v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-09-14 20:47:25    
সুদর্শন চীনা যুবক আর বোবা বিদেশিনীর প্রেমকাহিনী

cri
    চাংউই পেইচিংয়ে এক বিদেশী রাসায়নিক পন্য কোম্পানির এক জন ব্যবস্থাপক। কাজের জন্যে প্রায় পেইচিংয়ের বাইরে যান ।যখন তিনি কুয়াংচৌ কর্মরত ,তখন তার স্ত্রী টেলিফোনে তাকেবিয়ে বিচ্ছেদেরকথা বলেছেন। ক্ষোভে-দুঃখে সেই রাতে তিনি বারে গিয়ে মদ খেয়েছেন এবং নেশাগ্রস্তহয়েছেন ।নেশায় মদের গ্লাসটা ভেংগে যায় এবং তার হাতে রক্ত পড়েছে ।

    এসময়ে বারে বই পড়ছিলেন এক অষ্ট্রেলিয় মেয়ে ,তিনি শিগ্গিরই এসে নিজের রুমাল দিয়ে তার হাতের ক্ষত বেঁধে দিয়েছেন এবং কাগজে লিখেছেন ,আমি আপনাকে লক্ষ্য করেছিএবং অনুভব করেছি যে আপনার মন এখন ভাল নয় ।আপনাকে মন খুলে নিজের মনের কথা কাউকে বলা শিখতে হবে, নিজেকে পীড়া দেয়া নয় ।লিখিতভাবে সংলাপের মাধ্যমে স্বর্ণ-কেশী আর নীল নয়না বিদেশী মেয়েটি চাং উইকে জানিয়েছেন যে,তিনি অষ্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন , তার চীনা নাম চাং নিংচিং, বয়স ২৭ বছর , এখন পেইচিংয়ে এক কোম্পানিতে প্রধানহিসাব রক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন, কাজের জন্যে তিনি কর্মীদের সংগে কুয়াংচৌ এসেছেন ।ছ' বছর আগে এক আকস্মিক ঘটনায় তিনি বাক-শক্তি হারিয়েছেন ।

    চাংউইও পেইচিং থেকে এসেছেন জেনে অষ্ট্রেলীয়মেয়ে আনন্দের সংগে প্রচলিত এক চীনা কথা লিখেছেন , একই পল্লীর লোকের সাথে দেখা হলে চোখ দুটো জলে ভরে।কথাটা পড়ে চাংউই হেসে উঠেন ।কেন নিজেকে পীড়িত করেন চাং উইকে প্রশ্ন করা হলে চাং উই নিজের ক্ষোভ ও বেদনার কথা নিংচিংকে শুনিয়েছেন । নিংচিং তার কথা শুনে কাগজে লিখে বলেছেন যে , আপনার স্ত্রীর আচরন আপনার প্রতি অন্যায় ।আমি চীনা স্টাইলের বিবাহ বুঝি না বটে , কিন্তু আমি জানি বিবাহ মানে ভালোবেসেপরস্পরকে আনন্দ দেয়া , যদি দুপক্ষের আনন্দের সম্ভাবনা নেই তাহলে দুজনের যততাড়াতাড়ি সম্ভব ছাড়াছাড়ি হওয়া উচিত ।

    নিংচিংয়ের সততা ও আন্তরিকতা দুজনের মধ্যেকার ব্যবধান কমিয়ে দিয়েছে ।পেইচিং ফিরে আসার পর দুজনের কোম্পানি কাছাকাছি থাকে বলে অফিসের পর দুজন প্রায় এক সংগে কাছাকাছি বারে গিয়ে সময় কাটান ।নিংচিং মন খুলে নিজের সেই ভয়াবহ ঘটনা চাংউইকে জানিয়েছেন।ছ'বছর আগের একদিন রাতে যখন তিনি অফিস শেষ করে ভূগর্ভস্থপার্কিং স্থানে গিয়ে গাড়ীতে স্টার্ট দেবেন ঠিক এ সময়ে কিছু দুর্বৃত্ লোক তাকে জোর করে ধরে নিয়ে ধর্ষন করল । মুখে নংরা তোয়ালে চেপে ধরা ছিল বলে তিনি চিত্কার করতে পারেননি ।দুষ্টলোকেরা নিংচিংকে নির্জন জায়গায় ফেলে পালিয়ে গেল । দুদিন পর লোকেরা তাকে আবিস্কারকরলেন এবং তাকে হাস্পাতালে পাঠালেন , সে সময়ে নিংচিং বাক-শক্তি হারিয়ে ফেলেন । ডাঃ জানান , অতিরিক্ত ভয়ে এবং দীর্ঘ সময় ধরে কন্ঠনালী উত্তেজিত থাকার কারণে তিনি বাক-শক্তি হারান । অষ্ট্রেলিয়ার বহু বড় হাস্পাতালে নানা ধরনের চিকিত্সা নেয়ার পরও তার বাক-শক্তি ফিরে আসেনি । চীনে কাজ করার সুযোগে তিনি পেইচিংয়ের অনেক হাসপাতালেও গিয়েছেন , কিন্তু তার অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি ।

    সামনের এই সত্ ও সুন্দরী অষ্ট্রেলিয় মেয়ে নিজের মর্মান্তিক অতীতকাল থাকা সত্ত্বেও নিজের বেদনা লুকিয়ে রেখে আমাকে সান্ত্ত্বনা দেন এবং আমাকে পুনরায় জীবনের সম্মুখীন হতে তাগিদ দেন কথাটা ভেবে চাং উইর চোখ দুটো জলে ভরে ওঠে ।

    নিয়তির টানে চাং উই আর নিংচিং দুজন পরস্পরকে ভালবেসেছেন । কিন্তু তাদের প্রেম দুজনের অভিভাবকদের বিরোধিতার সম্মুখীন হয় ।নিংচিংয়ের বাবা একদা এক চীনা ব্যবসায়ীর কাছে ঠকে হয়েছিলেন বলে তিনি চীন সম্বন্ধে ভাল ধারনা পোষণ করেন না ।তিনি চাং উইকে জিজ্ঞেস করেছেন , আমার মেয়ের সংগে প্রেমালাপ করা টাকা ,না অষ্ট্রেলিয়ার গ্রীন কার্ড পাওয়ার জন্যে ?নিজের কন্যা কথা বলতে অক্ষম হলেও বাবা হিসেবে তিনি মেয়ে চাং উইর চেয়ে ভাল জীবনসংগী পাবে বলে আশা করেন ।

    চাং উই নিংচিংয়ের সংগে নিজের প্রেমের কথা বাবামাকে জানালে বাবামা বিস্মিত হন ।তারা বলেছেন , বিদেশী মেয়ের সংগে প্রেম করায় তাদের আপত্তি নেই , কিন্তু কেন একজন বিদেশী বোবা-মেয়ের সংগে ? পরবর্তীকালে তোমার জীবন সুখী হবে ?চাং উই দৃঢ কন্ঠে বাবামাকে জানান যে,আমার সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করার মহিলার তুলনায় যাকে আমি ভালবাসি এবং যিনি আমাকেও ভালবাসেন এমন এক বোবা মেয়ের সংগে জীবনযাপন করা অনেক ভাল হবে ।

    চাং উইর সংগে মেয়ের প্রেমে বাধা দেয়ার জন্যে নিংচিংয়ের বাবা পেইচিং এসেছেন এবং তার অনুরোধক্রমে তার বন্ধুরা চাংউই ও নিংচিংকে পেছনে থেকে অনুসরণ করেন ।বন্ধুদের পাঠানো খবরে তিনি জানতে পেরেছেন , চাংউই ও নিংচিং সত্যিই অকৃত্রিমভাবে পরস্পরকে ভালবাসেন ।অবশেষে নিংচিংয়ের বাবা মুগ্ধ হয়েছেন এ কারনে । নিংচিংয়ের সংগে যোগাযোগের সুবিধার জন্যে পেইচিংয়ের তুষার আবৃত শীত্কালে চাংউই সাইকেল চালিয়ে মুক-বধির স্কুল আর নিজের কোম্পানির মধ্যে আসা-যাওয়া করতেন , তিনি অবসর সময়ে জটিল ইঙগিতের ভাষা শিখেছেন ।

    চাংউইর জন্যে নিংচিং বিশেষভাবে চীনা তরকারী রানা করতে শিখেছেন এবং প্রত্যেক দিন তার জন্যে কয়েকটি সুস্বাদু তরকারী রানা করেন ।

    কিছু দিন পর কোম্পানী চাং উইকে বৃটেনে দু-মাস শিখতে পাঠায় । যাওয়ার আগে নিংচিংকে চাং উই বলেছেন, আমি ফিরে আসার পর আমরা বিয়ে করব কেমন? নিজে এখনো কথা বলতে অক্ষম বলে নিংচিং ইতস্তত করেছে ।

    চাংউই যাওয়ার পর প্রত্যেক দিন তারা দুজন ইমেল আর অন-লাইনে কথাবার্তা বলেন ।চাং উই বলেছেন , আমার জীবন অন্ধকারের অতলে হারিয়ে যাচ্ছিল, আর তুমি আমাকে উদ্ধার করেছো ,আমাকে উজ্জ্বলতম আলো এনে দিয়েছো ।তুমি সাংঘাতিক আঘাতের সম্মুখীন হয়েছিলে , সেই আঘাত তোমার জন্যে গভীরতম ব্যথা এনে দিয়েছে ।আমার সত্যিকারের ভালবাসা দিয়ে তোমার মনের ব্যথা মুছে ফেলতে পারবো বলে আমি আশা করি । ধর্মবিশ্বাসের দরুন বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পর্কে খ্রীষ্টান ধর্মের মর্মবস্তু আমি ভাল করে বুঝি না , কিন্তু আমি সেই অকৃত্রিমশপথ -বাক্য তোমার সামনে উচ্চারণ করতে চাই যে, রোগ থাকুক , কোনোদিনই তোমাকে পরিত্যাগ করব না ।

    চাংউই ফিরে আসার পর ঘর সাজানো দুজনের প্রথম প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । ঘর সাজানোর কাজ শেষ হওয়ার পর চাংউই নিংচিংকে আলিঙ্গন করে জিজ্ঞাসা করেন , যদি এখন তুমি কথা বলতে সক্ষম হও তাহলে প্রথম কথা তুমি কি বলবে ? আমি ভাবি কথাটা হবে আমি তোমাকে ভালবাসি ।নিংচিং মুখ খুলে উত্তর দিতে চেয়েছেন , কিন্তু আওয়াজ বের হল না ।চাংউই তার কপালে হাত রেখে হেসে হেসে বললেন , প্রিয়তমা, চিন্তা করো না , আমি বিশ্বাস করি যে , এমন একদিন আসবে যে দিন আমি তোমার কন্ঠস্বর শুনতে পাব । কারণ তুমি সবসময় আমাকে আমি তোমাকে ভালবাসি কথাটা বলতে চাও ,তাই না ? মাথা নাড়তে নাড়তে নিংচিংয়ের চোখ দুটো থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে ।

    যাতে নিংচিং পুনরায় কথা বলতে সক্ষম হয় তার জন্যে চাংউই তাকে চীনা ডাক্তারের কাছে নিয়েছেন , চার মাসের চিকিত্সার পর নিংচিংয়ের কন্ঠনালীদিয়ে কিছু আওয়াজ বেরুতে পারে ।

    নিংচিংয়ের কাহিনী শুনে ভাষার কাজে নিয়োজিত এক বিশেষজ্ঞ তাদের সামুদ্রিক জীবজন্তু পার্কে গিয়ে ডল্ফিনকেস্পর্শ করার প্রস্তাব দেন ।চাংউইর সমভিব্যহারে নিংচিং প্রত্যেক দিনসামুদ্রিক জীবজন্তু পার্কে গিয়ে ডল্ফিনের সংগে মেলামেশা করেন ।মেলামেশার সময়ে নিংচিং আনন্দে শব্দ করে হাসতে পারে ।

    এক রাতে নিংচিংয়ের আ আ আওয়াজে চাংউই জেগে উঠে এবং তার ইশারার মাধ্যমে বুঝেছেন সে দু-স্বপ্ন দেখেছে ।এরপর নিংচিংয়ের আওয়াজ দিনদিন স্পষ্ট হয়ে ওঠে । নিংচিংয়ের বাক-শক্তি পুনরুদ্ধার হয়েছে দেখে চাংউই বিশ্বাস করেন যে, সাধনায় অটল থাকলে নিংচিং অবশ্যই আবার কথা বলতে সক্ষম হবে ।তাই এর পর চাংউই ইশারা দিয়ে নিংচিংর সংগে কথা না বলার চেষ্টা করেন , যাতে তাকে বাধ্য হয়ে ভাষা দিয়ে নিজের সংগে কথাবার্তা বলতে হয় ।একবার ডল্ফিনের সংগে মেলামেশার সময়ে নিংচিং " দুষ্ট ডল্ফিন "কথাটা বলে উঠেন ।

    চাংউই প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেননি ।কিন্তু নিংচিং ইংরেজী দিয়ে উই ,আই লাভ ইউ কথাটা বললে চাংউই অবাক হলেন এবং দেখেছেন নিংচিং আশ্চর্য হয়ে নিজের দিকে তাকাছেন যেন তিনি স্বপ্ন থেকে জাগেননি ।চাংউই নিংচিংকে জিজ্ঞেস করেন , তুমি কি বলেছো?নিংচিং স্বপ্নে থাকার মতো আবার বললেন , উই ,আমি তোমাকে ভালবাসি ।অবশেষে চাংউই নিজের কানকে বিশ্বাস করেছেন , বিস্ময় সত্যিসত্যি ঘটেছে ,তিনি নিংচিংকে ধরে চিত্কার করে বললেন , প্রিয়তমা , তুমি আবার কথা বলতে সক্ষম হয়েছ ।

    বিশেষজ্ঞরা বলেছেন , বাক-শক্তি হারানোর ছ বছর পর আবার কথা বলতে সক্ষম হয় চিকিত্সার ইতিহাসে এটা সত্যিই একটা নজিরবিহীন ঘটনা , এটা বেশীর ভাগই প্রেম আর ডল্ফিনের কল্যানে সম্ভব হয়েছে ।