সংশ্লিষ্ট তথ্য থেকে জানা গেছে, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১ ডলার মূল্যের পণ্য উত্পাদনে ২৩০ গ্রাম তেল লাগ। তবে জাপানে শুধু লাগে ১৩০ গ্রাম। আসলে এ পরিসংখ্যান না তুললেও কিছু আসে যায় না। শক্তি সম্পদের সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে জাপান পৃথিবীর প্রথম সারিতে রয়েছে এবং এই ক্ষেত্রে নতুন উপায় খুঁজে বের করার জন্য তারা অনবরত প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে।
জাপান লক্ষ্য করেছে যে, বিশ্বের তেল ব্যবহারের কাঠামোতে প্যাট্রোল ও হালকা তেলের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে, সঙ্গে সঙ্গে ভারি তেলের চাহিদা কমছে। চাহিদার পার্থক্য আছে বলে মূল্যও উঠানামা করে। সাধারণতঃ এই দুই তেলের মধ্যে মূল্যের ৫ থেকে ৬ ডলারের পাথর্ক্য থাকে। দাম প্রচণ্ডভাবে বাড়ার সময়ে এ পাথর্ক্য ১৮ ডলারে দাঁড়ায়। এ ব্যবধানের সুযোগ নিয়ে জাপান প্রধাণতঃ সংযুক্ত আরব আমীরাতের উত্পাদিত ভারি তেল আমদানি করে। তারপর জাপান পুঁজি বিনিয়োগ করে দ্বিতীয়বার শোধনের ব্যবস্থা করে ভারি তেলকে উচুঁ মানের তেলে পরিণত করে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্যাট্রোলের চাহিদা মোট শক্তি সম্পদের চাহিদার অর্ধাংশ। তবে জাপানে পেট্রোলের চাহিদা মোট চাহিদার ১৫ শতাংশ মাত্র।
("শীতল পরিকল্পনার"অপ্রত্যাশিত সাফল্য)
গত পয়লা জুন থেকে জাপান "শীতল পরিকল্পনা" নামক শক্তি সম্পদের সাশ্রয়ের একটি ব্যবস্থা নিয়েছে। এ ব্যবস্থা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। শীতল পরিকল্পনার অধীনে অফিসভবনগুলোর বায়ু নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা ২৮ সেন্টিগ্রেডে স্থির রাখা হয় এবং সরকারী কর্মকর্তারা স্যুট ও টাই খুলে হাফ-শার্ট পরে অফিস করতে বলা হয়। এ পরিকল্পনার একটি অপ্রত্যাশিত সাফল্য হলো এই যে, শীতল জামা-কাপড় পরার সুপারিশের কারণে লোকজন ক্যাজুয়্যাল প্যান্ট, জুতো ও বেল্ট বেশি কিনেছেন বলে জুন মাসে খুচরা বিক্রয়ের পরিমাণ গত বছরের অনুরূপ সময়ের তুলনায় ৩ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের অধিকাংশ সময়ে জাপানের খুচরা বিক্রয় মন্দা অবস্থায় ছিলো। চলতি বছরের এই বৃদ্ধি অবশ্য একটি সুখবর। গত জুলাই মাসে টোকিও শপিং মলে বিক্রয়ের পরিমাণ গত বছরের অনুরূপ সময়ের তুলনায় ১.২ শতাংশ বেড়েছে, যা গত ৪ বছরে বৃহত্তম বৃদ্ধি। পুরুষদের জামা-কাপড় বেশি বিক্রয়ের কারণে এ বিরাট সাফল্য পাওয়া গেছে। গত আগস্ট মাসে জাপানের পরিবেশ মন্ত্রী অনুরূপ " উষ্ণ পরিকল্পনা" ঘোষণা করেছেন। এ পরিকল্পনা আগামী পয়লা অক্টোবর থেকে প্রবর্তিত হবে। এ পরিকল্পনায় কর্মচারীদের শীতকালে বেশি মোটা মোটা কাপড় পরতে উত্সাহ দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া শক্তি সম্পদের ক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়ন সহায়তার জন্য জাপানের অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নতুন শক্তি সম্পদ ও শিল্প প্রযুক্তি উন্নয়ন সংস্থা" প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে প্রতি বছর এক বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়। শক্তি সম্পদের ব্যবহার উন্নয়নের জন্য জাপান সরকার বেশি জ্বালানি কর নেয়।
সমগ্র দক্ষিণ কোরিয়ায় ১০ কোটি গাড়ি আছে, তার মানে প্রতি চারজনের একটি গাড়ি আছে। সেইজন্য গাড়ির পেট্রোলের সাশ্রয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । জানা গেছে, প্রতি সপ্তাহে এক কর্মদিনের জন্য গাড়ী না চালিয়ে বাসায় রাখার ব্যাপারে নাগরিকদের উত্সাহ দেওয়ার উদ্দেশ্যে সরকার ভর্তুকি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে। কোরিয়ার সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেছেন, গাড়ী জড়িত কর কমানোর ব্যবস্থা ছাড়া যেসব ড্রাইভার শক্তি সম্পদের সাশ্রয় করেন, সরকার তাদের বীমা ও পার্কিং ফি কমিয়ে আনার মত সুযোগ-সুবিধা দেয়ার কথা বিবেচনা করছে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রধানত তেল দিয়ে বিদ্যুত উত্পাদন করা হয়। সেইজন্য বিদ্যুতের সাশ্রয় করাও কোরিয়ার সম্পদের সাশ্রয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জন সমাগমের জায়গায় বিদ্যুতের সাশ্রয় সুপারিশ করার সঙ্গে সঙ্গে সরকার এই সিদ্ধান্তও নিয়েছে যে, আগামী বছর থেকে নতুন নির্মিত ভবনের ওপর শক্তি "সম্পদের সাশ্রয়ের স্বীকৃতির ব্যবস্থা" প্রবর্তন করবে। এই ভবনগুলোর হস্তান্তরের সময়ে সংশ্লিষ্ট স্বীকৃতির মূল্যায়ন-পত্রও হস্তান্তর করতে হয়।
|