v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-09-08 16:31:39    
ড্রাগনের বংশধরদের অভিন্ন ভবিষ্যতের আকাঙ্ক্ষা

cri
 চীনের মূলভূখন্ড আর তাইওয়ানের মধ্যে একটি প্রণালী থাকলেও প্রাচীনকাল থেকেই দু'পার একটি দেশের অধীনে ছিলো। দু'পারের জনসাধারণ একই বংশোদ্ভূত এবং তাদের অভিন্ন ঐতিহাসিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে। এখন রাজনীতির কারণে দু'পারের স্বদেশবাসী স্বাধীনভাবে আসা-যাওয়া করতে পারেন না, তবে তাদের অভিন্ন ঐতিহাসিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য কখনো ছিন্ন হবে না এবং স্বদেশবাসীদের জন্য অনুভূতি নষ্ট হবে না।

 দীর্ঘকাল ধরে তাইওয়ানের অধিবাসীরা চীনের মূলভূখন্ডের অধিবাসীদের মতোই ছোট বেলা থেকে চীনের ঐতিহ্যিক সাংস্কৃতিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। আধুনিক যুগে প্রবেশের পর পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থা এবং বিষয়বস্তু জানার পরও চীনের ঐহিত্যিক সাংস্কৃতিক বিষয়বস্তু স্কুল শিক্ষায় অপেক্ষাকৃত গুরুত্ব পেয়ে আসছে এবং সকলের শ্রদ্ধা ও স্বীকৃতি পেয়েছে। এখন পর্যন্ত দু'পারের জনগণ একই ভাষায় লেখেন, একই ভাষায় কথা বলেন। তাইওয়ানবাসীদের আঞ্চলিক ভাষার উত্স মূলভূখন্ডের ফু চিয়ান প্রদেশ আর কুয়াংতুং প্রদেশে।

 ৮১ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ চু ফু লাই অল্পবয়সে প্রণালী পার হয়ে ফুনচিয়াং প্রদেশের শিয়ামেন শহরে আসার পর মূলভূখন্ডে সংসার তৈরি করেছেন, আর তাইওয়ানে যান নি। দু'পারের প্রথা বলতে মিঃ চু তাইওয়ানে বসন্ত উত্সবের কথা উল্লেখ করেছেন। বসন্ত উত্সব হচ্ছে চীনা জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উত্সব। বসন্ত উত্সবে দক্ষিণ চীনের প্রায় প্রতি পরিবার চালের পিঠা খান। মিঃ চু বলেছেন, "আমার ছোটবেলায় আমার মা বসন্ত উত্সবে চালের পিঠা তৈরি করতেন। দু'পারের এই প্রথা প্রায় একই, এপারে যা, ওপারেও তাই।"

 উত্সব একটি জাতির ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাইওয়ানবাসীর ঐতিহ্যিক উত্সব এবং প্রথা চীনের মূলভূখন্ডের মতোই। যেমন, সাধারণত বসন্ত উত্সবে পূর্বপুরুষকে পূজা করা হয়। বসন্ত উত্সবের ঠিক আগের দিনের রাতে পুরো পরিবারের সদস্যরা এক সাথে বসে নব্বর্ষের আগমনের অপেক্ষা করেন। লণ্ঠন উত্সবে লণ্ঠন মেলা আয়োজিত হয়। কবর-পরিষ্কার উত্সবে মৃত আত্মীয়স্বজনের কবরকে পরিষ্কার করতে হয়। ড্রাগন নৌকা উত্সবে পরিবারের সকল সদস্যকে এক সাথে "ছোংজি" নামে এক রকম খাবার খেতে হয়। মধ্য শরত্ উত্সবে পুরো পরিবার মিলিত হয়ে চাঁদ দেখেন এবং মুনকেক বা চাঁদ পিঠা খান।

 অভিন্ন উত্সব ছাড়া, দু'পারের জনসাধারণ অভিন্ন দেবতার পূজা করেন। একটা উদাহরণ দিচ্ছি, প্রতি বছরে দু'পারের জনগণ "কুয়ান সম্রাট" নামে এক দেবতার পূজা করেন।

 কুয়ানডি এর আসল নাম কুয়ান ইউ। তিনি হলেন তৃতীয় শতাব্দীতে চীনের একজন বিখ্যাত জেনারেল, খুব সাহসী এবং কৃতিত্বপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য, অটল আনুগত্যের সঙ্গে সর্দারের অনুসরণ করেন। চীনারা তাঁকে খুব শ্রদ্ধা করেন, সেই জন্য তাঁকে "সম্রাট" বলে ডাকেন, তাঁর মূর্তিকে পূজা করেন। তাইওয়ান প্রণালীর মূলভূখন্ডের পাশে তুং শান নামে একটি দ্বীপ আছে, দ্বীপে ১৪ শতাব্দীতে নির্মিত একটি "কুয়ান সম্রাট মন্দির" আছে। প্রতি বছরে বিপুল পরিমাণ তাইওয়ানবাসীরা এখানে এসে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

 ১৯ জুন হচ্ছে কুয়াং সম্রাটের জন্মদিন। চলতি বছরের এই দিনের ভোরবেলায় তুং শানের কুয়ান সম্রাট মন্দিরে ধুপকাটি এবং মোমবাতি প্রজ্বলিত হয়। প্রার্থনার ঘন্টা আর ঢাকের আওয়াজে প্রণালীর দু'পারের কুয়ান সম্রাট মন্দিরের প্রতিনিধিরা এই মন্দিরে এসে একসাথে মনোজ্ঞ প্রার্থনা অনুষ্ঠান আয়োজন করেন।

 তাইওয়ানের তাইপেই শহর থেকে আসা মিঃ চাং বলেন, তাঁর বাসায় সবসময় কুয়ান সম্রাটের মূর্তি পূজা হয়ে থাকে। তিনি ছোটবেলা থেকে কুয়ান সম্রাটের ধর্মাবলম্বী হন, সাম্প্রতিক কয়েক বছরে প্রায় প্রতি বছর তুং শানে আসেন, এখানের প্রার্থনা অনুষ্ঠান অংশ নেন, লোক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

 তাইওয়ানে কুয়ান সম্রাটের ধর্মাবলম্বী প্রচুর, এখানে এসে আরো বেশি প্রথা উপভোগ করেছি।

 প্রণালীর দু'পারের অধিবাসীদের আরেকটি অভিন্ন দেবতা হচ্ছে মাজু। মাজু হচ্ছেন সমুদ্রে যাত্রীদের নিরাপত্তাদাত্রী দেবী। চীনের দক্ষিণ-পূর্ব সাগরীয় অঞ্চল, তাইওয়ান দ্বীপ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বহু অঞ্চলের অধিবাসীরা মাজুকে বিশ্বাস করেন, নানা জায়গায় মাজু মন্দির আছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কেবল তাইওয়ানে ৭৪টি মাজু মন্দির আছে। তবে মাজু মন্দিরের সদর দপ্তর চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের একটি ছোট দ্বীপ --- মেইচৌ দ্বীপে । আজ পর্যন্ত প্রণালীর দু'পারে মাজুর ধর্মাবলম্বী অনেক আছে, মাজু মন্দিরের ধুপকাটি সবসময় প্রজ্বলিত থাকে।

 চীনের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমির তাইওয়ান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাডাম জেন রুই মেই বলেছেন, তাইওয়ানের ৯৮ শতাংশ অধিবাসীর পূর্বপুরুষের বাড়ী চীনের মূলভূখন্ডে। তাইওয়ানের অধিবাসী মিঃ ইয়াং কে চাংয়ের পূর্বপুরুষের বাড়ী তুংশান দ্বীপে। তিনি বলেছেন, স্বদেশ সবসময়ে তাঁর মনে গেঁথে আছে। দশ বারো বছর আগে তিনি মূলভূখন্ডে এসে পুঁজিবিনিয়োগ করে একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন। সম্প্রতি তিনি ৫০ লাখ ইউয়ান ব্যয় করে তুংশান দ্বীপে "দু'পারের সংস্কৃতি প্রদর্শনী কেন্দ্র" স্থাপনের পরিকল্পনা করেছেন। এই প্রদর্শনী কেন্দ্র ফুচিয়ান প্রদেশ এবং তাইওয়ানের ঐতিহ্যিক সংঙ্গীত, গান এবং বৈশিষ্ট্যময় প্রথা প্রদর্শন করা হবে। তিনি বলেছেন, তাইওয়ানের সংস্কৃতি আর মূলভূখন্ডের তুংশানের সংস্কৃতির অনেক মিল আছে। আমি স্বদেশের সংস্কৃতিক আর তাইওয়ানের সংস্কৃতির তুলনা করতে চাই, যাতে দু'পারের জনগণের মধ্যে ভাব বিনিময় জোরদার করা যায়, দু'পারের জনগণের জন্য সুষম পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়।

 চীনের সমাজ বিজ্ঞান একাডেমির তাইওয়ান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাদাম ছেন রুই মেই তাইওয়ানের বিদগ্ধ মহলের সঙ্গে অনেক ভাব বিনিময় করেছেন। তিনি বলেছেন, চীনা জাতির সংস্কৃতির উত্সস্থল মূলভূখন্ডে। তাইওয়ানের পণ্ডিতরা মূলভূখন্ডের সঙ্গে ভাব বিনিময় করাতে খুব আগ্রহী। তাইওয়ান ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির সুরক্ষা কাজ খুব ভালো , এই ক্ষেত্রে মূলভূখন্ডে অনেক শিক্ষার ব্যাপার আছে।

 মাদাম ছেন আরো বলেছেন, এক জন চীনা ব্যক্তি হিসেবে তিনি প্রণালীর দু'পারের উন্নয়নের জন্য গর্বিত বোধ করেন, বিশেষ করে আজকে চীনের আন্তর্জাতিক মর্যাদা দিন দিন উন্নত হচ্ছে। তাঁর বড় আশা দু'পার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুনরায় একত্রিত হোক, যাতে দু'পারের জনগণ চীনা জাতির পুনরুদ্ধার এবং সমৃদ্ধি উপভোগ করতে পারেন।