চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য কার্যালয়কিছু দিন আগে চীনে লিঙ্গগত সমতা আর নারী উন্নয়নের অবস্থা নামে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে । শ্বেতপত্রটিতে বিপুল তথ্য ও বাস্তব ঘটনার মাধ্যমে গত ১০ বছরে চীনে লিঙ্গগত সমতা আর নারী উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে অর্জিত গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে ।
১৯৯৫ সালে পেইচিংয়ে জাতিসংঘের চতুর্থ বিশ্বনারী সম্মেলনে যে "পেইচিং ঘোষণা " আর " কাযক্রম কর্মসূচি " গৃহীত হয়েছে ,তাতে লিঙ্গগত সমতা আর বিভিন্ন দেশের নারীদের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্যে সুগভীর প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে । এই সম্মেলন আয়োজনের দশম বার্ষিকী উপলক্ষে চীন চীনের লিঙ্গগত সমতা আর নারীদের উন্নয়নের অবস্থা নামে যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে তার উদ্দেশ্য হল, গত দশ বছরে চীনে লিঙ্গগত সমতা আর নারী উন্নয়নের সার্বিকচিত্র তুলে ধরা ।
চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের তথ্য কার্যালয়েরএক তথ্যজ্ঞাপন সভায় চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, জাতীয় নারী ফেডারেশনের চেয়ারম্যান কুসিউলিয়েন শ্বেতপত্রটির মর্মবস্তু সম্পর্কে বলেছেন, চীন সরকার আন্তরিকভাবে এবং নিষ্ঠার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে নিজের দেয়া প্রতিশ্রুতি পালন করে , পুরুষ ও নারী সমতাকে চীনের সমাজ উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার এক মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি গ্রহন করেছে । চীন ধারাবাহিক কার্যকরব্যবস্থা নিয়ে আইনগত নীতি সুদৃঢ করা , সাংগঠনিক সংস্থা পরিপূর্ণ করে তোলা আর পরিচালনার ব্যবস্থা জোরাদার করার মাধ্যমে পুরুষ-নারী সমতা আর নারীদের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে ।এখন চীন নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে উন্নয়নমুখী দেশগুলোর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে । শিল্পোন্নত দেশগুলোর তুলনায় চীনের নিজের বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে ।
শ্বেতপত্রটিতে সর্বপ্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে যে ,চীনে নিরন্তরভাবে নারীদের অধিকার আর স্বার্থ সুরক্ষা বিষয়ক আইন ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়া হয়েছে । এ পর্যন্ত সংবিধানের ভিত্তিতে নারীদের অধিকার আর স্বার্থ সুরক্ষা আইনকে কেন্দ্র করে দেশের বিবিধ আইন ও আইনবিধি, আঞ্চলিক আইনবিধি আর সরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক নিয়মবিধি সহ নারীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষা করা আর লিঙ্গগত সমতা ত্বরান্বিত করা সংক্রান্ত একটি পূর্ণাঙ্গ আইন ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়েছে ।এর সঙ্গে সঙ্গে চীন নারীদের উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন করে নারীদের উন্নয়নকে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের গোটা পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করেছে ।
শ্বেত পত্রটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে , দেশ ও সমাজ ব্যবস্থাপনার কাজে যোগদানে চীনা নারীদের দক্ষতা অব্যাহতভাবেজোরদার হচ্ছেএবং রাজনীতিতে তাদের অংশ নেয়ার মান ক্রমাগতভাবেবাড়ছে । গণ কংগেসের ব্যবস্থা চীনের মৌলিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা । দশ বছর ধরে চীনের জাতীয় গণ কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের মধ্যে নারী প্রতিনিধির অনুপাত ২০ শতাংশে বজায় রয়েছে । তাছাড়া রাষ্ট্র স্পষ্টতই নারী ক্যাডার নির্বাচনও এদের প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ নির্ধারণকরেছে । বিপুল সংখ্যক শ্রেষ্ঠ নারী বিভিন্ন স্তরের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছেন ।বর্তমানে চীনে একজন নারী উপপ্রধানমন্ত্রী,একজন নারী রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলারএবং সবোচ্চ গণ আদালত, সবোচ্চ গণ অভিশংসন সংস্থা এবং রাষ্ট্রীয় পরিষদের অধীন মন্ত্রনালয়ের মধ্যে মোট ২৫জন নারী মন্ত্রী বা উপমন্ত্রী আছেন ।
বিগত বছরগুলোতে গ্রামীন নারীদের দারিদ্র্যবিমোচনে সাহায্য করার জন্যে চীন সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে । এই সব ব্যবস্থার মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ, বিদেশে শ্রমশক্তি রপ্তানি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত । ব্যাপকভাবে দারিদ্র্যবিমোচন আর উন্নয়ন পরিকল্পনা চালু হবার ফলে চীনে ২০০৪ সালে গ্রামীন দরিদ্র নারীর সংখ্যা ১৯৯৪ সালের ৮ কোটি থেকে কমে ২ কোটি ৬০ লক্ষ হয়েছে ।
শ্বেতপত্রটিতে বর্ণনা করা হয়েছে , চীনে কর্মসংস্থানের দিক থেকে পুরুষদের মতো নারীদের সমান অধিকার নিশ্চত করাকে লিঙ্গগত সমতা আর নারীদের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার প্রধান লক্ষ্য হিসেবে ধার্যকরা হবে এবং সংশ্লিষ্ট ধারাবাহিক কতকগুলো নীতি ও ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হবে ।এ সম্পর্কে জাতীয় গণ কংগ্রেসের স্ট্যান্ডিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, জাতীয় ফেডারেশনের চেয়ারম্যান কু সিউলিয়েন বলেছেন , মোটকথায় চীনের নারীদের কর্মসংস্থানের অনুপাত আপেক্ষিক স্থিতিশীল রয়েছে । চীনের শহর আর গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানপ্রাপ্ত নারীদের সংখ্যা ৩৩ কোটি ৭০ লক্ষে দাঁড়িয়েছে । এই সংখ্যা মোট কর্মসংস্থানের ৪৫ শতাংশ ।
শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিয়ে আর পরিবার প্রভৃতি ক্ষেত্রে পুরুষদের মতো নারীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে চীন যে ব্যবস্থা নিয়েছে শ্বেতপত্রটিতে সে সম্পর্কেও বর্ণনা করা হয়েছে । শিক্ষা ক্ষেত্রে চীন অনবরতভাবে বালিকাদের শিক্ষা গ্রহণের পরিবেশ উন্নত করেছে । ২০০৪ সালে চীনে বালকদের মতো প্রাথমিক স্কুলে বালিকাদের ভর্তি হার ৯৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে । মাধ্যমিক স্কুল আর উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের সংখ্যা ছাত্রছাত্রীদের মোট সংখ্যার ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে । স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে নারী আর শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষাখাতে সরকার নিরন্তর অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়েছে । এপর্যন্তশহর আর গ্রামাঞ্চলে ৩ হাজার নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যপরিচর্যাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে ।গত দশ বছরে চীনের প্রসূতি মৃত্যু হার ধাপেধাপে কমে ১৯৯৫ সালের ০.০৬১৯ শতাংশ থেকে ২০০৪ সালের ০.০৪৮৩ শতাংশ । বিয়ে আর পরিবারের ক্ষেত্রে ২০০১ সালে প্রকাশিত বিবাহ আইনের সংশোধিত খসড়া প্রস্তাবে পুরুষ ও নারীদের সমতা বিষয়ক মৌলিক নীতি পুনরায় ঘোষণা করা হয়েছে ।এতে স্বামী ও স্ত্রীর সমান মর্যাদাআর বিয়ে ও পরিবারের ক্ষেত্রে তাদের সমান অধিকার ও দায়িত্ব জোরের সঙ্গেউল্লেখ করা হয়েছে ।
শ্বেতপত্রটিতে উল্লেখ করা হয়েছে ,বিগত দশ বছরে নারীদের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে চীনে বিরাট অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে বটে, তবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মান প্রভৃতি উপাদানের নিয়ন্ত্রণে লিঙ্গগত সমতা আর নারীদের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে চীন অনেক নতুন সমস্যার সম্মুখীন হবে ।এর পরিপ্রেক্ষিতে চীন সরকার আরও ভাল করে পুরুষ-নারী সমতার মৌলিক রাষ্ট্রীয় নীতি পালন করবে , আইন অনুযায়ী নারীদের অধিকার ও স্বার্থেরনিশ্চয়তাবিধান করবে এবং রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক , সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারীদদের পুরুষদের সঙ্গে সমান অধিকার ও স্বার্থ ভোগ করার ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করার প্রচেষ্টা চালাবে ।
|