হলিউড হলো একটি তারকা ও স্বপ্ন সৃষ্টির কারখানা। চলচিত্র শিল্পের উন্নয়ন যেমন হলিউডের বিশেষ সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে, তেমনি লস-এ্যাঞ্জেলেস শহরের জন্যে অসাধারণ সাংস্কৃতিক আবহ সৃষ্টি করেছে।
হলিউড যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গারাজ্যের লস-এ্যাঞ্জেলেস শহরে অবস্থিত। হলিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রতীক হলো নয়টি বড় বড় ইংরেজী অক্ষর "HOLLYWOOD" কাহুএনগা পাহাড়ের গায়ে তা শোভিত। এই প্রতীক ১৯২৩ সালে প্রণীত হয়, এর প্রতি অক্ষর প্রায় ৫০ ফিট উচু। আসলে আগে ১৩টি অক্ষর ছিলো, তা রিয়্যাল এস্টেট কম্পানির হলিউডল্যান্ডের জন্য একটি বিজ্ঞাপন ছিলো। পরে পেছনের "ল্যান্ড" শব্দটি বাদ দেয়া হয়েছে এবং তা জনপ্রিয় হোলিউডের প্রতীকে পরিণত হয়। এখানকার বিখ্যাত স্থল রয়েছে "হলিউড বোউল", অর্থাত একটি গোলাকারের প্রেক্ষাগৃহ, পিলগ্রিম গোল প্রেক্ষাগৃহ, গ্রীস থিয়েটার, চীনা থিয়েটার, কালিফোনিয়ার আর্ট ক্লাব ইত্যাদি। এর নিকটবর্তী অঞ্চলে বেভারল হিল আছে, প্রচুর চিত্র-তারকা স্টার এখানে বসবাস করেন।
১৯০৮ সালে পেটেন্ট ও ছবি উত্পাদন অঙ্গীভূত করার জন্যে মার্কিন বিভিন্ন চলচ্চিত্র কম্পানি যৌথভাবে চলচ্চিত্রের পেটেন্ট কম্পানি গঠন করে, তাতে চলচিত্রের ব্যবসা ক্ষেত্রে মূনাফা দেখা দেয়। কিন্তু কিছু স্বনির্ভর ছবি-নির্মাতা পেটেন্ট কম্পানির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হতে চায়। তারা আলাদা আলাদাভাবে নিউ ইয়র্ক, শিকাগো ইত্যাদি চলচ্চিত্র ঘাঁটি থেকে লস-এ্যাঞ্জেলেসে স্থানান্তরিত হয়। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব ভাল বলে পেটেন্ট কম্পানিও এখানে স্থানান্তরিত হয়েছে। আস্তে আস্তে তা যুক্তরাষ্ট্রের সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র কেন্দ্র গড়ে ওঠে একানে।গত শতকের ২০'এর দশকে হলিউড যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র উত্পাদন ও প্রচারের ঘাঁটি বলে স্বীকৃত হয়। ১৯০৮ সালে প্রচারিত "কাউন্ট অফ মাউন্ট ক্রিস্টো" হলো হলিউডের প্রথম কিস্তির ছবিগুলোর অন্যতম। ১৯১২ সাল থেকে পৃথক পৃথকভাবে বিভিন্ন চলচ্চিত্র তৈরী কম্পানি গঠিত হয়। ১৯২৮ সালে প্যারামাউন্ট-সহ আটটি বৃহত্তম চলচ্চিত্র কম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩০ আর ৪০'এর দশক হলো হলিউডের সর্বোচ্চ সমৃদ্ধির সময়পর্ব। এ সময়ে হোলিউড চলচ্চিত্র ইতিহাসের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ছবি তৈরী করা হয়। সে সময় হোলিউড ফিল্মের প্রভাব বিশ্বব্যাপী ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে "The dictator", "Gone with the wind", "Waterloo bridge", "Rebecca", "Citizen Kane" আর "Casablanca" ইত্যাদি বিশ্বের চলচ্চিত্র ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে হলিউড যুক্তরাষ্ট্রের একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উন্নত হয়। প্রচুর লেখক, সংগীতকার, কারকা এখানেই জন্মগ্রহণ করেনে।
৬০'এর দশকের শুরুতে হলিউড মার্কিন টিভি অনুষ্ঠানের প্রধান উত্পাদন ঘাঁটিতে পরিণত হয়।
এখন হলিউডকে আর বিশ্বের চলচ্চিত্রের কেন্দ্র বলা যায় না। কারণ অধিকংশ চলচিত্র বিশ্বের বিভিন্ন শহর, গ্রাম ও যে কোনো যথাযোগ্য অঞ্চলে শুটিং হয়। হোলিউডের স্টিউডিও আগের মতো দাঁড়ি আছে কিন্তু অধিকাংশ টিভি স্ট্যাশনকে ভাড়া দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ৮০ শতাংশ ধারাবাহিক টিভি নাটক হলিউডে শুটিং হয়। তার আকর্ষণীয় মোহিনী শক্তি সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়নি।
হলিউড ফিল্মের বিষয় ব্যাপক। স্টাইল ভিন্ন, তা জন সাধারণের কাছে গ্রহন পেয়েছে। তাছাড়া, মার্কিন ছবি কারিগরী ক্ষেত্রেও অব্যহতভাবে উন্নত হচ্ছে। তা বিশ্বের চলচ্চিত্র কর্তব্যে অবদান রেখেছে।
|