চীনে এখন যে ছিংহাই-তিব্বত রেল পথ নির্মাণ করা হচ্ছে , তা চলতি বছরের শেষার্ধে লাসায় সম্প্রসারিত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে । পৃথিবীতে সমুদ্র সমতলে থেকে সবচেয়ে শীর্ষের এ রেলপথ প্রকল্প তিব্বতের জন্য যে কত কল্যান বয়ে আনবে , সে সম্বন্ধে বলতে গিয়ে অবশ্যই তিব্বতের পরিবেশ সুরক্ষার কথা বলতে হবে ।
জুন মাসের শেষ দিকে ছিংহাই- তিব্বত রেলপথ লাসা শহরের ৮০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ইয়াংপাচিং রেল স্টেশনে বসানো হয়েছে । নির্মাণস্থলে সংবাদদাতা দেখলেন , রেলপথের বসানো প্রকল্প ধীরে ধীরে লাসার দিকে প্রসারিত হচ্ছে। নির্মাণস্থল আর শ্রমিকদের আবাসিক এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছিলো । রেলপথের এই অংশ বসানো বিষয়ক চীনের রেল কোম্পানির ছিংহাই-তিব্বত প্রকল্পের একজন উপ প্রধান ম্যানেজার লিয়াও তে চ্যুন বলেছেন , যেখানে রেলপথ নির্মাণ করা হবে , সেখানে পরিবেশ সুরক্ষার কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে , যাতে বেশি ভূমি আর গাছপালা নষ্ট না হয় । তা ছাড়া নির্মাণস্থলের জঞ্জালও সুষ্ঠুভাবে সরিয়ে নেয়া হয় ।
ফু ছিয়াং নামে একজন বিদ্যুত্ মিস্ত্রি সংবাদদাতাকে বলেছেন ,
নির্মাণস্থলে শ্রমিকদের অস্থায়ী থাকার জায়গা নির্মাণ করা হয়েছে । প্রতিটি ঘরের জানালার বাইরে একটি প্লাস্টিক ব্যাগ টাঙ্গানো রয়েছে । নিত্য জীবনযাপনে যে সব জঞ্জাল সৃষ্টি হয় , সে সব জঞ্জাল প্ল্যাস্টিক ব্যাগে রাখা হয় । শেষের দিকে নির্মাণস্থলের যাবতীয় জঞ্জাল একটি ছোট আকারের বর্জ্য পোড়ানোর স্থানে পাঠানো হয় । ওখানে সে সব জঞ্জাল পোড়ানো হয় ।
ফু ছিয়াং বলেছেন , তিব্বত একটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অঞ্চল । তাকে দূষিত করা উচিত নয় । তাদের কোম্পানি বর্জ্য সরানোর জন্য খুব কড়াকড়ি ব্যবস্থা নেয় , তা যেখানে সেখানে ফেলা হয় না , শ্রমিকরা যখন চলে যান , তখন তা বর্জ্য ফেলার স্থানে পাঠান । নির্মানস্থলে পানীয় আর ফল খাওয়ার জন্য যে বর্জ্য সৃষ্টি হয় , তা সব কিছু ব্যাগে রেখে বিশেষ একটি স্থানে ফেলা হয় ।
তিব্বতে ছিংহাই-তিব্বত রেলপথের মতো বুনিয়াদি ব্যবস্থার আরো বেশী বিরাটাকারের প্রকল্প নির্মাণ করা হচ্ছে । যেমন নির্মিয়মান লিন চি বিমান বন্দর ইত্যাদি । তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরোর প্রধান চাং ইয়োন জে সংবাদদাতাকে বলেছেন ,
স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সরকার বরাবরই অর্থনৈতিক নির্মাণকাজ আর পরিবেশ সুরক্ষার সমন্বিত উন্নয়নে অটল থাকে । অর্থনৈতিক উন্নয়ন আর পরিবেশ সুরক্ষার ব্যাপারে সর্বপ্রথমে পরিবেশ আর উন্নয়নের সমন্বিত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । সকল নির্মাণ প্রকল্প চালানোর জন্য কড়াকড়িভাবে পরিবেশ সুরক্ষার ব্যবস্থা কার্যকরী করতে হবে ।
চাং ইয়োন জে বলেছেন , এই ব্যবস্থা চালু হওয়ায় তিব্বতে দূষণযুক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ রোধ করা হয়েছে । তা ছাড়া তারা নির্মীয়মাণ প্রধান প্রধান নির্মাণ প্রকল্পের ওপরও পরিবেশের তত্ত্বাবধান চালাচ্ছেন এবং যে সব প্রকল্পের নির্মাণ কাজে পরিবেশের সমস্যা দেখা দিয়েছে , তারা সে সব প্রকল্পের উদ্দেশ্যে এই সমস্যা নিরসন করার নির্দেশ দেবে , যাতে নির্মাণকাজের জন্য সৃষ্ট প্রভাব সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যায় । তিনি বলেছেন , যেহেতু তিব্বতের পরিবেশ ভাল অবস্থায় সংরক্ষিত আছে , সেহেতু কোনো নির্মাণ প্রকল্প চালু হবার জন্য যে কি কি দূষণমুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে , সে সম্বন্ধে সংশ্লিষ্ট বিভাগের যাচাই গ্রহণ করা দরকার । সরকার ২০০৩ সাল থেকে ৬৫টি সোনা খনির শদ্যে ৩৪টি বন্ধ করে দিয়েছে । বাকী ২১টি আগামী ৩ বছরের মধ্যে পুরোপুরি বন্ধ করা হবে ।
পর্যটন শিল্প তিব্বতের অন্যতম প্রধান শিল্প । ওখানে চুমালংমা পর্বতশৃংগ , ইয়ালুজাংপু নদীর গিরিখাত ইত্যাদি অদ্বিতীয় দর্শনীয় স্থান আছে । চাং ইয়োন জে বলেছেন , তিব্বতে পর্যটকদের সংখ্যা অধিক থেকে অধিকতর হয়ে উঠার সংগে সংগে পর্যটন মহলের ব্যক্তিরা এই সত্যতা লক্ষ্য করেছেন যে , পরিবেশ সুরক্ষা তিব্বতের পর্যটন শিল্পের ভিত্তি এবং তা তিব্বতের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে নিশ্চিত করবে । সুতরাং তিব্বতের পরিবেশ সুরক্ষা ব্যুরো আর পর্যটন ব্যুরো প্রতি বছর প্রধান প্রধান দর্শনীয় স্থলের পরিবেশ সুরক্ষার কর্মকান্ড পরিদর্শন করে থাকে ।
প্রধান প্রধান দর্শনীয় স্থলে পরিবেশের বর্তমান অবস্থা কি হয়েছে আর সেখানে কত পর্যটক গ্রহণ করা যায় , সে সম্বন্ধে আমরা একটি কার্যকলাপ প্রণয়ন করেছি । পরিবেশ সংরক্ষণ করার জন্য -পর্যটক যত বেশি , তত ভাল-এমন নীতি কাম্য নয় । পর্যটকদের সংখ্যা সীমিত রাখার মাধ্যমে দর্শনীয় স্থলের পরিবেশ আরো ভালভাবে সংরক্ষণ করা যাবে ।
চাং ইয়োন জে বলেছেন , চুমালংমা পর্বতশৃঙ্গ বিশ্বের একটি প্রসিদ্ধ দর্শনীয় স্থান। তিনি মনে করেন যে , আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এই দর্শনীয় স্থানের সুরক্ষা করা এবং কড়াকড়িভাবে এই অঞ্চলে বৈজ্ঞানিক পরিদর্শন আর পর্বতরোহন সীমিত রাখা দরকার ।
তিব্বতের ইয়ালুজাংপু নদীর দুই তীর দারুণ মরুকরণের দরুণ বিশ্ববিশ্রুত ছিলো । আগে প্রতি বছরের শীতকাল আর বসন্তকালে জাংপু নদীর দুই তীরে ভীষণ বালিঝড়ের প্রাদুর্ভাব হতো । তিব্বতের শাননান অঞ্চলের বন শিল্প ব্যুরোর প্রধান সুলাংতুজে সংবাদদাতাকে বলেছেন , শাননান অঞ্চলের জে টাং থানা থেকে কুংগা বিমানবন্দর পর্যন্ত যদিও মাত্র চল্লিশ পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরত্ব, তবে আগে সড়কপথ বালিতে আবৃত হতো । বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য সাধারণতঃ এক দিন সময় লাগতো । বালিতে গাড়ি অচল হয়ে পড়লে বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য এক দিনেরও বেশি সময় লাগতো ।
গত কয়েক বছরে জাংপু নদীর দুই তীরে মোট ৪০ হাজার হেক্টর বনাঞ্চল সৃষ্টি করা হয়েছে ।ফলে নদীর অববাহিকায় আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে । এখন বায়ুমন্ডলের আর্দ্রতা অনেক বেড়েছে ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী , এ পর্যন্ত ৪ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল রাষ্ট্র , প্রদেশ আর জেলা এই তিন পর্যায়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষা অঞ্চলের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে । এটা তিব্বতের আয়তনের এক তৃতীয়াংশের সমান ।
|