৫ সেপ্টেম্বর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী নটবর সিং ইরানে তাঁর তিন দিনের আনুষ্ঠানিক সফর শেষ করেছেন। ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রী সিংয়ের এবারকার ইরান সফরে বিশ্বের কাছে প্রতিফলিত হয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি সত্বেও ভারত ইরানের সঙ্গে রণনৈতিক সম্পর্ক সুসংবদ্ধ করতে দৃঢ়সংকল্প।
মাহমোদ আহমাদি রেজাদ ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর নটবর সিং হচ্ছেন ইরান সফরকারী ভারতের উর্ধ্বতন নেতা । ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, তাঁর এবারকার সফরের ফলাফল প্রধানত দু' ক্ষেত্রে প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রথমত: ভারতের শক্তি সম্পদ নীতিতে লক্ষনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। এর আগে দাম আর অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয়ের কারনে দু' দেশের শক্তি সম্পদের সহযোগিতায় কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। তাঁর এবারকার সফরের পর দু' দেশ এক মত হয়েছে যে, চলতি বছরের শেষ দিকে দু'পক্ষের মধ্যে ইরান থেকে পাকিস্তান হয়ে ভারত পর্যন্ত বিস্কৃত গ্যাস পাইপ লাইন নিমার্ন প্রকল্প সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। এই গ্যাস পাইপ লাইনের নির্মানে ৭৪০ কোটি ডর্লার বরাদ্দ হবে। তা ছাড়া, ইরান স্বীকার করেছে যে, ২০০৯ সাল থেকে ২৫ বছরের মধ্যে ভারতের কাছে ২২০০ কোটি ডলার সূল্যের ৫০ লক্ষ টন তরলীয়িত প্রাকৃতিক গ্যাস বিক্রি করবে।
দ্বিতীয়ত: তাঁর এবারকার সফরের মাধ্যমে মধ্য-এশিয়া অঞ্চলে ভারতের প্রভাব প্রসারিত হয়েছে। এর আগে ইরান আর ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী, দু 'পক্ষ ইরানের ছাহবাহারে মিলিতভাবে একটি বন্দর এবং আফগানিস্তান সংলগ্ন একটি সড়ক নির্মান করতে রাজি হয়েছে। ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে , বর্তমানে দু'দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃহত্তর ক্ষেত্রে বিস্তৃত হয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমোদ আহমাডিনেজাদও বলেছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রী নটবর সিংহয়ের এবারকার ইরান সফর থেকে প্রতিপন্ন হয়েছে যে, ইরান-ভারত সর্ম্পকের বিকাশ শুধু দু' দেশের জন্য নয় এই অঞ্চল আর বিশ্বের স্থিতিশীলতার জন্যও কল্যাণকর।
গত মাসের ৮ তারিখে ইরান আবার ইউরেনিয়াম রুপান্তরকরণ তত্পরতা শুরু করেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে ইরান ই ইউর উপস্থাপিত ইরানের পারমাণবিক সমস্যার নিষ্পত্তি সংক্রান্ত গুচ্ছ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানার করেছে। ইরানের পারমাণবিক সমস্যা নিয়ে অব্যাহতভাবে আলোচনার জন্য চলতি মাসের ১৯ তারিখে জেনিভায় আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার পরিষদের অধিবেশন আবার অনুষ্ঠিত হবে। ঠিক এ সময় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ইরান সফর খুব স্পর্শকাতর। এই সমস্যায় ভারতের সাহায্যের সন্ধানে গত ৩০ আগস্ট ইরানের নব-নিযুক্ত পারমাণবিক সমস্যা সংক্রান্ত আলোচনার প্রধান প্রতিনিধি আলি লারিজানি ভারত সফরে গিয়েছেন। সুতরাং পররাষ্ট্র মন্ত্রী নটবর সিংয়ের এবারকার ইরান সফরের মাধ্যমে ইরানের পারমানবিক সমস্যায় দু'পক্ষের অবস্থান আরও সমন্বিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বারংবার আপত্তি উপেক্ষা করে ভারত ইরানের সঙ্গে তার রণনৈতিক সম্পর্ককে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে নিতে চেয়েছে। স্বদেশের শক্তি সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং স্বদেশের স্বার্থ রক্ষা করার বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বতর্মানে শক্তি সম্পদের প্রতি ভারতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ৭০ শতাংশ শক্তি ও সম্পদ আমদানির উপর নির্ভরশীল । সম্প্রতি ভারত বিশ্বের ষষ্ঠ শক্তি সম্পদ ভোগী দেশে পরিণত হয়েছে। সুতরাং ভারত সরকারকে বৈদেশিক শক্তি সম্পদের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
|