থিয়েন্থান পার্কের মধ্যে প্রধান দর্শনীয় জায়গা হচ্ছে থিয়েন্থান । থিয়েন্থান হচ্ছে পৃথিবীতে আকাশ পুজার বৃহত্তম মন্দির ।চীনের ইতিহাসে বিভিন্ন রাজবংশের সম্রাটদের প্রায় সবাই আকাশ পুজার মন্দির নির্মান করিয়েছেন , মানবজাতিকে সব কিছু দানকারী আকাশের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্যে । পেইচিংয়ের থিয়েন আন মেন মহাচত্বরের দক্ষিণ দিকের ছিয়েন মেন থেকে থিয়েনথানের দূরত্ব মাত্র আধা ঘন্টার হাঁটা পথ ।
দুই শো তিয়াওর হেক্টর জায়গা জুড়ে থিয়েন তান নির্মানের কাজ শুধু হয়েছিল ১৪২০ সালে । থিয়েন্থানের উত্তর ভাগ গোলাকার এবং দক্ষিণ ভাগ চারকোনা । ভেতরের ভাগ আর বাইরের ভাগ এই দুই ভাগ নিয়ে থিয়েন্থান গঠিত । থিয়েন্থানের ভেতরের ভাগ ছিলো বিভিন্ন রাজবংশের সম্রাটদের আকাশ পুজার জায়গা ।
বিশেষঞ্জরা বলেছেন , ১৫৩০ সালে ছিলো থিয়েন্থানের সার্বিকভাবে গড়ে উঠার সময় । পরে ১৭৩৬ সালে ছিং রাজবংশের ছিয়েনলুং সম্রাটের শাসনামলে আংশিকভাবে থিয়েন্থানের পুনর্বিন্যাস আর সম্প্রসারণ করা হয়েছে । ফলে থিয়েন্থান সবচেয়ে সুন্দর রূপ ধারণ করেছে । অর্থাত্ আজ আমরা যে রূপ হয়েছে । থিয়েন্থানের মোট মেঝের আয়তন প্রায় তিরিশ হাজার বর্গমিটার । চীনের ইতিহাসে মোট বাইশজন সম্রাট থিয়েন্থানে ছয় শো চুয়ান্নবার আকাশ পুজা করেছিলেন ।
থিয়েন্থানে বেড়াতে গেলে আপনি অনেক মজার মজার ব্যাপার দেখতে পাবেন । এই সব মজার মজার ব্যাপার চীনের প্রাচীন সংস্কৃতির সংগে সম্পর্কিত ।যেহেতু থিয়েন্থান ছিল রাজপরিবারের বিশেষভাবে ব্যবহারের একটি ব্যবস্থা , সেহেতু এই ব্যবস্থার স্থাপত্যরীতিতে অনেক বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় । যেমন থিয়েন্থানের অবস্থানের কথা ধরা যাক । রাজপ্রাসাদের দক্ষিণে অথচ একটু পূর্বে থিয়েন্থান অবস্থিত । থিয়েন্থানের মেরুরেখা রাজপ্রাসাদকে এড়ুয়ে গেছে । থিয়েন্থানের সমতল আকারও খুবই অদ্ভূত । চারকোণাও নয়, গোলাকারও নয় । বরং উত্তরভাগ গোলাকার এবং দক্ষিণভাগ চারকোণা । গোলাকার উত্তরভাগ আকাশের প্রতীক এবং চারকোণা দক্ষিণভাগ মাটির প্রতীক । চীনের প্রাচীনকালের গোলাকার আকাশ আর চারকোণা মাটির তত্ত্বের সংগে এটা সংগতীপূর্ণ । আর একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে , থিয়েন্থানের চারদিকে দুটো দেওয়াল আছে । এই দুটো দেওয়াল থিয়েন্থানকে দুই ভাগে ভাগ করেছে । ভেতরের ভাগ আর বাইরের ভাগ । ভেতরের ভাগকে আবার দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে । উত্তরভাগের নাম ছিকোথান আর দক্ষিণভাগের নাম হুয়েন্ছুথান । ছিকোথান আর হুয়েন্ছুথান একই মেবুরেখায় অবস্থিত । থিয়েন্থানের গৃহাদির পরিমান খুব কম । সত্যিকার গৃহাদির মেঝের আয়তন শতকরা শুধু একভাগের কিছু বেশী অর্থাত্ তিরিশ হাজার বর্গমিটার । এতে আকাশের বিশালতা , পবিএতা আর শান্তি বোঝানো হয়েছে ।
থিয়েন্থানের গৃহাদির পরিমান খুব কম হলেও সব ব্যবস্থাই একই মেরুরেখায় অবস্থিত । এই মেরুরেখায় অবস্থিত প্রায় সব গৃহাদিই গোলাকার । যেমন ছিয়েন নিয়েন প্রাসাদ তিন তলা বিশিষ্ট একটি গোলাকার মন্দির । এর নীচে তিন তলা বিশিষ্ট একটি মন্চ । দক্ষিণ ভাগের হুয়েন্ছিউ হচ্ছে তিন তলা বিশিষ্ট একটি গোলাকার প্রস্তব মন্চ । থিয়েন্থানের প্রধান প্রধান ব্যবস্থার ছাদই নীল বঙের টালি দিয়ে ছাওয়া । নীল বঙয়ের অর্থ আকাশ ।
বিশেষজ্ঞতা আরো বলেছেন , থিয়েন্থানের ব্যবস্থাদির আকার, রঙ এবং দৈর্ঘ প্রস্থ আর উচ্চতা সবই সংস্কৃতির সংগে সম্পর্কিত ।
হুয়েন্ছিউ মন্চের চারদিকে টালি পাথরের বেড়া আছে । প্রথম তলার চারদিকের প্রতিটি দিকে নয়টি টালি পাথর আছে । দ্বিতীয় তলার চারদিকের প্রতিটি দিকে আঠারোটি টালি পাথর আছে । অবচেয়ে নীচের তলার চারদিকের প্রতিটি দিকে সাতাশটি টালি পাথর আছে । হুয়েন্ছিউ প্রস্তব মন্চের মাঝখানে একটি পাথব বসানো আছে । এই পাথরের নাম আকাশের হৃদয় পাথর । এই পাথরের চারদিকে নয় পরিধি আছে । প্রথম পরিধিতে আছে নয়টি টালি পাথর । দ্বিতীয় পরিধিতে আছে আঠারোটি টালি পাথর । এমনি করে নবম পরিধিতে আছে একাশিটি টালি পাথর । এই সব নয় সংখ্যার মধ্যে আকাশের প্রতি মানবজাতির অসীম শ্রদ্ধা যেমন প্রতিফলিত হয়েছে , স্থাপত্যরীতিতে চীনাদের মেধাও তেমনি প্রতিফলিত হয়েছে ।
|