v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-09-09 11:23:37    
গ্রামীন অর্থনীতি উন্নয়নের একটি দৃষ্টান্ত

cri
    গত জুলাই মাসে সি আর আইয়ের নিজস্ব সংবাদদাতা পূর্ব চীনের শানতুং প্রদেশের লিন ই শহরের মুং ইন জেলায় গিয়ে সাক্ষাত্কার নিয়েছেন ।

    মুং ইন জেলায় সর্বত্রই সবুজ গাছপালায় ঘেরা । এই জেলায় পার্বত্য এলাকার আয়তন মোট আয়তনের ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে । কিন্তু দশ বার বছর আগে এই জেলা এমন একটি অঞ্চল ছিলো , যেখানে আবাদী জমি কম আর জমি আর পানির দারুণ ক্ষয়ক্ষতি দেখা যেতো । তাহলে ই মুং পার্বত্য এলাকার এত মনোরম দৃশ্য কোথা থেকে এসেছে ।     জেলা নগর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাদাইয়্যু গ্রামে উঁচুনীচু পাহাড়ে বিস্তীর্ণ ফল গাছ দেখা যায় । গ্রামবাসীরা ফল খামারে বাস করেন । এখানে গ্রামীন ঐতিহ্যিক গ্রাম দেখা যায় নি , তার পরিবর্তে ফল খামার গড়ে তোলা হয় । গ্রামের সামনের সিংহদ্বারের ওপরে একটি বোর্ডে লেখা আছে 'পাদাইয়্যু গ্রাম' ।

    গ্রামে প্রবেশ করে সংবাদদাতা একটি কৃষক পরিবারে আসলেন । গৃহকর্তা বৃদ্ধ লিয়ের বয়স ৬০ বছরেরও বেশি । তিনি দেখতে সতেজ , কথা বেশি বলেন । তিনি সংবাদদাতাকে তার বাসার খরগোশ খানায় নিয়ে আসলেন । সংবাদদাতা দেখলেন , খরগোশ খানায় বহু খরগোশ খাঁচা পরিপাটিভাবে রাখা ছিলো , এই সব খাঁচায় লম্বা লোমওয়ালা খরগোশ দেখতে খুব প্রিয় , সাদা রংয়ের লোম , স্ফূর্তিপূর্ণ ।

        ১৯৭৮ সালে সংস্কার ও উন্মুক্ততা প্রবর্তিত হবার পর থেকে আমাদের গ্রামে লম্বা লোমওয়ালা খরগোশ পালন শুরু হয় । এই সময়ের মধ্যে গ্রামবাসীরা সবসময় এই কাজে অবিচল থাকেন । লম্বা লোমওয়ালা খরগোশের লোম বিক্রি করা হলে বেশি আয় করা যায় ।

    চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বৃদ্ধ লি খরগোশের লোম বিক্রি করে ৩ হাজার ইউয়েন আর এক শোটি খরগোশ বিক্রি করে ৫ হাজার ইউয়েন আয় করেছেন । তার বাসায় খরগোশ আর পীচ বিক্রির উপর যে আয় করা হয়েছে , তাতে নাতীর শিক্ষা ফি আর পরিবারের প্রয়োজনীয়খরচ ছাড়া আর একটু টাকা-পয়সা বাকী আছে । এই কথা বলতে গিয়ে বৃদ্ধ লি খুব আনন্দিত হয়েছেন ।

        আমাদের এখানকার একটি ছড়া আছেঃ মিষ্টি পীচ ইয়াংসি নদীর দক্ষিণ ও উত্তরাংশে সুপরিচিত আর লম্বা লোমওয়ালা খরগোশ মহা প্রাচীরের ভেতর ও বাইরে বিক্রি করা হয় । খরগোশ কেনার জন্য উত্তর-পূর্ব চীন আর উত্তর চীনের শানশি ও হোপেই প্রদেশের লোকেরা এখানে আসেন । খরগোশ পালনের দিক থেকে আমাদের গ্রাম ' চীনের প্রথম গ্রাম' বলে আখ্যায়িত হয় । গ্রামে খরগোশ পালনের কাজ ১৯৭৮ সাল থেকে শুরু হয় , ১৯৮৫ সালে গোটা শানতুং প্রদেশে তা খ্যাতিনামা হয়েছে এবং ১৯৯৭ সাল থেকে তা দেশজুড়ে বিশ্রুত ।

    তাহলে পাদাইয়্যু গ্রাম কি ভাবে সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠেছে ? গ্রামবাসীরা কি সের জন্য পার্শ্ববৃত্তি চালিয়েছেন ?

    মুং ইন থানার পার্টি-কমিটির সম্পাদক মা সংবাদদাতাকে বলেছেন , এই কাজ শুরু হবার আগে এখানে শুধু পাহাড় ছিলো । পাহাড়ে কৃষি জমি আর সবুজ গাছপালা খুব কম ছিলো । প্রতি কৃষক পরিবারের মাথাপিছু গড়পড়তা শুধু ০.১৫ একর জমি ছিলো । পরে আবিষ্কৃত হয়েছে যে , এই ধরণের মাটি নাইট্রিজ্যান , ফসফরাস , প্যাট্যাসিয়্যাম প্রভৃতি বিবিধ খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ । এই ধরণের মাটিতে ফল গাছ লাগানোর জন্য খুব উপযোগী । ১৯৭৮ সালে চীনে সংস্কার আর উন্মুক্ততা প্রবর্তিত হবার পর সরকার এই অঞ্চলে ফল গাছ লাগানো আর পশুপালনের মাধ্যমে দারিদ্রমোচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে । লি ছাং স্যু ছিলেন এই গ্রামের পার্টি-কমিটির সম্পাদক । ১৯৮৩ সালে তিনি পাহাড়ের ০.৮ একর জমিতে ফল গাছ লাগিয়েছেন , কয়েকটি ঘর আর কয়েক ডজন খরগোশ খানা নির্মাণ করেছেন । শুধু কয়েক বছর পর তার বার্ষিক আয় চার পাঁচ হাজার ইউয়েনে দাঁড়িয়েছে । তার পরিচালনায় গ্রামবাসীরা পর পর ফল গাছ লাগানো আর খরগোশ পালনের কাজ শুরু করলেন । শুধু কয়েক বছরের মধ্যে গ্রামের প্রায় ২ শোটি কৃষক পরিবার পাহাড়ে যার যার খামার নির্মাণ করেছেন । তার পর অন্য গ্রাম আর জেলায়ও এই প্রকল্পের নির্মানকাজ চালানো হয়েছে । পীচ ছাড়া গ্রামবাসীরা আংগুর , আপেল প্রভৃতি ফল গাছও লাগিয়েছেন । তা ছাড়া গ্রামবাসীরা হাঁস-মুরগীও পালন করেন । এই অঞ্চলে ঘাস সম্পদ প্রাচুর্যময় বলে খরগোশের জন্য পর্যাপ্ত খাবার যুগানো যায় । খরগোশের মল কৃষি জমিতে সার হিসেবে ব্যবহার করা যায় ।

        কৃষকদের বাসা যে ফল খামারে নির্মাণ করা হয়েছে , তা উত্পাদনের জন্য সুবিধাজনক । আগে কৃষকদের বাসা কৃষি জমি থেকে দূরে ছিলো । কৃষি কর্ম করার জন্য কৃষকদের দূরে হেঁটে চলতে হতো । এখন ফল গাছ ব্যবস্থাপনা করার জন্য কৃষকদের অনেক সুবিধা আছে ।

জেলার টেলিভিশন কেন্দ্রের সংবাদদাতা চাং ইয়্যু হোং সংবাদদাতাকে বলেছেন , স্থানীয় সরকার প্রতি বছর বেশ কয়েকটি প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ কোর্স ব্যবস্থা করে । এখন জেলায় ফল শিল্প ব্যুরো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে , তাতে ফল কৃষকদের জন্য প্রযুক্তিগত সাহায্য দেয়া হয়েছে । বিভিন্ন থানায় কৃষি প্রকৌশলী কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে । ফল কৃষকদের পরামর্শ দেয়ার জন্য প্রতি মাসে প্রকৌশলীরা গ্রামে যান । তাদের পরামর্শে কীটনাশক ওষুধ আর সার যে কি ভাবে ব্যবহার করা হয় , কৃষকরা তা শিখেছেন ।

    গত বছর মুং ইন জেলায় পীচের উত্পাদন পরিমান ৩০ কোটি কিলোগ্রামে দাঁড়িয়েছে । গত বছর শাংহাইয়ের সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গেছে , শাংহাইবাসীরা যে তিনটা পীচ খান , তার মধ্যে দুটোই মুং ইন জেলা থেকে এসেছে ।

    কৃষকরা ধনী হবার পর শিক্ষার ওপর খুব গুরুত্ব দেন । এবছর জেলার ৩ হাজার মাধ্যমিক স্কুলের স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন । আমাদের গ্রামের অর্থনীতি যে এত দ্রুত বিকশিত হয়েছে , তার মূল কারণ এই যে , আমরা দুটো পার্শ্ববৃত্তি আঁকড়ে ধরেছি । একটা হলো লম্বা লোমওয়ালা খরগোশ পালন করা আর অন্য একটা পীচ গাছ লাগানো ।