v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-08-31 20:11:38    
চলচিত্র পরিচালক সিয়াও ফোং

cri
    চীনে এমন একজন চলচ্চিত্র পরিচালক আছেন , যিনি ছোট বেলা থেকেই ছায়াছবি দেখতে পছন্দ করতেন , টাকা-পয়সার অভাবে নিজের আঁকা টিকিট দিয়ে সিনেমা ঘরে ঢুকে দাড়িয়ে ছবি দেখতেন । পরবর্তীকালে তিনি নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে চীনের একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হয়েছেন ,এই পরিচালকের নাম সিয়াও ফোং ।

    সিয়াও ফোংয়ের বয়স ৪৯ বছর , তিনি পূর্ব চীনের নানচিং শিল্পকলা ইন্সটিটিউটে ছবি আঁকা শিখেছেন , অধুনা তিনি চীনের একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক । ছোট বেলায় সিয়াও ফোংয়ের দুটি শখ ছিল-- ছবি আঁকা ও ছায়াছবি দেখা । কিন্তু গত শতাব্দীর ষাটের দশকে চীনের নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত ছিলনা , সিনেমা হলে গিয়ে ছায়াছবি দেখা একটি বাচ্চার পক্ষে এক বিরাট উপভোগ ছিল । ছোট বেলার কথা স্মরণ করে সিয়াও ফোং বলেছেন , ছোটবেলায় আমি ছায়াছবির বিজ্ঞাপন আঁকার কাজকে খুব ভালো কাজ মনে করতাম , কারণ আমার ধারনা ছির যে বিজ্ঞাপন আঁকার আগে চিত্রশিল্পীকে বার বার ছবি দেখতে হয় , নাহলে সুন্দরভাবে আঁকা সম্ভব নয় । এই ধরনের কাজ করলে যেমন ছবি আঁকতে পারব , তেমনি ছায়াছবি উপভোগের সুযোগ বেশী পাব । সেই সময় আমি ছবি দেখার আগে প্রথমে ছায়াছবির বিজ্ঞাপনগুলো দেখতাম এবং ছায়াছবির বিজ্ঞাপন আঁকা শিল্পীকে খুব শ্রদ্ধা করতাম । সিয়াও ফোং বলেছেন , আরো বেশী ছায়াছবি দেখার জন্য আমি সিনেমা ঘরে দর্শকদের ফেলে দেয়া টিকিট অনুসারে নিজে টিকিট আঁকার চেষ্টা করেছিলাম , বহুবার প্রচেষ্টার পর আমার আঁকা টিকিট সত্যিকার টিকিটের মতো হত , আঁকা টিকিট দিয়ে সিনেমা ঘরের কর্মীরা আমাকে ঢুকতে দিতেন , কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমাকে প্রায়ই দাড়ানো অবস্থায় ছায়াছবি দেখতে হত , কারণ সেই সময় সিনেমা ঘরে দর্শকের সংখ্যা বেশী , প্রতিটি সিটে লোক থাকত।

    সিয়াও ফোং বলেছেন , তাঁর দেখা প্রথম ছবির নাম ' কৃতদাস ' । এই ছবিতে তিব্বতের শান্তিমূলক মুক্তির আগে তিব্বতের কৃতদাসের কষ্টকর জীবন বর্ণনা করা হয়েছে , এই ছবি সিয়াও ফোংয়ের জীবনে বিরাট প্রভাব ফেলেছে । তিনি বলেছেন , ছায়াছবি ' কৃতদাস ' দেখার পর আমি রাতে ঘুমাতে পারতাম না , আমি চিন্তাও করতে পারতাম না যে তিব্বতের কৃতদাসদের প্রতি ভূস্বামীদের অত্যাচার এতো নিষ্ঠুর হতে পারে । ছবিটির শেষ অংশ দেখার সময় আমি ভয়ে চোখ খুলতে সাহস পাই নি । এই ছায়াছবি আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল , এ কথা বলা যায় যে আমার মূল্যবোধ ও আমার পরিচালিত ছবির স্টাইল ছোট বেলায় দেখা এই চলচ্চিত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত । এই ছবি আমার চিন্তাধারা ও জীবন পরিবর্তন করেছে ।

    ১৯৮০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ করে সিয়াও ফোং নানচিং ফিল্ম স্টুডিওতে দৃশ্যপটের ডিজাইনার হিসেবে যোগ দেন । তাঁর বয়স যখন ২৪ বছর , তিনি এই স্টুডিওর প্রধান দৃশ্যপটে ডিজাইনার হন , অনেকেই তার দ্রুত অগ্রগতির জন্য তাকে অভিনন্দন জানান , কিন্তু সিয়াও ফোং সন্তুষ্ট হননি , পরিচালক হওয়া তার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন । তিনি বলেছেন , আমি সাত বছর ধরে সাতটি ছায়াছবির দৃশ্যপট ডিজাইনের কাজ করেছি , চলচিত্রের দৃশ্যপটের ছবি আমি নিজে আঁকি এবং নিজে দৃশ্যপট তৈরী করি , ক্লান্তিকর হলেও আমি এই কাজ পছন্দ করি । কিন্তু আমার আসল স্বপ্ন হলো চলচ্চিত্রের পরিচালক হওয়া । ১৯৮৭ সালে আমি আর দৃশ্যপট ডিজাইনের কাজ করতে চাই নি , আগের সাতটি বছরে আমি চলচিত্র তৈরীর গোটা প্রক্রিয়া বুঝতে পেরেছি , এই সাতটি বছরে আমি পরিচালক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিয়েছি ।

    ১৯৯১ সালে সিয়াও ফোং পেইচিং চলচ্চিত্র ইন্সটিটিউটের পরিচালক বিভাগে ভর্তি হন , পড়াশুনার সঙ্গে সঙ্গে সিয়াও ফোং নাটক রচনা করেন এবং কয়েকটি সিরিজ নাটক তৈরী করেন । ' এসো , আমরা পা দিয়ে কথা বলি নামক চলচ্চিত্র হলো সিয়াও ফোংয়ের পরিচালিত প্রথম ছায়াছবি , এই ছবিতে চীনের দুজন ফুটবল খেলোয়াড়ের এশিয়ার ফুটবল প্রতিযোগিতায় জয় লাভ করে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার নিরলস প্রয়াস চালানোর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে । এই চলচ্চিত্র পরিচালনার পর সিয়াও ফোং বেশ কয়েকটি শিশু বিষয়ক ছায়াছবি তৈরী করেন , এগুলোর মধ্যে আছে ' আমি বাবার জন্য আরেকটি তারকা দিই ' , ' শিশু সুন ইয়ান সিয়েনের কাহিনী ' আর ' স্কেটবোর্ড দলের স্বপ্ন ' ইত্যাদি । তিনি চীনের শিশু চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ পুরষ্কার --' ব্রোঞ্জ গরুর' পুরষ্কার পেয়েছেন ।

    চলচ্চিত্র ছাড়া সিয়াও ফোং একাধিক সিরিজ নাটক পরিচালনা করেছেন। কিছু দিন আগে প্রচারিত সিরিজ নাটক ' বীর যুগ '-এ বর্তমান চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বন্দ্ব জীবন্তভাবে প্রতিফলিত হয়েছে , এই সিরিজ নাটকে সমাজের বিভন্ন স্তরের লোকের ধ্যান-ধারনার বৈশিষ্ট্য আর জীবন , প্রেম আর ধন-সম্পত্তি সম্বন্ধে তাদের ধারণা ও উপলব্ধি আর বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে চীনের ক্ষমতাসীন পার্টি— কমিউনিষ্ট পার্টির উদ্বেগ প্রকাশিত হয়েছে , এই সিরিজ নাটক দর্শকদের ব্যাপক প্রশংসা জয় করেছে ।

    বর্তমানে সিয়াও ফোং সিরিজ নাটক ' ওয়াং চাও চুন ' তৈরীর প্রস্তুতি নিচ্ছেন , চীনের ইতিহাসের একটি সত্য কাহিনীর ভিত্তিতে রচিত এই সিরিজ নাটক তৈরীর সঙ্গে সঙ্গে একই নামের চলচিত্র ও কার্টুন ছবি তৈরীর কাজও চলছে ।