যবেক্ষণের একটি নতুন আকর্ষণে পরিণত হচ্ছে।

    ২০ শতাব্দির নব্বই'র দশকের আগে, স্নায়ু যুদ্ধের কারণে উত্তরমেরুর আশপাশের দেশ নয় বলে তখন চীন উত্তরমেরুতে পর্যবেক্ষণের কাজ চালাতে পারছিলো না। স্নায়ু যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত চীন ধাপে ধাপে কাজটা শুরু করে। চীনের জাতীয় সমুদ্র ব্যুরোর মেরু পর্যবেক্ষণ কার্যালয়ের পরিচালক ছু থান চৌ বলেছেনঃ উত্তরমেরুতে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ চালানোর সুদূরপ্রসারী তাত্পর্য আছে। "একটি শীত প্রধান অঞ্চল হিসেবে উত্তরমেরুর পরিবর্তনের প্রক্রিয়া মানবজাতির সামাজিক জীবনের ওপর কি ধরণের প্রভাব ফেলবে এবং মানবজাতির তত্পরতা আবার উত্তরমেরুর ওপর কি ধরণের প্রভাব ফলবে। তা সারা বিশ্বের ব্যাপক নজর-কাড়া বিষয়। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের একটি বড় দেশ হিসেবে চীনের ওপর উত্তরমেরুর আবহাওয়ার পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব পড়ে। সেইজন্য আমরা এ অঞ্চলের আবহাওয়া ও পরিবেশের পরিবর্তনের প্রক্রিয়ার ওপর আরও বেশী নজর রাখি। এটা বর্তমানে উত্তরমেরু পর্যবেক্ষনের ক্ষেত্রে একটি শীর্ষস্থানীয় ও মূখ্য বিষয়"।

    ১৯৯৯ সাল ও ২০০৩ সালে চীন দু'বার উত্তরমেরু পর্যবেক্ষণ করেছে। "হিমেল ড্রাগন" নামে একটি বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষক জাহাজে করে চীনের বিজ্ঞানীরা উত্তর আর্কটিক মহাসাগরের কয়েকটি সমুদ্র সীমায় সাগর, বরফ, বায়ুমন্ডল, জীব, ভূতত্ত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে বহুমুখী পর্যবেক্ষণ করে অনেক মূল্যবান তথ্য ও নমুনা সংগ্রহ করেছেন।

    কিন্তু জাহাজের অবস্থার সীমাবদ্ধতার কারণে উত্তরমেরুতে চীনের বিজ্ঞানীরা একটানাভাবে পর্যবেক্ষণের কাজ চালাতে পারছিলেন না। এ অঞ্চলে পর্যবেক্ষণ জোরদার করার জন্য ২০০৪ সালে চীন প্রথমবারের মতো উত্তরমেরু বৃত্তে একটি বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। এ কেন্দ্র স্থাপনের কাজে নিয়োজিত দায়িত্বশীল ব্যক্তি লি ছুয়েন সিয়ান এই প্রসঙ্গে বলেছেনঃ "২০০৪ সালে নরওয়ের স্পিট্সবার্গেন দ্বীপ পুঞ্জের নিউআলেসান্ড অঞ্চলে চীন উত্তরমেরুর পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র হুয়াংহো কেন্দ্র স্থাপন করেছে। সেখানে আমাদের বিজ্ঞানীরা ভূ-পদার্থবিদ্যা, বায়ু মন্ডল, জরিপ, ভূতত্ত্ব ও সমুদ্রবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে বহুমুখী পর্যবেক্ষণ করে অনেক তথ্য ও নমুনা পেয়েছে এবং উত্তরমেরুতে চীনের দীর্ঘকালীন ও নিরন্তর বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ চালানোর ক্ষেত্রে দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেছেন"।

(১৯৯৯ সালে উত্তরমেরুতে)

    উত্তরমেরুতে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন চীনের উত্তরমেরু পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এর অর্থ হচ্ছে এই যে, দীর্ঘকালীন পর্যবেক্ষণের তত্পরতা চালানোর ক্ষেত্রে চীনা বিজ্ঞানীরা একটি স্থল-প্লাটফর্মের অধিকারী হয়েছেন।

    বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে চীনের উত্তরমেরু পর্যবেক্ষণের দু'টি প্রধান লক্ষ্য আছে। একঃ সারা পৃথিবীর পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে উত্তরমেরুর প্রতিক্রিয়া জেনে নেওয়া এবং উত্তর আর্কটিক মহাসাগরে প্রাথমিকভাবে সমুদ্র ও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা । দুইঃ চীনের আবহাওয়া ও পরিবেশের ওপর উত্তরমেরুর পরিবর্তনের প্রভাব জেনে নেওয়া।

    চীনের জাতীয় সমুদ্র ব্যুরোর মেরু পর্যবেক্ষণ কার্যালয়ের পরিচালক ছু থান চৌ বলেছেন, "হিমেল ড্রাগন" নামক পর্যবেক্ষণ জাহাজ ও হুয়াং হো পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কল্যাণে চীনের উত্তরমেরু পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রয়েছে এবং এ অঞ্চলে আমাদের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের সামর্থ্য দারুণভাবে জোরদার হয়েছে। ভবিষ্যতে কেন্দ্র থেকে পর্যবেক্ষণ করা ছাড়া আমরা অব্যাহতভাবে উত্তরমেরুতে জাহাজ পাঠিয়ে উত্তর আর্কটিক মহাসাগরেও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ করবো এবং সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করবো যাতে আমাদের গবেষণার মান উন্নত হতে পারে।"

(হুয়াংহো পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র)

    তিনি বলেন, কয়েক বছরে একবার করে "হিমেল ড্রাগন" নামক জাহাজ পাঠানোর পরিবর্তে এ বছর থেকে চীন প্রতি বছর কমপক্ষে একবার এমন পর্যবেক্ষণমূলক কার্যকলাপ চালানোর ব্যবস্থা করবে। সম্প্রতি ২০০৫ সালে উত্তরমেরুতে চীনের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ তত্পরতা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। মোট ২১জন পর্যবেক্ষক এই অভিযানে যোগ দিয়েছেন। মেরু অঞ্চলের সমুদ্র, সমুদ্রের বরফ ও সমুদ্রের স্রোতের পরিবর্তন, মেরু অঞ্চলের পরিবেশ ও সম্পদের সম্ভাবনা ও উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করে তাঁরা পর্যবেক্ষণের কাজ করবেন।