v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-09-06 10:54:17    
পেইচিং অঙ্গ সংবাহন হাসপাতালের অন্ধ চিকিত্সক

cri

    চীনের একশো তিরিশ কোটি মানুষের মধ্যে রয়েছে ছ কোটি প্রতিবন্ধী । চীনের সরকার ও সমাজ সর্বদাই প্রতিবন্ধীদের দৈনন্দিন জীবনের যত্ন নেয় । প্রতিবছরের মে মাসের তৃতীয় রবিবার চীনের প্রতিবন্ধীদের সাহায্যদান দিবস । প্রতিবন্ধীদের জীবনের উপর নজর রাখতে জনসাধারণকে স্মরণ করা এবং তাঁদের কাজকর্ম ও সুখীজীবন যাপনের পথ সুগম করাই এই দিবস পালনের উদ্দেশ্য । চলতি বছরের প্রতিবন্ধীদের সাহায্যদান দিবস উপলক্ষে সি আর আইয়ের সংবাদদাতা পেইচিং অঙ্গ সংবাহন হাসপাতালে গিয়ে অন্ধ চিকিত্সকদের সাক্ষাতকার নিয়েছেন । এখন শুনুন তাঁর লেখা সাক্ষাতকারভিত্তিক প্রতিবেদন ।

    পেইচিং অঙ্গ সংবাহন হাসপাতাল চীনের বৃহততম পেশাগত অঙ্গ সংবাহন হাসপাতাল। এই হাসপাতালের একশো জনেরও বেশী চিকিত্সকের মধ্যে প্রায় চল্লিশ জনই অন্ধ চিকিত্সক বা স্বল্প দর্শনশক্তির চিকিত্সক ।

    পেইচিং অঙ্গ সংবাহন হাসপাতাল পেইচিংয়ের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত । হাসপাতালের লাল দরজায় ঢুকে দেখা যায় , এক একটি আঙ্গিনাকে মাঝখানে রেখে তার চারদিক ঘিরে থাকে একটার পর একটা একতলা বাড়ি । প্রকাণ্ড হুই গাছের ঘনছায়ায় আঙ্গিনা আবৃত । একতলা বাড়ির জানালা ও দরজা সবুজ বা লাল , স্বচছ কাঁচের ভেতর দিয়ে দেখা যায় ধবধবে সাদা চাদর পাতা খাট ও কর্মরত অঙ্গ সংবাহক।

    একটি চিকিত্সারুমে প্রবেশ করতেই সি আর আইয়ের সংবাদদাতার চোখে পড়ে ভেতরে দশটা খাট সাজানো । জেনলি নামে একজন চিকিত্সক আকাশের দিকে ঈষত মাথা তুলে দুহাত দিয়ে একজন রোগীর কোমরে জোরে জোরে রগড়াচ্ছেন। জেনলি সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন, অসাবধানে ভারি জিনিষ তুলে নিতে গিয়ে তাঁর রোগীর কোমরে ব্যথা হয়েছে ।

    তিনি বলেছেন, তাঁর রোগীর মেরুদণ্ডের পার্শ্বভাগ জখম হয়েছে,তিনি তাঁর মেরুদণ্ডের উপরীভাগ থেকে শুরু করে কোমর হয়ে ত্রিকাস্থি পর্যন্ত তাঁর পিঠের

পেশী শিথিল করছেন ।

    চিকিত্সক জেনলির বয়স ৩৫ বছর । তাঁর গুরুতর ছানি রোগ সহজাত । তিন বছর বয়সে তাঁর চোখের অস্ত্রোপচার হলেও তাঁর দর্শনশক্তি এখন মাত্র শূন্য দশমিক ১ ডিগ্রি ।

    ছোটোবেলায় অন্ধদের স্কুলে লেখাপড়া শিখার সময়ে চীনের ঐতিহ্যিক চিকিত্সা বিদ্যার প্রতি তাঁর কৌতুহল জন্মে । মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তিনি অঙ্গ সংবাহন শিখতে শুরু করেন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনি পেইচিংয়ের একটি আকুপাংচার ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয়ে অব্যাহতভাবে অঙ্গ সংবাহনচর্চা করেন । স্নাত্তক হওয়ার পর তিনি দশাধিক বছর ধরে পেইচিং অঙ্গ সংবাহন হাসপাতালে চিকিত্সা করেছেন ।

    জেনলি ও তাঁর সহকর্মীরা গ্রীবার কশেরুকা ও কোমরের কশেরুকার রোগসহ বহু কঠিন রোগ নিরাময় করেছেন। তাঁদের নিরলস প্রয়াসে বহু রোগী বিনা অস্ত্রোপচারে আরোগ্য লাভ করেছেন । এইজন্য জেনলি ও তাঁর সহকর্মীরা পেইচিংয়ে খ্যাতি অর্জন করেছেন ।

    সি আর আইয়ের সংবাদদাতা রোগী ওয়াং মিন হুয়ানের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলেছেন। ওয়াং মিন হুয়ান বলেছেন একমাস চিকিত্সা করার পর তিনি মোটামুটি সেরে উঠেছেন ।

    তিনি বলেছেন , তিনি একদিন হঠাত কটিদেশীয় কশেরুকার রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন , কোমর থেকে ঊরুদেশ আর পা পর্যন্ত অসহ্য ব্যথায় রাত দিন গোঙাতেন তিনি। প্রস্রাব ও মলত্যাগও কষ্টসাধ্য ছিল। অস্ত্রোপচার করতে যে বিশ-তিরিশ হাজার ইউয়ানের দরকার তা তাঁর সঙ্গতির বাইরে । এই হাসপাতালে অঙ্গসংবাহনসহ চীনা চিকিত্সা পদ্ধতিতে তার চিকিত্সা করার প্রস্তাব তিনি সানন্দে গ্রহণ করেন । । অল্প সময়ের মধ্যে তিনি প্রায় আরোগ্য লাভ করেছেন ।

    এখন প্রতিদিন চার শো জনেরও বেশী রোগী পেইচিং অঙ্গ সংবাহন হাসপাতালে চিকিত্সা করাতে আসেন । এই হাসপাতালের মহাপরিচালক লাই ওয়ের মতে তাঁর হাসপাতালের জনপ্রিয়তার মূলে রয়েছে অন্ধ চিকিত্সকদের কঠোর পরিশ্রম ।

তিনি বলেছেন, অন্ধ চিকিত্সকরা আমার হাসপাতালের প্রধানশক্তি । দায়িত্ব পালন,কর্মনিষ্ঠা ও কৃতিত্বের দিক থেকে নিখাদ চিতিত্সকদের সঙ্গে তাঁদের ভেদ নেই ।

জিজ্ঞেস করে জানা গেছে , এই হাসপাতালের বিশেষজ্ঞের পদমর্যাদা প্রাপ্ত অন্ধ চিকিত্সকদের মাসিক বেতন আট বা নয় হাজার ইউয়ান । শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে হাসপাতালে সবেমাত্র চাকরি শুরু করেছেন যারা,তাঁরাও প্রতি মাসে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার ইউয়ান পাচ্ছেন । চীনে তাঁদের উচ্চ বেতন ভোগী বলা যায় ।

মহাপরিচালক লাই ওয়ে জানিয়েছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন্ধ চিকিত্সকদের প্রশিক্ষণকে গুরুত্ব দেয় এবং জীবনযাপনের দিক থেকে তাঁদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেন।প্রতিবছর একজন অন্ধ চিকিত্সক হাসপাতালের আর্থিক সাহায্যে মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য চীনা চিকিত্সা বিদ্যার ইন্সটিটিউটে পড়তে যান ।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কিনে দেওয়া একটি বিশেষ সফ্ট ওয়্যারের সাহায্যে ৩৭ বছরবয়সী অন্ধ চিকিত্সক সিয়াং তং এখন নিপুনভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারেন । ইন্টারনেটে পেশাগত তথ্য সংগ্রহ ছাড়া তিনি সংবাদ ও উপন্যাস পড়েন এবং সংগীত ডাওনলোডও করেন ।

তিনি বলেছেন , তাঁর কম্পিউটারের পর্দায় চীনা শব্দ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চারিতও হয় । তাই চীনা শব্দ স্পষ্ট দেখতে না পেলেও কিছু আসে যায় না , তার উচ্চারন শোনা মাত্র তার অর্থ বোঝা যায় ।

পেইচিং অঙ্গ সংবাহন হাসপাতালে অন্ধ চিকিত্সকদের সঙ্গে স্বাভাবিক দর্শনশক্তির অধিকারী চিকিত্সকদের সম্পর্ক অতি মধুর ।তাঁরা পরস্পরের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরস্পরকে সাহায্য করেন ।

চিকিত্সক ইয়াং ইয়াং বলেছেন , আমরা কখনো তাঁদের বিকলাংগ বলে গণ্য করি না । তাদের সঙ্গে আমাদের ব্যবহার হুবহু স্বাস্থ্যবান মানুষের সঙ্গে আমাদের ব্যবহারের মত । আমাদের স্বাভাবিক চোখ আছে , দরকার হলে আমরা তাঁদের সাহায্য করেছি , করছি এবং করব ।