v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-09-23 19:42:20    
বিশ্ববিশ্রুত তিব্বতী গায়ক তেনচেন

cri
    চীনে ৫৬টি জাতির মধ্যে তিব্বতী জাতি এমন একটি সংখ্যালঘু জাতি , যে জাতি নাচ গান পরিবেশনে পারদর্শী । তিব্বতী অধ্যুষিত তিব্বতে এমন একটি ছড়া খুব প্রচলিত আছেঃ এখানে যারা কথা বলতে পারেন , তারা গান গাইতে পারেন আর যারা পথ হেঁটি চলতে পারেন , তারা নাচ করতে পারেন । হাজার হাজার বছর ধরে ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির তুষার পাহাড় আর বিস্তীর্ণ তৃণভূমিতে বহু তিব্বতী গায়ক-গায়িকা লালন পালন করা হয়েছে । আজ এই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিশ্রুত তিব্বতের একজন প্রসিদ্ধ তিব্বতী গায়ক-তেনচেন সম্পর্কে আপনাদের কিছু বলছি আমি…

     পর্বতশৃঙ্গ তুষায় আবৃত , তুষা গলে যাওয়ায় মাটি ভিজে যায় , পশুপালকরা আনন্দপূর্ণ' । এটাই বহু বছর ধরে তিব্বতী গায়ক তেনচেনের সবচেয়ে পছন্দীয় গাওয়া একটি লোক সংগীত । তিব্বতের ইটখাজে অঞ্চলের একটি কৃষক পরিবারে তেনচেনের জন্ম । তিনি হয়তো কখনো এই কথা ভেবেন নি যে , এই লোক সংগীতের জন্যই তিনি বিশ্ব সংগীতের মহলে প্রবেশ করেছেন ।

    তেনচেন জন্ম গ্রহণ করেছেন একটি গরীব পরিবারে । যদিও বাবা মা অল্প শিক্ষিত , তবে তারা তার লেখাপড়া খুব সমর্থন করেন । মাধ্যমিক স্কুল থেকে স্নাতক হবার পর তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিব্বত শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের শিল্পকলা বিভাগে ভর্তি হন । তখন থেকে তিনি নিয়মিত শিল্পকলার শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করলেন । ওখানে তিনি যেমন তিব্বতের বৈচিত্র্যময় ঐতিহ্যিক সংগীত শিখেছেন , তেমনি পাশচাত্যের সংগীত উন্নয়নের ইতিহাসও অধ্যয়ন করেছেন ।

    ১৯৮১ সালে তিনি স্নাতক হবার পর তিব্বতের নৃত্য সংগীত শিল্পী দলে ভর্তি হন । তিনি একজন গায়কে পরিণত হন । ছ' মাস পর গান গাওয়ার জ্ঞান আর নৈপুণ্য উন্নত করার জন্য তাকে শাংহাই সংগীত ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয় । তখন থেকে পশ্চিমাংশের তুষার মালভূমি থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার পূর্বে শাংহাই মহানগরীতে তিনি তার ৪ বছরব্যাপী পেশাগত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে শুরু করেন ।

    তেনচেন অতীতের কথা স্মৃতি করে বলেছেন , শাংহাই সংগিত ইনস্টিটিউটে তিনি ছিলেন একমাত্র তিব্বতী ছাত্র । ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার সময় তিনি কোনো পেশাগত প্রশিক্ষণ পান নি এবং তার গান গাওয়ার মান ক্লাসের সকলের চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন ।

    শাংহাই সংগীত ইনস্টিটিউটে ভর্তি হওয়ার পর শাংহাই সংখ্যালঘু জাতি বিষয়ক কমিশন সহ শাংহাইয়ের নানা মহল তিব্বতী ছাত্রছাত্রীদের খুব যত্ন নিয়েছে । আমাদের ভিত্তি দুর্বল ছিলো । শিক্ষক শিক্ষিকা তিব্বতী ছাত্রছাত্রীদের পেশাগত জ্ঞান উন্নত করতে চেষ্টা করেছেন ।

    শিক্ষকদের পরিচালনা আর সাহায্যে তেনচেনের গান গাওয়ার নৈপুণ্য আর কৌশল অনেক উন্নত হয়েছে । চার বছর পর তিনি ক্লাসে পেশাগত নৈপুণ্যের দিক থেকে দ্বিতীয় হয়ে স্নাতক হয়েছেন এবং তিব্বতের একজন শ্রেষ্ঠ অল্পবয়সী গায়কে পরিণত হয়েছেন । ১৯৮৫ সালে তিনি চীনের সংখ্যালঘু জাতির প্রথম গান গাওয়ার প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ পুরস্কার -'সোনালী ফিনিকস্ পুরস্কার' জয় করেছেন । তার পরবর্তী ১৫ বছরে তিনি রাষ্ট্র আর তিব্বতের গান গাওয়ার প্রতিযোগিতায় কয়েক ডজন পুরস্কার জয় করেছেন । তার গান গাওয়ার নৈপুণ্যে দেশ আর পাশ্চাত্যের বৈশিষ্ট্য একত্রে হয়েছে ।

    গত শতাব্দির নব্বইয়ের দশক থেকে তেনচেন আর তিব্বতের অন্যান্য শ্রেষ্ঠ শিল্পীরা তিব্বতের সাংস্কৃতিক দূত হিসেবে এশিয়া , ইউরোপ আর আমেরিকার বিশটিরও বেশী দেশ আর অঞ্চলে সফর করেছেন । তাদের চিত্তাকর্ষক অভিনয়ের মাধ্যমে ব্যাপক বিদেশী দর্শকরা তিব্বতের প্রাচুর্যময় সংস্কৃতি জানতে শুরু করেছেন ।

    তেনচেন বলেছেন , তিব্বত 'নাচ গানের সাগর' বলে আখ্যায়িত করা হয় । তিব্বতী জনগণ বংশপরম্পরায় 'বিশ্বের ছাদ' বলে পরিচিত এই মাটিতে বাস করেন । তারা উজ্জ্বল তিব্বতী জাতির সংস্কৃতি সৃষ্টি করেছেন । তিব্বতী জাতির গভীর সাংস্কৃতিক ভিত্তি আছে । সুতরাং বিদেশে তাদের অভিনয় খুব ফলপ্রসূ হয়েছে । বহু বিদেশী কখনো তিব্বতে যান নি , তারা তিব্বত সম্পর্কে একদম জানেন না । সুতরাং তারা তিব্বতী শিল্পী দলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে খুব পছন্দ করেন । অনুষ্ঠান শেষে তারা সবাই দাঁড়িয়ে শিল্পীদের সাফল্যমন্ডিত অভিনয়ের প্রতি অভিনন্দন জানিয়ে বেশি ক্ষণ তুমুল হাততালি দেন ।

    তেনচেন বলেছেন , তাদের সাংস্কৃতিক আনুষ্ঠান দেখে বিদেশে বসবাসকারী তিব্বতী স্বদেশীয়দের মধ্যে যারা তিব্বতের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতেন না , তারা খুব মুগ্ধ হয়েছেন ।

    ১৯৫১ সালে তিব্বতে শান্তিপূর্ণ মুক্তি অর্জিত হবার পর লক্ষনীয় পরিবর্তন ঘটেছে । কিন্তু বিদেশে বসবাসকারী বহু তিব্বতীরা কোনো কোনো বিভ্রান্ত প্রচারের প্রভাবে তিব্বতের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ঠিক জানতেন না । প্রথমে যখন আমরা তাদের সংগে দেখা করতাম , তখন তারা আমাদের প্রতি বন্ধুত্ব দেখাতেন না । পরে আমাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখার সংগে সংগে তারা অনুভব করেছেন যে , তিব্বতের সংস্কৃতি সত্যি ভাল অবস্থায় সংরক্ষিত আছে । এখন তারা তিব্বতে একটু ঘুরে ঘুরে বেড়াতে চেয়েছেন ।

    বিদেশে ঘন ঘন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনের জন্য তেনচেন বছরের অর্ধেক সময়ে পরিবার পরিজনের সংগে থাকতে পারেন না । তবে তার স্ত্রী আমেই স্বামীর কথা বলতে গিয়ে খুব গৌরব বোধ করেছেন ।

    তিনি একজন ভাল স্বামী । আমাদের শিল্পী দলে তাকে একজন আদর্শ স্বামী বলে মনে করা হয় । যখন তিনি বাসায় ফিরে আসেন , তখন তিনি বাড়ির সব কাজ বহন করেন ।

    গত বছরের ১ অক্টোবর চীনের জাতীয় দিবসকালে তিনি আর উত্তর- পূর্ব চীনের সেন্ ইয়াং সংগীত ইনস্টিটিউটের অধীনস্থ নৃত্য বিদ্যালয়ে শিক্ষারত তার মেয়ের সংগে পেইচিংয়ে এক সাথে অভিনয় করেছেন ।

তেনচেন বলেছেন , একজন তিব্বতী গায়ক হিসেবে তিনি অব্যাহতভাবে দেশ-বিদেশের দর্শকদের জন্য গান গাইবেন । তিব্বত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলা ইনস্টিটিউটের একজন খন্ডকালীন প্রফেসার বলে তিনি ভবিষ্যতে ছাত্রছাত্রীদের আরো বেশি পড়াতে যাবেন । তিনি তার নিজের গান গাওয়ার নৈপুণ্য , পরিবেশনের অভিজ্ঞতা অল্পবয়সীদের শিখিয়ে দেবেন ।