v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-09-21 16:28:34    
অন্ধ সংগীতবিদ কাও চি ফোং

cri
    কাও চি ফোং চীনের একজন অন্ধ সংগীতবিদ । তিনি গানে সুর দেন , গানের কথা লিখেন , গান করেন এবং বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন । তিনি সংগীত পছন্দ করেন , তাই কোনো অসুবিধাই সংগীতের পথে তাকে বাধা দিতে পারে না ।

    উত্তর চীনের সানসি প্রদেশের গ্রামাঞ্চলে কাও চি ফোং জন্মগ্রহন করেন। তার বয়স যখন ছয় বছর , তিনি এক চিকিত্সা দুঘর্টনার শিকার হন , তিনি দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে অন্ধ হয়ে যান । তার জন্মস্থানে কোনো অন্ধদের স্কুল নেই বলে কাও চি ফোং স্কুলে পড়ার সুযোগ পান নি । ৯ বছর বয়স থেকে তিনি বাবার কাছ থেকে চীনা বাদ্যযন্ত্র আর হু বাজাতে শেখেন । দিনের বেলায় বাবা ক্ষেতে কাজ করতে যান , সন্ধ্যার সময় তিনি বাবার পাশে বসে বাবার গাওয়া সুর অনুসারে আর হু বাজান । কিছু দিন পর তিনি বেশ কয়েকটি স্থানীয় লোক- সংগীতের সুর বাজাতে পারেন , এতে কাও চি ফোং খুব খুশী হন । তিনি সোত্সাহে আর হু বাজার কৌশল আয়ত্ত করার চেষ্টা করেন , শীঘ্রই তার বাজানোর মান বাবাকে ছাড়িয়ে যায় ।

    কাও চি ফোংয়ের বয়স যখন ১৩ বছর , অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র শেখার জন্য তার বাবা তাকে এক স্থানীয় লোক-সংগীত দলে পাঠালেন । সেখানে তিনি অধ্যবসায়ের সঙ্গে সংগীত শেখেন । মাত্র এক বছর সময় তিনি সোনা , শেন ও কুয়ান চি ইত্যাদি লোক-সংগীতের বাদ্যযন্ত্র দিয়ে নানা ধরনের সুর বাজাতে শেখেন । ১৬ বছর বয়সে কাও চি ফোং নিজের বাদ্যদল প্রতিষ্ঠা করেন এবং গ্রামে গ্রামে পরিবেশন করতে যান । তার বাদ্যদল গ্রামবাসীদের সমাদর পায় । বাদ্যদল থেকে তার কিছু আয়ও হয় । তিনি এই টাকা দিয়ে বাবা- মার জন্য একটি নতুন বাড়ী তৈরী করেন , তার দুই বড় ভাইয়ের বিয়েতে আর ছোট বোনের পড়াশুনায় তিনি আর্থিক সাহায্য দেন ।

    বাদ্যদল প্রতিষ্ঠার জন্য তার পরিবারের আর্থিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে , গ্রামের অনেকে প্রশংসার চোখে কাও চি ফোংকে দেখেন। কিন্তু তিনি যখন শুনেছেন যে সান সি প্রদেশের রাজধানী থাই ইউয়ান শহরে একটি অন্ধদের স্কুল আছে , তখন তিনি কোনো দ্বিধা না করে তার বাদ্যদল বন্ধ করে দিলেন । সংগীত ক্ষেত্রে আরো বেশী জ্ঞান অর্জনেরস্বপ্ন নিয়ে কাও চি ফোং থাই ইউয়ান গেলেন । তিনি বলেছেন , আমার মনে একটি প্রত্যয় আছে , আমি একটা বড় কাজ করবো , আমি গ্রামাঞ্চলে জীবনের জন্য ছুটাছুটি করতে চাই না । আমি একজন বড় সংগীতবিদ হতে চাই । গ্রামে থাকাকালে আমার মন ভালো ছিলো না , মনের দুঃখ প্রকাশের জন্য আমি নদী তীরে গড়াগড়ি দিতাম অথবা পাহাড়ী অঞ্চলে চিত্কার করতাম ।

    ১৯৯২ সালে ১৮ বছর বয়সের কাও চি ফোং বাবা-মার অজান্তে আর হু সঙ্গে নিয়ে থাই ইউয়ানে যান এবং সেখানকার অন্ধ স্কুলের একজন ছাত্র হলেন । প্রতি রবিবার কাও চি ফোং তার আর হু নিয়ে রাস্তায় অথবা রেল স্টেশনে গান করতে যান । তার বাজানো চমত্কার আর হুর সুর আর দুঃখময় সুরেলা কন্ঠ প্রচুর দর্শকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে । তিনি গান গাওয়ার মাধ্যমে স্কুলে খাওয়ার খরচ জোগাড় করতেন । এই স্কুলের প্রধান সুন চিন ইয়েন কাও চি ফোংকে খুব আদর করতেন। তিনি কাও চি ফোংয়ের সহজাত সংগীত দক্ষতা আবিষ্কার করেন , তাকে গানের কথা লেখা আর গানে সুর দিতে উত্সাহ দেন । কাও চি ফোং স্কুল প্রধান সুন চিং ইয়েনকে ভালোবাসেন এবং তাকে হেডমাষ্টার মা ডাকেন । ১৯৯৪ সালে কাও চি ফোংয়ের রচিত গান ' আকাশের সব তারা তোমার ' ও ' আকাংখা ' চীনের সংগীত প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পায় ।

    বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সুযোগ পাওয়া আর সংগীত দিয়ে নিজের ভাবাবেগ প্রকাশ করা কাও চি ফোংয়ের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন। অন্ধ স্কুল থেকে স্নাতক হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার জন্য কাও চি ফোং রাস্তায় গান করেন ও বাজনা বাজান । বার বার চেষ্টার পর ২০০০ সালে ২৬ বছর বয়সে কাও চি ফোং পরীক্ষার মাধ্যমে পেইচিংয়ের চীনা অপেরা ইন্সটিটিউটের সংগীত বিভাগে ভর্তি হন । একজন অন্ধ হিসেবে কাও চি ফোং তার চার বছর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন । প্রতি দিন খাওয়া ও ঘুমানো ছাড়া তিনি তার সব সময় পড়াশুনায় ব্যয় করেন । ক্লাসের সময় অন্ধদের ভাষায় নোট করা সম্ভব নয় । তাই তিনি ক্লাসের সময় মনোযোগ সহকারে শুনেন এবং মনে রাখার চেষ্টা করেন । ক্লাসের পর তিনি অন্ধ ভাষার টাইপ-রাইটার দিয়ে লিখে নেন । আরো বড় অসুবিধা হলো তিনি সুর দেওয়ার সময় ব্যবহার করা স্বরলিপি কোনো দিন দেখেন নি বলে বুঝতে পারেন না । এই অসুবিধা অতিক্রম করার জন্য তিনি প্রথমে সহপাঠীর ব্যাখ্যা শোনেন , তার পর অন্ধদের ভাষা দিয়ে সুর দেন ,তার পর তার দেয়া সুর সহপাঠীকে শোনান , তার সহপাঠী আবার স্বরলিপি দিয়ে লিখে নেন ।

     নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য কাও চি ফোং অবসর সময় পিয়ানো মেরামত ও সুর ঠিক করার কৌশল শেখেন । তিনি প্রায়ই ইন্টটিটিউটের পিয়ানো ঘরে রাত কাটাতেন । তিনি সেখানে পিয়ানো খোলেন আবার সংযোজন করেন , ঘুম পেলে জানালায় কিছুক্ষণ ঘুমান । পিয়ানোর সুর ঠিক করার কৌশল আয়ও করতে সাধারণতঃ তিন বছর সময় প্রয়োজন । কিন্তু কাও চি ফোং এক বছর সময়ই তা' আয়ও করেছেন । কাও চি ফোং বলেছেন , তার পক্ষে দিন ও রাতের বড় তফাত নেই , চার বছরের পড়াশুনার সময় অত্যন্ত মূল্যবান , আমি এক সেকেন্ডও নষ্ট করতে চাই না । তিনি বলেছেন , পিয়ানোর সুর ঠিক করার কৌশল আয়ত করার পর আমি সহপাঠীদের জন্য কিছু করতে পারি । আমার সংগীতবিদ হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে না , তাই বেশী দক্ষতা আয়ও করা অত্যন্ত প্রয়োজন।

    ২০০৪ সালে কাও চি ফোং ইন্সটিটিউট থেকে স্নাতক হন । তার রচিত সংগীতের একটি আসরে তিনি গান ও বাজনার মাধ্যমে তার সৃষ্ট অনেক সুর ও গান পরিবেশন করেছেন । তার চমত্কার পরিবেশনা থেকে প্রকাশিত জীবনের প্রতি ভালোবাসা ও ভবিষ্যতের আকাঙক্ষা উপস্থিত সকলকে মুগ্ধ করে । এখনও কাও চি ফোং চাকরী পান নি , তবে তিনি নিজের সংগীত কার্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ।