বিজ্ঞান মহলে একটি প্রবলিত ধারণা আছে যে, ৬ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগে মেক্সিকোর ইয়ুকাট উপদ্বীপে একটি বৃহত্ এরোলাইট পড়েছে বলে ডাইনাসো বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু মার্কিন প্রিন্সটোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেলার সম্প্রতি বলেছেন, ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ থেকে প্রমাণিত হয় এরোলাইটের এবারকার আঘাত ও ডাইনাসো বিলুপ্তির সময় একই নয়।
সম্প্রতি নিউ ওর্লিনসে আয়োজিত মার্কিন ভূপদার্থ সোসাইটির একটি সভায় কেলার বলেছেন, মহাশূণ্য থেকে আসা নক্ষত্রের আঘাত ডাইনাসো বিলুপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। কিন্তু যে মোক্ষম আঘাত ডাইনাসোর উপর পড়েছে, তা মেক্সিকোর "ছিকসুলুব ক্র্যাটার" সেই আঘাত নয়, বরং সম্ভবতঃ একটি অজানা আঘাতের ঘটনা।
মেক্সিকোর ইয়ুকাট উপদ্বীপের "ছিকসুলুব ক্র্যাটার" ক্ষুদে গ্রহের মতো পৃথিবীর উপর একটি নক্ষত্রের ধাক্কা দেয়ার ধ্বংসাবশেষ বলে বিবেচ্য হতো। দশ বারো বছর ধরে বিজ্ঞানীরা মনে করে আসছেন যে, এই ধ্বংসাবশেষ "মহাশূন্য থেকে আসা নক্ষত্রের ধাক্কায় ডাইনোসো বিলুপ্তির" ধারণার অকাজ্য প্রমাণ। আগের গবেষণা থেকে দেখা গেছে, "ছিকসুলুব ক্র্যাটারের" আঘাত প্রায় ৬ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগেকার ক্রিটেইশাস যুগ ও টেরিয়ারি যুগের সংযোগকারী সময় পর্বে ঘটে, তা ডাইনাসোর বিলুপ্তি সময়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এ থেকে বৈজ্ঞানিকরা অনুমান করেছেন যে, সেই আঘাতের প্রভাবে ডাইনাসো-সহ পৃথিবীর বহু রকম জীবজন্তু বিলুপ্ত হয়।
২০০৪ সালে, অধ্যাপক কেলার-সহ কিছু বিজ্ঞানী গ্রুপ "ছিকসুলুব ক্র্যাটার" মধ্য অংশের ভূগর্ভের নিচের ১৫০০ মিটার গভীর স্থল থেকে নমুনা নিয়ে বিশ্লেষণ করার পর আবিষ্কার করেছেন যে, এই ক্র্যাটার ক্রিটেইশাস যুগ ও টেরিয়ারি যুগের সংযোগকারী সময়পর্বের ৩ লক্ষ বছর আগে উদ্ভূত হয়। এই আবিষ্কার "ছিকসুলুব তত্ত্বের"উপর একটি আঘাত সরূপ। কিন্তু কেলার প্রমূখের নেয়া নমুনা ধাক্কা সংঘটিত হওয়ার সময় সঠিকভাবে প্রতিফলিত করতে পারে কিনা সেই সম্বন্ধে কিছু বৈজ্ঞানিক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
এই বিতর্কের অবসান ঘটানোর জন্য গত মার্চ মাসে কেলার প্রমূখ যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস রাজ্যের ব্রাজোস ভ্যালির রোথবার্ড নগরের ভূগর্ভের ৫০ মিটার নিচে তিনটি মাটির নমুনা নিয়ে নিয়েছে, যাতে পৃথিবীর জীবজন্তুর ব্যাপকতম অবলুপ্তি সময়ে পর্বের তলানির নমুনা উদ্ধার করা যায়। ব্রাজোস ভ্যালি অঞ্চল "ছিকসুলুব ক্র্যাটারের" উদ্ভব ঘটানোর যেবারকার নক্ষত্রের আঘাতের প্রভাব নিয়ে গবেষণার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ স্থান বলে বিবেচিত হতে পারে।
দু'মিটার লম্বা একটি নমুনা থেকে কেলার "ছিকসুলুব ক্র্যাটারের" উদ্ভব ঘটানোর যেবারকার নক্ষত্রের আঘাতের দরুণ ছিটানো যে গ্রাসের তলানি আবিষ্কার করেছেন, তা ভূতাত্ত্বিক যুগের দিক থেকে ব্যাপকতম অবলুপ্তি জীবের ফোসিলের সঙ্গে ৩ লক্ষ বছরের ব্যবধান আছে। এতে কেলার আবার "ছিকসুলুব তত্ত্ব"সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। নমুনার মধ্যে দুই সেন্টিমিটার গভীর এক স্তরের বেনটানাইট আছে, তা এক রকম প্রাকৃতিক গ্রাস যার কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটেছে। তা হলো "ছিকসুলুব ক্র্যাটারের"উদ্ভব ঘটানোর নক্ষত্রের আঘাতের দরুণ ছিটানো পদার্থ। বেনটানাইটের উপর আছে ৫০সেন্টিমিটার গভীর এক স্তরের আঘাতের দরুণ উদ্ভূত সুনামির তলানি। এই দু'রকম তলানির উপর আছে ১.২মিটার গভীর টুকরা পথরের স্তর, তা ছিল ব্যাপকতম অবলুপ্তির সময়ে পর্বের ক্ষুদে জীব ও উদ্ভিদের ফোসিল।
কেলার বলেছেন, তাঁর নতুন আবিষ্কার "ছিকসুলুব তত্ত্বের" জন্যে একটি মারাত্মক আঘাত। বৈজ্ঞানিকদের উচিত সত্যিকারভাবে ব্যাপকতম অবলুপ্তি ঘটানোর নক্ষত্রের আঘাতের দরুণ উদ্ভূত ক্র্যাটারের পাশে গবেষণা করা।
কেলার মনে করেন যে, ডাইনাসোসহ অনুরুপ সময়ের অন্য জীবজন্তুর অবলুপ্তি খুব সম্ভবত বহু রকম উপাদানের বহুমুখী ভূমিকার ফল শ্রুতি। যেমন ক্রিটেইশাস যুগ ও টেরিয়ারি যুগের সংযোগকারী সময়পর্বের আরো আগেকার সময়পর্বে পৃথিবীতে আগ্নেয়গিরির তত্পরতা খুব সক্রিয় ছিলো এবং পৃথিবীর আবহাওয়া অধিকতর গরম হয়ে উঠেছে বলে ইগোসিস্টামের উপর প্রচন্ড চাপ পড়েছে। ক্রিটেইশাস যুগ ও টেরিয়ারি যুগের সংযোগকারী সময়পর্বে মহাশূন্য থেকে আসা নক্ষত্রের আঘাত আগ্নেয়গিরির তত্পরতা মিলে ডাইনাসোর উপর মারাত্মক আঘাত হেনেছে। কিন্তু এই সর্বশেষ আঘাত সম্ভবত "ছিকসুলুব ক্র্যাটারের "উদ্ভব ঘটানোর সেই আগেকার নক্ষত্রের আঘাত নয়, বরং ক্রিটেইশাস যুগ ও টেরিয়ারি যুগের সংযোগকারী সময়পর্বেঅন্য জায়গায় সংঘটিত অপ্রমাণিত নক্ষত্রের আঘাতের ঘটনা।
ছবি দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক কুরুন
|