v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-08-30 12:58:46    
বৃদ্ধবৃদ্ধাদের প্রতিপালনে সরকারের আর্থিক সাহায্য

cri
    জনসংখ্যার উপর চীনের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমান প্রতি দশ জন চীনার মধ্যে একজনের বয়স ষাট বছরেরও বেশী । বৃদ্ধবৃদ্ধাদের প্রতিপালন একটি কঠিন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত তিন চার বছরে চীন সরকার বৃদ্ধবৃদ্ধাদের প্রতিপালনের যে নতুন পদ্ধতির সন্ধান পেয়েছে তার সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে আজকের সমাজ দর্পন আসরে ।

    এই নতুন পদ্ধতি অনুযায়ী বিভিন্ন স্তরের গণ সরকার বিশেষ অর্থ বরাদ্দ করে পরিচারিকাদের প্রশিক্ষণ দেয় । তারপর একা জীবনযাপন করা যাদের পক্ষে অসাধ্য ,এমন বৃদ্ধবৃদ্ধাদের বাড়িতে তাঁদের পাঠানো হবে । তাঁরা বৃদ্ধবৃদ্ধাদের জন্য ঘরকন্না করেন এবং আনন্দপূর্ণ পরিবেশে জীবনযাত্রার শেষ সময়টুকু কাটাতে তাঁদের সাহায্য করেন ।

    ৭৯ বছর বয়সী মি: থান চিয়ান চৌ ও তাঁর সঙ্গিনী থাকেন উত্তর পুর্ব চীনের মনোরম সৈকত শহর তালিয়ানে । এই শহরে বিশ তিরিশটি বর্ষীয়ান কল্যাণ কেন্দ্র আছে । কিন্তু মি: থান চিয়ান চৌ ও তাঁর স্ত্রী নিজেদের বাড়িতে বার্ধক্য জীবন যাপন করতে পছন্দ করেন । তিনি মনে করেন , নিজের বাড়িতে তিনি যা খুশি তাই করতে পারেন ।

    তিনি বলেছেন , নিজের বাড়ি থেকে আমি যখন তখন বেরিয়ে যেতে আর ফিরে আসতে পারি । ইচছামত খেতে, বিশ্রাম করতে , টিভি দেখতে এবং বেতার  অনুষ্ঠান শুনতে পারি । বর্ষীয়ান কল্যাণ কেন্দ্রে একটি বড় পর্দার টিভি সেট আছে ,ঠিকই , কিন্তু আমাকে একলা টিভি অনুষ্ঠান দেখতে দেয়া যায় না কখনো । আমি বল খেলা দেখতে পছন্দ করি , মধ্যরাতে ম্যাচ সম্প্রচার হলেও, বিছানা থেকে উঠে তা দেখি । কিন্তু বর্ষীয়ান কল্যাণ কেন্দ্রে কোনো মতে মধ্যরাতে টিভি অনুষ্ঠান দেখা যায় না ।

    মি থান বলেছেন , তিনি ও তাঁর স্ত্রী কয়েক দশক ধরে এই আবাসিক এলাকায় বাস করেছেন , পাড়াপড়শীদের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক অতি নিবিড় , বাড়ি থেকে বের হয়ে কারো দেখা পেলে কুশল বিনিময় হয় ।কিন্তু যারা বর্ষীয়ান কল্যাণ কেন্দ্রে থাকেন তাঁরা এসেছেন নানা জায়গা থেকে । তাঁদের প্রকৃতি ও শখ এক নয় । সবার সঙ্গে বনিবনা হওয়া সহজ নয় । তিনি মাংসের বদলে শাকসবজি আর মোটা খাদ্য খেতে পছন্দ করেন । বাড়িতে রোজ তাঁর পছন্দসই খাবার রান্না করা হয় ।কিন্তু বর্ষীয়ান কল্যাণ কেন্দ্রে তাঁর পছন্দসই খাবার সবসময় পাওয়া যায় না ।

    মি: থান বাড়িতে যেভাবে দিন কাটাচ্ছেন তা চীনা বৃদ্ধবৃদ্ধাদের চিরাচরিত জীবন পদ্ধতি থেকে আলাদা । সাধারনত: চীনাদের পরিবারে বৃদ্ধবৃদ্ধাদের যত্ন নেয় তাদের ছেলেমেয়ে, নাতিনাতনি । কিন্তু মি: থান বলেছেন ,ছেলেমেয়ে রোজ তাদের দেশাশোনা করলে তাদের নিজদের স্বাভাবিক জীবন ও কাজকর্ম ব্যাহত হয় , সেইটে তিনি চান না । সুতরাং তিনি একজন পরিচারিকা রাখলেন । এই পরিচারিকা তাঁর জন্য ঘরকন্না করেন এবং তাঁর অসুস্থ স্ত্রীকে দেখেন । অবশ্য প্রতিমাসে পারিশ্রমিক হিসেবে চারশো ইউয়ান দিতে হয় ।

    চীনের তালিয়ান শহরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী মি: থানের মত সত্তর বছরোর্ধ বৃদ্ধবৃদ্ধা পরিচারিকা রাখলে প্রতিমাসে সরকারের কাছ থেকে একশো ইউয়ান ভর্তুকি পেতে পারেন ।

    তালিয়ান শহরের চেয়ে চীনের নিংপো , কুয়াংচৌ প্রভৃতি শহরের গণসরকার বৃদ্ধবৃদ্ধাদের আরো বেশী সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে । বহু সংখ্যক অত্যধিক বর্ষীয়ান , জীবনসঙ্গিহীন ও অসহায় বৃদ্ধবৃদ্ধাদের পরিসেবার যাবতীয় খরচ সরকার বহন করছে ।

    কুয়াংচৌ শহরে বসবাসকারী বৃদ্ধা থাং হুই ফাংয়ের বয়স নববই বছরেরও বেশী । তাঁর ছেলেমেয়ে নেই , বছরখানেক আগে তাঁর স্বামীও মারা গেছেন । থাং হুই ফাংয়ের স্বাস্থ্য এখনো ভালো বলা যায় , হাঁটতে পারেন , নিজে খেতেও পারেন ,কিন্তু চাউল ,শাকসবজি কেনা , ঘর পরিস্কার ইত্যাদি ঘরকন্না করার মত জোর তাঁর নেই । সম্প্রতি স্থানীয় সরকার টাকা খরচ করে তাঁর জন্য লিয়াং খুন ইয়ান নামে একজন পরিচারিকা নিয়োগ করেছে ।

    সম্প্রতি থাং হুই ফাংয়ের বাড়িতে সি আর আইয়ের সংববাদদাতা লিয়াং খুন ইয়ানের দেখা পেয়েছেন । তিনি বলেছেন , ঘর পরিস্কার ছাড়া তিনি মাঝে মাঝে রোগ চিকিত্সা করানোর জন্য থাং হুই ফাংকে হাসপাতালে নিয়ে যান ।

    লিয়াং খুন ইয়ানের সাহায্য পেয়ে বৃদ্ধা থাং হুই ফাংয়ের জীবনে আর কোনো অসুবিধা নেই , কাজেই তিনি খুবই সন্তুষ্ট।

    তিনি বলেছেন ,এখন আমি নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছি । আমার বয়স নববই হয়েছে ।আমার কোনো আপন জন নেই । কিন্তু পাড়াপড়শীরা আমার যত্ন নেন ,তাঁদের ব্যবহার খুবই ভালো । এখন সরকার আমার জন্য আবার পরিচারিকাও পাঠিয়েছে। তিনি রোজ এসে গৃহস্থালীর কাজ করেন । তাই এখন আমার আর কোনো দুশ্চিন্তা নেই ।

    ৩৯ বছর বয়সী পরিচারিকা লিয়াং খুন ইয়ান অতীতে একটি রেঁস্তোরায় চাকরি করতেন । কিন্তু গত বছর তিনি বেকার হয়েছেন । এখন তিনি বৃদ্ধা থাং হুই ফাংয়ের যে সেবা করছেন তা তাঁর নতুন চাকরি বলে ধরে নিয়েছেন।

    তিনি বলেছেন , আমি এই বছরের জানুয়ারী মাস থেকে বৃদ্ধা থাং হুই ফাংয়ের আয়া হয়েছি। তাঁর বাড়িতে কাজ করার আগে আমি কুয়াং চৌ শহরের পৌরসভার আয়োজিত প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রশিক্ষণ নিয়েছি । প্রশিক্ষণ কোর্সে আমি বুড়ো বুড়ীর সচরাচর ব্যাধি চিকিত্সার প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেছি যাতে বুড়ো বুড়ীদের যথাযথভাবে সেবা করতে পারি ।

    বৃদ্ধা থাং হুই ফাংকে দেখাশোনা করার জন্য মাদাম লিয়াং খুন ইয়ান প্রতিমাসে স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন বিভাগ থেকে বেতন পাচ্ছেন । এতে তাঁর পরিবারের অর্থকষ্ট অনেকটা কমেছে ।

    তদন্ত চালিয়ে জানা গেছে , বর্ষীয়ান কল্যান কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার বদলে বুড়োবুড়ীদের নিজের নিজের বাড়িতে প্রতিপালন করে অনেক টাকা বাঁচানো যায় ।দক্ষিণ পূর্ব চীনের জে চিয়াং প্রদেশের নিংপো শহরের কথা ধরা যাক । বর্ষীয়ান কল্যান কেন্দ্রের প্রতিটি শয্যার জন্য সরকারের তরফ থেকে ভর্তুকী দিতে হয় আড়াই শো থেকে পাঁচ শো ইউয়ান । কিন্তু অসহায় বুড়োবুড়ির সেবায় নিয়োজিত একজন পরিচারিকাকে মাসে বেতন দেওয়া হয় মাত্র ১৬৫ ইউয়ান ।

    চীনের বেসামরিক প্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সমাজ কল্যাণ বিভাগের উপপরিচালক ইয়ান ছিন ছুন এই প্রসঙ্গে বলেছেন:চীনের বৃদ্ধবৃদ্ধাদের সংখ্যা দশ কোটি ছাড়িয়ে গেছে । তাঁদের সবার জন্য বর্ষীয়ান কল্যান কেন্দ্র খোলা আপাতত সম্ভব নয় । কারণ চীন এখন অত ধনাঢ্য নয় । সরকারের আর্থিক সাহায্যে বাড়িতে বাড়িতে তাঁদের প্রতিপালন করা বর্তমান পর্যায়ে চীনের বাস্তব অবস্থার সঙ্গে খাপ খাওয়া একটি শ্রেষ্ঠ বাছাই ।