তে হোং দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের একটি সংখ্যালঘুজাতি স্বায়ত্তশাসিত বিভাগ । এই বিভাগের অধিবাসীদের মধ্যে তাই আর চিং পু জাতির লোকেরা সবচেয়ে বেশি । এই অঞ্চল পাহাড় , নদ-নদী আর প্রচুর সৌর- শক্তি প্রভৃতি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ । গত কয়েক বছরে স্থানীয় অধিবাসীরা এই অঞ্চলের অনুকূল আবহাওয়া , মাটি আর পানি প্রভৃতি সম্পদ কাজে লাগিয়ে ব্যাপকভাবে স্থানীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কফি , ইক্ষু প্রভৃতি অর্থকরী শস্য বপন করেন । এই সব স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কৃষির উন্নয়নে স্থানীয় অধিবাসীদের আয় বাড়ানোর একটি পথ খুলেছে ।
মিঃ ফোং ইয়েন চিং তে হোং বিভাগের হো হুয়েন গ্রামে বসবাসকারী তাই জাতির একজন যুবক । এখন তার বাসার এক তৃতীয়াংশ হেক্টর জমিতে যে কফি গাছ লাগানো হচ্ছে , তা তার পরিবারের প্রধান আয়ের উত্স । তিনি সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে বলেছেন , চার বছর আগে তার পরিবারের ৮ জনের আয় ধান চাষের ওপর নির্ভর করতো । আয় খুব সামান্য ছিল । জমিতে কফি গাছ লাগানোর পর তার পরিবারের আয় অনেক উন্নত হয়েছে ।
খাদ্য শস্য বপনের চেয়ে কফি গাছ লাগানোর আয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।এখন আমাদের বার্ষিক আয় ৮ হাজার ইউয়ানেরও বেশি হয়েছে।এবছর আমরা আরো বেশি কফি গাছ লাগানোর কথা বিবেচনা করি।
জানা গেছে , কয়েক বছর আগে হো হুয়েন গ্রামে ৬৭টি কৃষক পরিবার ছিল । তাদের মধ্যে বেশি পরিবার গাছের চারা বিক্রির ওপর নির্ভর করে জীবনযাপন করতো । তারা পুরানো খড়ের ঘরে থাকতেন । গ্রামের পরিবেশ নোংরা ছিল । তাকে নিখুঁত একটি গ্রাম বলে মনে করা হতো । তবে গত কয়েক বছরে কফি গাছ লাগানোর পর গ্রামবাসীদের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে । এখন গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে কাঠ ও ইটভিত্তিক পাকা ঘর নির্মিত হয়েছে । বহু পরিবারে রঙ্গিন টিভি , ভি সি ডি আর হস্তচালিত ট্রাক্টর কেনা হয়েছে । তা ছাড়া গ্রামে নতুন প্রাথমিক স্কুলও নির্মাণ করা হয়েছে ।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা সংবাদদাতাকে বলেছেন , কফি বপন করার জন্য প্রকৌশলের ভীষণ প্রয়োজন । কৃষির জন্য ক্ষতিকর পোকা প্রকোপ ঘটলে এক বছরের পরিশ্রম বিনষ্ট হতে পারে । কয়েক বছর আগে গ্রামবাসীরা খাদ্য শস্যের পরিবর্তে কফি রোপন করার সিদ্ধান্ত নেন । তে হোংতে কফি শিল্প প্রতিষ্ঠান বিষয়ক ভাল নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে । ১৯৯৭ সালে তে হোং সরকারের সমর্থনে কফি উত্পাদনকারী তে হোং শিল্প লিমিটেড কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয় ।
এই কোম্পানির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ফেং চুং রেন সংবাদদাতাকে বলেছেন , কৃষকরা যাতে নিশ্চিন্তে কফি রোপণ করতে পারেন , সেজন্য তারা কৃষকদের ঋণ দান আর বিক্রয়ের দাম নিশ্চিত করা প্রভৃতি সমর্থন আর সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে ।
কোম্পানি আর কৃষকদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী , কৃষকরা যে কফি বিক্রা করবেন , তার প্রতি কিলোগ্রামের দাম ১.৩ ইউয়ানেরও উপরে বজায় রাখা হবে । বাজারের দাম বেড়ে যাওয়ার সংগে সংগে কোম্পানির কেনার দামও বেড়ে যাবে । তা ছাড়া কফি রোপনের ক্ষেত্রে কোম্পানি অর্থবিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে । কোম্পানির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী , প্রতি হেক্টর জমিতে কফি উত্পাদনের জন্য যে খরচ লাগে , তার মধ্যে কৃষকদের জন্য শুধু সাড়ে চার হাজার ইউয়ানের কম খরচ বহন করা যায় , বাকী অংশটা কোম্পানি বহন করবে । তা ছাড়া কফির উত্পাদন পরিমাণ নিশ্চিত করার জন্য কোম্পানিও ব্যবস্থা নিয়েছে । কফি বপনে পরামর্শ দেয়ার জন্য কোম্পানির প্রকৌশলীরা কৃষকদের ভিতরেও যান । কোম্পানির পরামর্শ অনুযায়ী প্রতি হেক্টর জমিতে কফির উত্পাদন পরিমাণ ১৫ হাজার কিলোগ্রামের কম হবে না ।
জানা গেছে , গত কয়েক বছরে দেশ-বিদেশের কফির চাহিদা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ার দরুণ তে হোং কোম্পানি বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য কফি উত্পাদনকে সবুজ রঙ শিল্প উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে ধার্য করেছে । মিঃ ফেং চুং রেন বলেছেন , দে হোংতে প্রথম দিকে শুধু ৩০ হেক্টর জমিতে কফি রোপণ করা হয় । গ্রামবাসীদের সযত্ন ব্যবস্থাপনায় পরের বছর থেকে সব কফি গাছ থেকে ফল পাওয়া যায় । প্রতি হেক্টর জমিতে তাঁজা কফির উত্পাদন পরিমাণ ৩০ টনে দাঁড়ায় । কফি শিল্পের উন্নয়নের ভবিষ্যত দেখে স্থানীয় গ্রামবাসীদের কফি বপনের প্রত্যয় বেড়ে গেছে ।
২০০৪ সালের শেষ নাগাদ তে হোংতে ২ হাজার ৬ শো হেক্টর জমিতে কফি বপন করা হয়েছে । ফলে ২০ হাজারটি কৃষক পরিবারের বার্ষিক আয় ৩ কোটি ইউয়ানেরও বেশি হয়েছে । বর্তমানে তে হোংতে কফি বপন জমির বিন্যাস আর জলসেচ প্রকল্পের দিক থেকে একটি পূর্ণাংগ উত্পাদন ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে । এই ঘাঁটি চীনের কৃষি মন্ত্রনালয় কর্তৃক দক্ষিণ এশিয়ার গ্রীষ্মমন্ডলীয় শস্য উত্পাদনকারী ঘাঁটি বলে নির্বাচিত হয়েছে । তে হোংয়ের উত্পন্ন কফি সিংগাপুর , দক্ষিণ কোরিয়া , ভিয়েত্নাম , সৌদি আরব ইত্যাদি দেশ ও অঞ্চলে রফতানি করা হয়েছে । ম্যানেজার ফেং বলেছেন , তারা কফি বপনের আয়তন বাড়ানোর কথা বিবেচনা করছেন , যাতে কৃষকদের আয় আরো বেশি বেড়ে যায় ।
আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী , ২০১০ সালের আগে আমাদের কফি বপনের আয়তন ৬ হাজার ৬ শো হেক্টরে দাঁড়াবে । কফির বার্ষিক উত্পাদন পরিমাণ ২০ হাজার টনে পৌঁছবে । তখন চীনের বিভিন্ন বড় ও মাঝারি শহরে তে হোংয়ের উত্পন্ন কফি বিক্রি করা হবে ।
তে হোংতে কফি বপন একটি নতুন শিল্প । কিন্তু আখ বপনের ইতিহাস ৪০ বছরেরও বেশি পুরানো । এই শিল্প ওখানকার অন্যতম প্রধান শিল্পে পরিণত হয়েছে । বর্তমানে তে হোংতে ৭০ শতাংশ কৃষক আখ বপন করেন । স্থানীয় সরকার মনে করে যে , চিনি শিল্প উন্নয়নে যেমন কৃষকদের আয় তেমনি সরকারের কর আদায়ের আয়ও বেড়ে যাবে । সুতরাং অর্থনীতি উন্নয়ন করতে চাইলে চিনি শিল্প উন্নত করতে হবে । সেজন্য ২০০৩ সাল থেকে স্থানীয় সরকার একদিকে চিনি শিল্পের উন্নত মানের প্রকৌশল আমদানি করেছে , অন্য দিকে চিনি উত্পাদন ব্যবস্থাপনার একটি বিশেষ সংস্থা গড়ে তুলেছে ।
বর্তমানে তে হোং সরকার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কৃষি উন্নয়নের কাজ জোরদার করছে , যাতে বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কৃষি স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়নে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে ।
|