পশ্চিম দিকে একটি সাধারণ দু'তলা দালান দাঁড়িয়ে আছে। দরজার সামনে একটি বোর্ড টাঙ্গানো রয়েছে। এটাই তিব্বতের উন্নয়ন সাহায্য তহবিল সংস্থার অফিস ভবন। তহবিলের উপ- মহাসচিব গাপো জিং ইউয়ান একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি। তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেনঃ
১৯৮৭ সালের এপ্রিল মাসে আমাদের তিব্বতের উন্নয়ন সাহায্য তহবিল প্রতিষ্ঠিত হয়। তহবিলের দু'জন প্রতিষ্ঠাতা। একজন ছিলেন প্রয়াত দশম পানচেনলামা আর একজন হচ্ছেন চীনের গণ রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের জাতীয় কমিটির বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান গাপো গাওয়াজিগমে ।
গাপো জিংইউয়ান বলেছেন, এই তহবিলের লক্ষ্য তিব্বতে সুষম সমাজ গড়ে তোলার কাজে ব্রতী হওয়া। এই লক্ষ্য অনুযায়ী, তিব্বতী অধ্যুষিত চীনের সকল তিব্বতী এলাকায় সরকারের নানা রকম কল্যাণ তত্পরতায় সহায়তা করার মাধ্যমে তিব্বতী জাতির জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা হবে। তহবিল প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে সংস্কৃতি ও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দারিদ্র্য বিমোচন ও দুর্যোগ প্রতিরোধ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অর্থনীতি ও পরিবেশ সুরক্ষা প্রভৃতি মোট ৬৪০টি প্রকল্প নির্মাণ খাতে সব মিলিয়ে ২০ কোটি ইউয়ানেরও বেশি অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিকে যে উজ্জ্বল প্রকল্পের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা তিব্বত সাহায্য তহবিলের কাছে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী, ফলপ্রসূ আর প্রশংসিত একটি প্রকল্প। প্রথম কয়েক বছরে বিদেশী চক্ষু বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত চিকিত্সা গ্রুপ তিব্বতে ছানি রোগীদের ছানি কাটানোর অস্ত্রোপচার করতেন। স্থানীয় চিকিত্সকরাও তাদের কাজে যোগ দিতেন।
গাপো জিংইউয়ান বলেছেন, ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত রোগীদের ছানি কাটানোর কাজ চালানোর সংগে সংগে তিব্বতের বেশ কিছু স্থানীয় চক্ষু চিকিত্সককেও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে । অনুশীলনে তাদের অস্ত্রোপচারের কৌশল উন্নত হয়েছে ।
১৯৯৭ সালে তিব্বতের চক্ষু চিকিত্সক আর বিদেশী বিশেষজ্ঞদের যৌথ উদ্যোগে তিব্বত সাহায্য তহবিলের 'উজ্জ্বল প্রকল্পঃ অন্ধত্ব দূরীকরণ' অভিযান চালু হয়েছে। তহবিলের উদ্যোগে বিদেশের তহবিল সংস্থা আর দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বড় হাসপাতাল মিলিতভাবে বহু দফায় প্রশিক্ষণ কোর্সেরও আয়োজন করেছে। কেননা ছানি কাটানো অস্ত্রোপচার অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে কৃত্রিম ক্রিস্টাল ট্রানসপ্লান্টের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। বহু বছর ধরে বাস্তব অনুশীলনে তিব্বতের এই বিশেষ প্রযুক্তি দেশের অভ্যন্তরে এগিয়ে রয়েছে। এই অভিযানে তিব্বত সাহায্য তহবিল দাতব্য সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া সাড়ে ৮ কোটি ইউয়ান চাঁদা ব্যবহার করে প্রায় ২০ হাজার লোকেরছানি কাটানোর অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
জিংইউয়ান বলেছেন, এত বেশি অন্ধ রোগী যে বিনা মূল্যে চিকিত্সা পেয়েছেন আর অন্ধত্বের কবল থেকে রেহাই পেয়েছেন, তাতে যেমন রোগীদের অসুবিধা দূর করা হয়েছে , তেমনি তাদের পরিবার আর এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ভাল ভূমিকাও পালিত হয়েছে। এটি ব্যাপক কৃষক ও পশুপালকদের প্রশংসা আর বিভিন্ন স্তরের সরকারের সমর্থন পেয়েছে।
তিব্বত সাহায্য তহবিলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সাহায্যদান প্রকল্প হলো, সন্তান লালন-পালন প্রকল্প আর পুরাকীর্তি সংরক্ষণ কার্যক্রম। তিব্বতের কৃষি ও পশুপালন অঞ্চলগুলোতে দু'শোটিরও বেশি প্রাথমিক স্কুল আর তিব্বতী ভাষার মাধ্যমিক স্কুল নির্মাণ বা মেরামত ও মজবুত করা হয়েছে এবং বিশাধিক পুরাকীর্তি সংস্কার বা সংরক্ষণ করা হয়েছে । ২০০০ সাল থেকে লেখাপড়া যাতে বন্ধ না হয়, সেজন্য শতাধিক গরীব পরিবারের বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের আর্থিক সাহায্য দেয়া হয়েছে।
গত কয়েক বছরে তিব্বত সাহায্য তহবিলের উদ্যোগে তিব্বতে বেশ কয়েকটি অনাথাশ্রম ও বৃদ্ধনিবাস গড়ে তোলা হয়েছে, গ্রামীন সড়কপথ নির্মাণ করা হয়েছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ ও ত্রাণ কাজ চালানো হয়েছে। এই সংস্থা আর দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন মহলের যৌথ উদ্যোগে দেশজুড়ে বিরাটাকারের তহবিল সংগ্রহ অভিযান চালানো হয়েছে। সংগৃহীত আয় ব্যবহার করে সীমান্তে দরিদ্র অঞ্চলের কৃষক আর পশুপালকদের জন্য সৌরশক্তি সরঞ্জাম বসানো হয়েছে।
তিব্বত সাহায্য তহবিল যেমন দেশজুড়ে তহবিল সংগ্রহ তত্পরতা চালিয়েছে, তেমনি কিছু সংখ্যক আন্তর্জাতিক মৈত্রী সংস্থা আর তহবিলের সংগে মিলিতভাবে তিব্বতে সাহায্যদান তত্পরতা চালানো হয়েছে। তবে গাপো জিংইউয়ান জোর দিয়ে বলেছেনঃ
আমাদের তহবিল বরাবরই এই নীতিতে অবিচল থাকে যে, আমরা শুধু শর্তমুক্ত সাহায্য গ্রহণ করি । বহু বছর ধরে তহবিল আর বিশ্বের বহু মৈত্রী সংস্থা, সংগঠন আর ব্যক্তিদের মধ্যে যোগাযোগ আর পারস্পরিক আস্থা স্থাপিত হয়েছে। সাহায্যদান প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে সুফল অর্জিত হয়েছে ।
গত ১৮ বছরে তিব্বত সাহায্য তহবিল মোট ২০ কোটি ইউয়ান তহবিল সংগ্রহ করেছে। এর অর্ধেক এসেছে বিদেশ থেকে। অন্য সংস্থার তুলনায় জার্মানীর মিসেরেওর তহবিল তার সংগে বেশি সহযোগিতা করেছে। মিসেরেওর তহবিল আর্থিক সাহায্য দিয়ে তিব্বতে বৃদ্ধবৃদ্ধাদের বেশ কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রের আবাসিক অবস্থা উন্নত করেছে, আলি অঞ্চলের জাদা জেলায় একটি প্রাথমিক স্কুল নির্মাণ করেছে এবং এই অঞ্চলে তুষারঝড় কবলিতদের ৩০ লাখ ইউয়ানের আর্থিক সাহায্য দান করেছে। তা ছাড়া নেদারল্যান্ডসের ফেছ্ বিশ্ব চক্ষু তহবিল, মার্কিন সেভা চক্ষু তহবিল আর সুইজারল্যান্ডের রেডক্রস সোসাইটিও তিব্বতের অন্ধত্ব দূরীকরণের অভিয়ানে অংশ নিয়েছে ।
|