v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-09-07 13:38:22    
চিত্রশিল্পী ইউয়ে য়ু

cri
    কিছু দিন আগে চীনের জাতীয় চারুকলা গ্যারারীতে " আফ্রিকার স্মৃতি "নামে এক চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে । এই চিত্রপ্রদর্শতেচিত্রশিল্পী ইউয়ে য়ুর নাম দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে , তার আঁকা ছবি প্রদর্শীত সব ছবিগুলোর প্রায় অর্ধেক । তার আঁকা ছবির শৈলী স্ববৈশিষ্ট্যময়, এতে আফ্রিকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও স্থানীয় অধিবাসীর মনোবল প্রতিফলিত হয়েছে । এই গ্যালারীতে প্রদর্শিত ইউয়ু য়ুর " ডিস্কো নাচের জন্মভুমি "নামে একটি ছবি অনেক দর্শক পছন্দ করেন । এই ছবি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঝরনা- কলমের ছবি , ছবিতে দুটি বড় গরু দৌড়াচ্ছে ,পাশে কোমরে চিতাবাঘের চামড়া দিয়ে তৈরী গামছা পরা এক গরুপালক গরুর সংগে নাচ করছে । অনেক দর্শক এই ছবি উপভোগ করার জন্য ছবির সামনে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন । চিত্রশিল্পী ইউয়ে ইয়ু এই ছবির বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করে বলেছেন , চীনারা আধুনিক ডিস্কোনাচ পছন্দ করেন , ডিস্কো নাচের আদি রুপ আফ্রিকার গরুপালকের নাচ , আমি এই ছবি আকাঁর মাধ্যমে আফ্রিকার প্রতি আমার মমতা প্রকাশ করার প্রয়াস চালিয়েছি । তিনি বলেছেন , এই ছবির নাম ডিস্কো নাচের জন্মস্থান , আমি আফ্রিকায় এক বছরেরও বেশী সময় ছিলাম , যাওয়ার সময় আমার ছাত্রছাত্রীরা কেঁদেছে , আমিও কেঁদেছি । আমি তাদের সংগে আমার বন্ধুত্ব প্রকাশ করতে চাই । আমি চীন ও আফ্রিকার সংস্কৃতির মধ্যে মিল খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি , আমি অনেক বই পড়েছি , বই থেকে আমি জানতে পেরেছি যে আফ্রিকা ডিস্কোনাচের জন্মস্থান, চীনারা , বিশেষ করে চীনের যুবসমাজ ডিস্কোনাচ পছন্দ করেন , তাই আমি " ডিস্কো নাচের জন্মস্থান "নামে এই ছবি একেঁছি । এই ছবি তৈরী করতে আমার ছয়মাস সময় লেগেছে , আমি এই ছবি আঁকার মাধ্যমে আফ্রিকার বন্ধুদের প্রতি আমার ভালোবাসা প্রকাশ করেছি ।

    চিত্রশিল্পী ইউয়ু ইয়ু চীনের উত্তর-পশ্চিম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক । ১৯৯৭ সালে তিনি চীন সরকারের আফ্রিকায়পাঠানো একটি কর্মী দলে যোগদান করে ছবি আঁকা শেখাতে আফ্রিকার এরিত্রিয়ায় যান । আফ্রিকায় ছাত্রছাত্রীদের ছবি আঁকা শেখানো সহজ নয় , ছবি আঁকার উপকরণ পাওয়া কঠিন বলে স্থানীয় ব্যক্তি বাধ্য হয়ে দেওয়ালে ব্যবহার্য রঙ দিয়ে ছবি আঁকেন । তার ছাত্ররা অভিযোগ করে বলেছেন , আফ্রিকায় ছবি আঁকার উপকরন নেই । কিন্তু ইউয়ু য়ু তাদেরকে বলেন , ছবি আঁকা শেখার জন্য উপকরণ গুরুত্বপূর্ন সত্য, তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয় । আমরা স্থানীয় অবস্থা বিবেচনা করে উপায় খুঁজে বের করতে পারি । তিনি মাটি থেকে একটা পুরানো খবরের কাগজ কুড়িয়ে , পকেট থেকে ঝরনা কলম বের করে খবরের কাগজে এক বয়োবৃদ্ধ নারী একেঁছেন । 'মা' নামে এই ছবিতে এই সহৃদয় বৃদ্ধা সামনের দিকে তাকাচ্ছেন । আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরে আসার সময় এরিত্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউয়ু য়ুকে এই ছবি রেখে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন, কিন্তু ইউয়ে য়ু রাজি হন নি , তার ধারনা ,তার আঁকা প্রতিটি ছবি আপন ছেলের মতো , তাই তিনি এই ছবি চীনে নিয়ে এসেছেন । তখন থেকে লোকেরা জানতে পেরেছেন যে পুরানো খবরের কাগজের উপরও ছবি আঁকা যায় ।

    আসলে ইউয়ে য়ু-র ছবি আঁকাও পুরনো খবর কাগজ থেকে শুরু হয় । এ বছর তার বয়স ৪৬ বছর , তার জন্ম উত্তর-পশ্চিম চীনের শান সি প্রদেশের সি আন শহরে। তিনি গরীব পরিবারের ছেলে , ছোট বেলায় জীবিকার জন্য ঠেলা গাড়ী ঠেলতেন। পরিবারের টানাটানি অবস্থা পরিবর্তনের জন্য ইউয়ে য়ু কিছু একটা শেখার সিদ্ধান্ত নিলেন । তার বয়স যখন ১১ বছর , তিনি ছবি আঁকা শিখার সিদ্ধান্ত নিলেন । ছবি আঁকা ব্যয়সাপেক্ষ কাজ , প্রতিটি পয়সা বাঁচানোর জন্য তিনি চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেন নি । তিনি ময়লা স্তুপ থেকে পুরনো খবরের কাগজ ও মেগাজিনের ছবিগুলো একত্র করে একটি পুরানো পত্রিকায় এঁটে দেন , এটাই তার ছবির বই , এই উপায় দিয়ে তিনি তখনকার নামকরা চিত্রশিল্পীদের ছবি দেখে দেখে নিজে আঁকতে শুরু করেন । ছবি আঁকা শেখার সময় তিনি এই ধরনের বেশ কয়েকটি ছবির বই তৈরী করেছেন । তিনি বলেছেন , দারিদ্র্য কোনো বড় সমস্যা নয় , মানুষের নৈতিক বলের অভাব সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যা ।

    উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের পড়াশুনা শেষ করে ইউয়ে য়ু এক স্থানীয় চারুকলা কারখানায় হাতির দাঁত খোদাইয়ের কাজ শিখতে শুরু করেন । তিনি উত্তর ও দক্ষীন চীনের হাতির দাঁতের খোদাইয়ের বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করে উত্তর পশ্চিম চীনের বৈশিষ্টসম্পন্ন শিল্পকর্ম খোদাই করেছেন । তার বয়স যখন ১৮ বছর , তখন তিনি তিনি চীনের চারুকলা শিল্প প্রদর্শনীর পুরস্কার পেয়েছেন । হাতির দাত খোদাইয়ের অভিজ্ঞতা তার ছবি আঁকার অনুকুল । তিনি বলেছেন , আমি হাতির দাতের উপর খোদাই করার সময় আমার মনে একটা ধারনা জন্মালো। তা হচ্ছে সৃষ্টি হলো শিল্পের আসল লক্ষ্য । হাতির দাঁতের উপর খোদাই শেখার পর আমার মাথায় ত্রিমাত্রিক ছবির ধারনা জন্মে , যে কোনো ছবি আমি তিন দিক থেকে আঁকতে পারি , এটা আমার ছবি আঁকার ভালো ভিত্তি স্থাপন করেছে । স্ব-শিক্ষিতইউয়ে য়ু ২১ বছর বয়সে পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন , কিন্তু অল্প সময়ের পর তিনি আবার পরীক্ষার মাধ্যমে বিদেশে পড়াশুনা করার সুযোগ পেয়েছেন । তিনি জাপানে তিন বছর বানিজ্য বিষয়ক ডিজাইন শিখেছেন । দেশে ফিরে আসার পর ইউয়ে য়ু আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতোকত্তর ছাত্র হিসেবে চীনের চারুকলা শিল্পের ইতিহাস শিখেছেন । এখন ইউয়ে য়ু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভেসার হিসেবে প্রায়ই তার ছাত্রছাত্রীদের বলেন , যারা প্রস্তুত রয়েছেন , তারাই ভালো সুযোগ পাবেন । বিশ-বাইশ বছর ধরে তিনি বই পড়ার মাধ্যমে অনেক তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং এক টুকরো ষ্পঞ্জের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহন করে তার শিল্পকর্মে ব্যবহার করার প্রয়াস চালিয়েছেন । তার শিল্পকর্মের মধ্যে আছে তৈল চিত্র , ঐতিহ্যবাহী চীনা শৈলীতে আঁকা ছবি , হস্তলিপি , মাটির পাত্র তৈরী , ইমারতের ডিজাইন , শহরের রাস্তাঘাটের বড় খোদাই কর্ম ইত্যাদি । তার শিল্পকর্মগুলো থেকে যেমন সুগভীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, তেমনি নতুন যুগের প্রবল বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে । তিনি বলেছেন , আমি মনে করি যদি একজন চিত্রশিল্পী শুধু এক ধরনের ছবি আঁকেন অথবা একটি শৈলীতে নিজেকে সীমাবদ্ধ করে , তাহলে তিনি নিজেকে একটি ছোট ঘরে আটক করবে । আমার ধারনা , যে সব ছবি আপনার মনের কথা প্রকাশ করতে পারে এবং দর্শককে মুগ্ধ করতে পারে , সেসব ছবিই ভালো ছবি , ভালো শিল্পকর্ম ।

    ইউয়ু য়ু একজন পরিশ্রমী চিত্রশিল্পী , প্রতি দিন তার ঘুম মাত্র চার ঘন্টা । আফ্রিকা থাকাকালে তিনি রোজ তিনটে ছবি আঁকতেন , দেড় বছর সময়ের মধ্যে তিনি এক হাজারেরও বেশিটি ছবি একেঁছেন ।

    ইউয়ে য়ু সরল , অকৃত্রিম ও আন্তরিক প্রকৃতির লোক , তিনি আধুনিক যুগের উদাসীনতা পছন্দ করেন না । তিনি মনে করে , আফ্রিকা সম্বন্ধে নাগরিকদের অনেক ভুলবোঝাবুঝি ছিল । তিনি বলেছেন , আফ্রিকায় আমার সবচেয়ে বড় উপকার হচ্ছে আমি বুঝতে পেরেছি , মানুষে-মানুষে সমঝোতা বাড়ানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । ছবি আঁকার মাধ্যমে তিনি আফ্রিকার জনগনের সংগে গভীর বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন । দেশে ফিরে আসার পর তিনি একটি চিত্র এলবাম প্রকাশ করেছেন , তার এই এলবামের শিরোনামঃ আফ্রিকাকে জানুন । তিনি তার চিত্রএলবামে ছবির মাধ্যমে পাঠকদের আফ্রিকার শিল্পকলা ও জনগনের রীতিনীতি পরিচয় দেয়ার প্রয়াস চালিয়েছেন ।

    ইউয়ে য়ুয়ের নানা শখ আছে , তিনি সানসি প্রদেশের অপেরা শুনতে পছন্দ করেন , সাতার কাটা , বল খেলা ও ডিস্কো নাচও তার দৈনন্দিন অবসর সময়ের বিনোদন । তিনি খুব ব্যস্ত , বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ছাড়াও তিনি চীনের চিত্রশিল্পী সমিতি , চীনের অনুবাদ কর্মী সমিতি ও চীনের ডিজাইন কমিটির সদস্য । তা ছাড়া , তিনি জাতি সংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিশেষজ্ঞ গ্রুপের সদস্য । বর্তমানে ইউয়ে য়ু একটি বিরাট পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন । তিনি প্রাচীনকাল থেকে চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত সময়পর্বে বিভিন্ন রাজবংশ ও আধুনিক যুগের বিখ্যাত যুদ্ধের ইতিহাস ও পুরাকীর্তিগুলো ছবির আকারে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।