থিয়ান জিন উত্তর চীনের একটি বন্দর নগরী । চীনের ইতিহাসে থিয়ান জিন ছিল চীনের অন্যতম সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র । থিয়ান জিনের দ্বার ক্রমাগত উন্মুক্ত হওয়ায় এই শহরে কর্মরত ও অধ্যয়নরত বিদেশীদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে ।
মি: কামেরোন ও তাঁর স্ত্রী সেলি দু বছর আগে ক্যানাডা থেকে তিয়ান জিন শহরে এসে পিনহাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ইংরাজী পড়াতে শুরু করেন ।চীনে আসার আগে নতুন সাংসকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে নিজদের খাপ খাওয়াতে পারবেন কিনা ,তা নিয়ে তাঁদের মনে সন্দেহ জেগেছিল । মি: কামেরোন আনন্দের সঙ্গে সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , থিয়ান জিনে এসে তিনি টের পেয়েছেন যে , এখানকার কাজকর্ম ও জীবন যাপনের পরিবেশ এত ভালো যে , তা একেবারে তাঁদের কল্পনাতীত । এখানকার সুপার মার্কেট, রেঁস্তোরা, বার, স্কুল ও আধুনিক হাসপাতাল দেখে মনে হয় , তাঁদের জন্মস্থান অটোয়ার সঙ্গে থিয়ান জিনের অনেক মিল আছে ।
তিনি বলেছেন : যেটা নিয়ে আমরা অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছি তা হলো ,এখানে আসার প্রথম দিনের ভোর বেলায় বাইরে পায়চারী করতে গিয়ে দেখতে পেলাম , আমাদের বাসার অদূরে ঘন সবুজ ঘাস আর বৃক্ষশোভিত একটি বড় পার্কে অনেক নাগরিক ব্যায়াম করছেন , সেই দৃশ্য আমার বড় ভালোলাগে ।
তিয়ানজিনে মি: কামেরোন ও মিসেস সেলির জীবন বৈচিত্র্যপূর্ণ । কাজ শেষ হলে কখনো কখনো তাঁরা পল্লব-ঘন বৃক্ষসারির নীচে পায়চারী করেন , কখনো কখনো ব্যয়ামাগারে ব্যায়াম করেন অথবা বারে গিয়ে কফি খান । তবে রেঁস্তোরায় থিয়ান জিনের স্থানীয় খাবার খেতে তাঁদের সবচেয়ে ভালোলাগে । টাটকা সামুদ্রিক মাছ দিয়ে চীনা রন্ধনশৈলীতে যেলোভনীয় খাবার তৈরী হয় তা দেখামাত্রই খেতে ইচ্ছা করে।
মি: কামেরোন গীটার , বাঁশি ও হার্মোনিকা বাজাতে পারেন মাঝে মাঝে বাজালে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর স্ত্রী গান গান । তখন তাঁদের পরিবার আনন্দঘন পরিবেশে মুখরিত হয়ে উঠে ।
মার্কিনী মিকাল জি লাইডনের বয়স ৫০ বছর । পৃথিবীর নানা দেশের ডাক টিকিট সংগ্রহ তাঁর শখ । দশ বছর আগে তিনি হাওয়াইয়ে চীনা ছাত্রী সু জং ইয়ুর সঙ্গে পরিচিত হন । অনতিকাল পর তাঁদের বিয়ে হয় । ১৯৯১ সালে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে স্ত্রীর জন্মস্থান থিয়ান জিনে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন । । গত কয়েক বছরে থিয়ান জিনের ডাক সার্ভিস বিষয়ক দশ হাজারেরও বেশী দ্রব্য সংগ্রহ করতে করতে থিয়ান জিনের ইতিহাস ও সংস্কৃতির উপরেও তাঁর কৌতুহল জন্মেছে ।
তিনি বলেছেন,ডাক সার্ভিসের ইতিহাসে মানুষের বিচিত্র জীবনকাহিনী পুঞ্জীভূত । একটি খামের ভিতরের চিঠি পড়ে একটি সমসাময়িক ঘটনা জানা যায় । থিয়ান জিনের ডাক সার্ভিসের ইতিহাস গবেষনা করে আমি থিয়ান জিনের অনেক কিছু জানতে পেরেছি । প্রচুর তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি উপলব্ধী করেছি যে, চীনের ইতিহাসে ও কূটনীতির ক্ষেত্রে তিয়ান জিনের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
২০০১ সালে ছ' শতাধিক মুল্যবান ডাক টিকেট , খাম , পোষ্টকার্ড , পোষ্টমার্কের ছবি সম্বলিত মিকাল জি লাইডনের লেখা একটি বই প্রকাশিত হয়েছে । এই বই চীন, মার্কিন যাক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড সহ অনেক দেশের প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছে এবং একাধিকবার পুরস্কার পেয়েছে । গত বছরে থিয়ান জিনের ৬০০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি ডাক সার্ভিসের উপরে তাঁর লেখা দ্বিতীয় বই থিয়ান জিনের নামে উত্সর্গ করেছেন । তিনি সোত্সাহে সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , চীনের প্রথম ডাক সার্ভিস জাদুঘরের নির্মান কাজ শীঘ্রই থিয়ানজিনে শুরু হবে ।
এবার থিয়ান জিনে বসবাসকারী নিউইয়র্কের মেয়ে উইলসনের কথা বলা যাক ।
বিশ বছর বয়সী উইলসন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়ে চীনে ভ্রমণ করেছিলেন । চীনের মহিমাময় মহাপ্রাচীর ও বিশাল রাজপ্রাসাদ তাঁর মনে গভীরভাবে দাগ কেটেছে । এরপর চীনের উপরে নিবদ্ধ রয়েছে তাঁর কৌতুহলী দৃষ্টি । দু বছর আগে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওথেরাপি বিভাগ থেকে স্নাতক হওয়ার পর চীনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের আমন্ত্রণে থিয়ান জিনের শিশু কল্যান কেন্দ্রে কাজ করতে আসেন । তিনি গভীর ভালোবাসায় অনাথ প্রতিবন্ধী শিশুদের যত্ন নেন । সঠিকভাবে শিশুদের রোগ নির্ণয়ের পর তিনি তাদের রোগ নিরাময়ের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন ।
তিনি বলেছেন এই শিশু কল্যান কেন্দ্রের কোনোকোন ছেলেমেয়ের ব্যাধি আমার জানা ছিল না । চিকিত্সা করাতে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাই আমি । মাঝে মাঝে তাদের জন্য দোকানে গিয়ে জিনিষপত্রও কিনতে হয় । আনন্দের সঙ্গে তাদের সঙ্গে যে দিন কাটাচ্ছি তা আমার জীবন- বৃত্তান্তে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে ।
যত বেশী দিন কেটে যায় থিয়ান জিন আর শিশু কল্যান কেন্দ্রের ছেলেমেয়েদের প্রতি উইলসেন ভালোবাসা ততই গভীর হচ্ছে । তিনি বলেছেন , তাঁর সুখদুংখ আবর্তিত হয়েছে শিশু কল্যান কেন্দ্রের ছেলেমেয়েদের ঘিরে।
থিয়ান জিন শিশু কল্যান কেন্দ্রের ছেলেমেয়েরা সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিযেছে:তারাও বিদেশী আন্টি উইলসেনকে ভালোবাসে । কারণ , তিনি খুবই সুন্দর , তিনি তাদের খেলা ও নাচ শিখিয়েছেন ।উইলসেনের সহকর্মী মাদাম জাং ছিন তাঁর প্রশংসা করে বলেছেন :এই সুন্দর বিদেশী তরুণী এখানকার পরিবেশের সঙ্গে নিজকে খাপ খাওয়াতে পারবেন ? প্রথম দিকে আমাদের সন্দেহ ছিল , কিন্তু প্রায় দু বছর কেটে যাওয়ার পর ,আমি মনে করি , জীবন যাপন ও কাজকর্ম উভয় দিক থেকে তিনি সফল হয়েছেন ।
মিস উইলসেন শুধু যে চীনা খাবার খেতে পছন্দ করেন তা নয় ,নিজে রান্নাও করেন এবং তাঁর তৈরী খাবার খেতে তাঁর বন্ধুবান্ধবদের আমন্ত্রণ জানান । তিনি নিয়মিত চীনা শিক্ষকের বাড়িতে গিয়ে চীনা ভাষা শিখেন । প্রতি সপ্তাহে অধদিন করে শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের শিক্ষকশিক্ষিকাদের ইংরাজীও পড়ান ।থিয়ান জিনে তাঁর জীবন যেমন আনন্দপূর্ণ তেমনই তাত্পর্যবহ ।
|