v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-09-15 14:12:10    
ডালির প্রাকৃতিক দৃশ্য

cri
    প্রিয় শ্রোতা বন্ধুরা, চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের ইয়ুন্নান প্রদেশের ডালি বাই সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত স্বায়তশাসিত বিভাগ এমন একটি জায়গা যাখানের প্রাকৃতিক দৃশ্য অত্যন্ত সুন্দর, স্থানীয় রীতিনীতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ আর বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।দীর্ঘকাল ধরে, বাই সংখ্যালঘু জাতির বসবাস এই জায়গায় প্রত্যেক বছর বিপুল সংখ্যক দেশী-বিদেশি পযর্টক বেড়াতে আসেন ।আজকের চলো না ঘুরে আসি নামক বিশেষ অনুষ্ঠানে আপনাদের তালির বৈচিত্র্যময় রীতিনীতি নিয়ে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতার লেখা একটি রেকডিংভিতিক রিপোট, উপস্থাপন করছেন আপনাদের বন্ধু চিয়াং চিন ছেং।

    ডালি বাই সংখ্যালঘু জাতি স্বায়তশাসিত বিভাগ চীনের উয়ুন্নান প্রদেশের রাজধানী খুয়েনমিনের পশ্চিমাংশে অবস্থিত।প্রায় ত্রিশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এই ভূমিতে বাস করে বাই, হ্যান, লি আর উয়েই প্রভৃতি ১৩টি জাতি।সেখানে বসবাসরত বিভিন্ন জাতি পরষ্পরকে সম্মান করে এবং সহাবস্থানে থাকে।সেখানে আছে সারা বছর তুষার-ঢাকা সুমহান পর্বত , আয়নার মতো স্বচ্ছ আর বিশাল এ্যাহাই সাগর , আছে ভালোবাসার রুপকথায় পরিপূর্ণ প্রজাপতি ঝরনা, আরো আছে দেশ-বিদেশ বিখ্যাত ডালির প্রাচীন নগর।এ সব বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সাংস্কৃতিক আকর্ষণ আর প্রাকৃতিক দৃশ্যে তালির অনন্য স্বরুপ প্রকাশ পেয়েছে।লোকেরা তালির যে কোনো একটি বিস্তীর্ণ জায়গায় দাঁড়ালে বিখ্যাত ছানপাহাড় সহজেই নজরে পড়ে।এই সুমহান পাহাড় যেন অনেক দু:খ-কষ্ট-ভূগী বৃদ্ধের মতো তালি শহরের পরিবর্তনের নীরব সাক্ষী ।ছান পাহাড়ের পাদদেশে স্বচ্ছ এ্যাহাই সাগর ।এ্যাহাই সাগর শুধু যে তালির জন্য টাটকা আর আর্দ্র আবহাওয়া বয়ে এনেছে তাই নয়, ছান পাহাড়ের সংগে একত্রে তালির সুন্দর দৃশ্যও তৈরী করেছে।যারা তালিতে ভ্রমণ করতে আসেন, তারা সাধারণত জাহাজে চড়ে এ্যাহাই সাগর পরির্দশন করেন এবং সংগে সংগে ছান পাহাড়ের অদ্বিতীয় সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করেন।এ্যাহাই সাগরের দৃশ্য খুবই মনোরম ,যাকে মালভূমির মনি বলে আখ্যায়িত করা হয়।এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য , এ্যাহাই সাগর আসল সাগর নয়।এটা হলো ইয়ুন্নান প্রদেশের দ্বিতীয় বড় হ্রদ।ইয়ুন্নান প্রদেশের চারদিকে কোনো সাগর নেই।তবে সেখানকার লোকেরা সমুদ্র ভালোবাসে।সুতরাং তারা সাধারনত: হ্রদকে সমুদ্র বলে ডাকেন। এ্যাহাই সাগর মালভুমির হ্রদ হলেও তার আয়তন ২৪০ বর্গ কিলোমিটারের বেশী।পর্বতমালা বেষ্টিত মালভূমি এলাকায় এটাকে একটি বিশাল সমুদ্র বলে মনে করা যায়।জাহাজ থেকে অনের দূর পর্যন্ত এ্যাহাই সাগরের দৃশ্য দেখা যায়।হ্রদের নীল পানি রোদ্রে চকচক করে।প্রত্যেক বছরে বিরতিহীন পর্য্টকদের ভীড় দেখা যায়।তা সত্বেও হ্রদের পানি স্বচ্ছ রয়েছে, দূষিত হয়নি।এটা তালির স্থানীয় সরকারের উন্নয়নের সুফল।কারণ পর্য্টন সম্পদ উন্নয়নের সংগে সংগে স্থানীয় সরকার প্রাকৃতিক পরিবেশের কার্যকর সংরক্ষা ব্যবস্থা নিয়েছে।সংবাদদাতাকে দেয়া একটি সাক্ষাতকারে তালির পর্যটন ব্যুরোর পরিচালক হো ই জেন বলেছেন, গত দু বছর ডালি সরকার পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ফলপ্রসু কাজ চালিয়েছে।

    এ্যাহাই সাগর যাতে দূষিত না হয়, সেই জন্য তালি সরকার হ্রৃদে চলমান জাহাজের সংখ্যা কড়াকড়িভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে।এ্যাহাই সাগরে পর্যটন জাহাজের মোট সংখ্যা ৫টি মধ্যে সীমাবদ্ধ করা হয়।এ্যাহাই সাগরে চলাচলকারী বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে রাষ্ট্রীয় নির্গতকরণের মানদন্ড থাকতে হবে, অর্থাত দূষণমূক্ত হওয়া উচিত।এ্যাহাই সাগরের পরিবেশের অনিষ্ট সাধনকারী সংরক্ষণ মাছ-ধরা জাহাজগুলোর জন্য স্থানীয় সরকার মাছ ধরার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছে।মানে বছরে এ সব জাহাজ শুধু সরকারের নির্ধারিত সময়ে এ্যাহাই সাগরে মাছ ধরতে পারে।তা ছাড়া মাছ ধরার কোনো কোনো হতিয়ারের ব্যবহার নিষিদ্ধও করা হয়।এ্যাহাই সাগরে জাহাজে চড়ে পর্যটকরা যেমন এ্যাহাই সাগরের সুন্দর দৃশ্য দেখতে পারেন, তেমনি অতিথিপরায়ন বাই জাতির মেয়েদের তিন রাওন্ড চা নামক নাচ উপভোগ করতে পারেন।পর্যটকরা এই নাচ দেখতে দেখতে ডালির সমৃদ্ধ স্থানীয় রীতিনীতি আর সংস্কৃতি উপলদ্ধি করেছেন।

    শ্রোতা বন্ধুরা, আপনারা যে সংগীত শুনছেন তা হচ্ছে বাই জাতির মেয়েদের পরিবেশিত অনুষ্ঠানের রেকডিং। বাই জাতির এই তিনটি রাওন্ড চা হলো, তিক্ত চা, মিষ্টি চা এবং সুস্বাদু চা।বাই জাতির এক জন মেয়ে পর্যটকদের জন্য এ তিন রাওন্ড চার ইতিহাস বর্ণনা করেছেন।তিনি বলেছেন, এক হাজার বছর আগে অথার্ত চীনের ঠার রাজবংশের আমলে তালি অঞ্চলের তখনকার সর্বোচ্চ কর্তা নানচাও সম্রাট যখন তার প্রাসাদে অতিথিদের সম্মানে ভোজসভা আয়োজন করেন তখন এ তিন রাওন্ড চা পরিবেশন করা হয়।পরে এই ধরনের চা তৈরীর পদ্ধতি জনসাধারনের মধ্যে প্রচলিত হয়।আস্তে আস্তে এটা বাই জাতির একটি বিশিষ্ট চায়ের পরিবশনে পরিণত হয়েছে।এই তিন রাওন্ড চা উপভোগ করার পাশাপাশি পর্যটকরা যদি এ্যাহাই সাগর থেকে উতর দিকে তাকান, তাহলে ডালির আরেকটি বিখ্যাত দর্শনীয়স্থান ----ছনসেন মন্দিরের তিনটি টাওয়ার তাদের চোখে পড়বে।এ তিনটি টাওয়ার তিনটি বড় কলমের মতো প্রাচীন নগর---তালিকে আরো সুন্দরভাবে সাজিয়ে দিয়েছে এবং এ্যাহাই সাগরের দর্শনীয়স্হানগুলোর জন্য শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে।ছনসেন মন্দিরের তিনটি টাওয়া উয়ুন্নান প্রদেশের সংরক্ষিত সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপত্য। এ তিনটি টাওয়ার হলো ইটের তৈরী স্থাপত্য।এ তিনটি টাওয়ায়ের মধ্যে একটি প্রধান টাওয়ার আছে।তার নাম হলো ছিয়েশিন টাওয়ার।এক হাজার বছরেরও বেশী সময় আগে অথার্ত চীনের ঠান রাশবংশের মাঝামাঝি সময়ে এই প্রধান টাওয়া প্রতিষ্ঠিত হয়।১৬ তলার এই টাওয়ায়ের উচ্চতা ৬৯ মিটারের কাছাকাছি।এই প্রধান টাওয়ারের দু পাশে দুটো ছোট টাওয়ার। এ দুটি টাওয়ার দেখতে একই রকমের।দুটি ছোট টাওয়ারের দৈঘ্য ৪২ মিটার।প্রধান টাওয়ার ছিয়েশিন টাওয়ারের পরে এ দুটো টাওয়ার প্রতিষ্ঠিত হয়।টাওয়ারের স্থাপত্য শৈলী একদম প্রাচীনকালের ।

    শ্রোতা বন্ধুরা, আপনারা ছেসেন পাহাড় ও এ্যাহাই সাগর এবং ছনসেন মন্দিরের তিনটি টাওয়া দেখেছেন, তা ছাড়া আপনারা ওখানকার বিশিষ্ট চাও উপভোগ করেছেন। এ সব আপনাদের কেমন লেগেছে? হয়তো এই শহরের ইতিহাস সম্বন্ধে আপনাদের কৌতূহল ইতিমধ্যে বেড়েছে।এই শহরের ইতিহাস জানতে চাইলে ডালির পুরানো নগরে যেতে হয়। ডালির পুরানো নগর ইয়ুন্নান প্রদেশের সবচেয়ে প্রাচীন নগরগুলোর অন্যতম।এখন পর্যন্ত তালির পুরানো নগরে শত শত বছর আগের মৌলিক কাঠামো সংরক্ষিত রয়েছে।নগরের সড়কগুলো পরিষ্কার-পরিছন্ন।যেখানে-সেখানে প্রাচীন শৈলীর স্থাপত্যগুলো দেখা যায়।পরিবেশ অন্ত্যত মনোরম।পুরানো নগরের ছোট-বড় দোকানগুলোতে মাবেলের তৈরী জিনিস প্রভৃতি নানা ধরনের ঐতিহ্যিক শিল্পকর্ম পাওয়া যায়। এ সব দোকানে ঢুকলে দেখার জিনিষের শেষ নেই। প্রাচীন ও সরল পুরানো তালি নগর জনসাধারনের জন্য আরো বেশী শান্তি বয়ে এনেছে।তবে তালির পুরানো নগরের আধুনিক দিকও আছে।এই পুরানো নগরে বিদেশীদের জন্য একটি সড়ক আছে।সেই সড়কে নানা ধরনের ঐতিহ্যিক শিল্পকর্মের দোকান ছাড়াও, নানা শৈলির পাশ্চাত্য রেস্টোরা , কফি এবং চা আছে।বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এখানে সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতে আসেন।তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখানে স্থায়ীভাবে সময়ের জন্য থাকেন।এ বিশেষ সড়কের এই কফি দোকানের সামনে ক্যানাডার পর্যটক মিস লাওলেনডের সংগে সংবাদদাতার দেখা হল। তিনি আরামে কাঠের চেয়ারে বসে বই পড়ছিলেন, সংগে সংগে তিনি সংগীত শুনছিলেন।তিনি সংবাদদাতাকে বললেন, ইয়ুন্নার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন খাবার , সংস্কৃতি আর রীতিনীতি তাকে আটকে রেখেছে।

    আমার মনে যা গভীর ছাপ রেখেছে ,তা হলো এখানকার আঞ্চলিক ভাষা।আমি কিছুটা শিথেছি।কারন ভাষার মাধ্যে আমি আরো ভালোভাবে এখানকার সংস্কৃতি উপলদ্ধি করতে পারি।আমি লক্ষ্য করেছি এখানকার মানুষ খুব অতিথিপরায়ণ।এখানকার দৃশ্য সুন্দর।আমার মনে হয় ইয়ুন্ননে ভ্রমণ করতে আসা অত্যন্ত সুবিধাজনক।এখানকার মানুষের সংগে যোগাযোগ করাও সহজ।

    শ্রোতা বন্ধুরা, আজকের চলো না ঘুরে আসি নামে বিশেষ অনুষ্ঠানে আমরা আপনাদের ইয়ুন্নানের প্রদেশের ডালি বাই সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে নিয়ে গিয়েছি।কিন্তু শুনে শুনে কি দেখার স্বাদ মেটে? যদি সময় সুযোগ হয়, একবার তালিতে বেড়াতে আসুন।নিশ্চয়ই ভালো লাগবো।আজকের আসরটি শোনার জন্য ধন্যবাদ।