তিব্বতের পূর্বাংশের লিনচি অঞ্চলের কুংপুচিয়াংদা জেলায় ছৌ কাও হু নামে একটি মালভূমির হ্রদ আছে । হ্রদে লীল পানি , হ্রদের তীরে পাইন গাছ সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে । তুষার পাহাড়ের পটভূমিতে এখানকার পরিবেশ আরো মনোরম হয়ে উঠেছে । বহু বিদেশী পর্যটকদের চোখে তিব্বতের ছোট সুইজারল্যান্ড বলে পরিচিত এই অঞ্চলে গত দু'বছর ধরে আরেকটি নতুন দৃশ্য সৃষ্টি হয়েছে । এটাই কুংপুচিয়াংদা অধিবাসীদের নতুন আবাসিক এলাকা । আজ এই অনুষ্ঠানে এ সম্বন্ধে আপনাদের কিছু বলছি আমি…
ছৌকাও হ্রদের দিকে যাওয়ার পথে সংবাদদাতাদের গাড়ি স্থিতিশীলভাবে সিছুয়াং -তিব্বত রাজপথে চলছিলো । রাজপথের এক পাশে নিইয়াং নদীর খরস্রোত , অন্য পাশে খাড়া আর সবুজ গাছপালায় ঘেরা পর্বত । পর্বতের উপত্যকার চওড়া অঞ্চলে রাজপথের দু'পাশে পরিপাটি আর নতুন তিব্বতী দু'তলা দালান সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে । নীল আর লাল রঙের ছাদ আরো সৌন্দর্যময় হয়ে উঠেছে । এটাই গত দু'বছরে কুংপুচিয়াংদা জেলার কৃষক আর পশুপালকদের নতুন নির্মিত আবাসিক এলাকা ।
গালা গ্রামে প্রবেশ করলে প্রথম সংবাদাতার চোখে পড়ল গ্রামের নিকটবর্তী সড়কের দু'পাশে পরিপাটি নতুন বাড়িঘর সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে । প্রতিটি বাসার একটি প্রাঙ্গন আছে । দু' বাসার মধ্যে স্তুপীকৃত কাঠ দিয়ে সারিবদ্ধভাবে পৃথক করা হয় । একজন তিব্বতী বৃদ্ধা দূরের দিকে তাকিয়ে উপাসনা করছিলেন আর যেন কি ভাবছিলেন । এক দল লোক একটি বাসার প্রাঙ্গনের সামনে বসে কথাবার্তা বললেন । ওখান থেকে আনন্দের হাসির আওয়াজ সময় সময় শোনা যাচ্ছিল । কয়েক ছেলে আনন্দের সংগে খেলছিলো , মাঝে মাঝে কয়েকটি চিত্কার শোনা যাচ্ছিলো । কয়েকটি গৃহপালিত পশু সড়কের পাশে নিশ্চিন্তে বিচরণ করছিলো । তারা চলমান গাড়ি দেখেও পথ সরালো না । তাদের স্নেহ করার জন্য চালকরা সযত্নে তাদের কাছ থেকে সরিয়েছেন । একটি ছোট কুকুর সংবাদদাতাকে কিছু ভয় পায় নি । সে নির্ভীকভাবে দূর থেকে সংবাদদাতার সামনে দৌঁড়ে এসেছিলো ।
গালা গ্রামের প্রধান তুপুজে অন্তরঙ্গভাবে সংবাদদাতাকে স্বাগত জানালেন । তিনি সংবাদদাতাকে বলেছেন , আগে গ্রামবাসীদের বাড়িঘর নিইয়াং নদির তীরে নির্মাণ করা হতো । তখন গ্রামে কোনো সড়ক ছিলো না । বর্ষাকালে গ্রামে সর্বত্রই পিছল ছিলো । গ্রামবাসীরা চিন্তিত হতেন যে , নদীতে বন্যা হলে বাড়িঘর ডুবে যাবে কি না । ২০০৩ সালে কুংপুচিয়াংদা জেলায় কৃষক আর পশুপালকদের বাড়িঘর পুনর্গঠনের একটি কার্যক্রম চালু হয়েছে । সরকারের সাহায্যে এখন গ্রামবাসীদের বাড়িঘর একটি উঁচু জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছে । তুপুজে বলেছেন ,
আগে আমাদের গ্রামে আবাসের অবস্থা অত্যন্ত মন্দ ছিলো । মানুষ ও গৃহপালিত পশু মিশিয়ে থাকতো । বাসায় খুব নোংরা ছিলো । এখন আমরা নতুন বাসায় থাকি । গৃহপালিত পশুরা বাসার পেছনের প্রাঙ্গনে পালিত আছে । বাসায় বাথরুমও আছে , অনেক পরিস্কার হয়েছে ।
কুংপুচিয়াংদা জেলার কৃষক ও পশুপালকদের বাড়িঘর পুনর্গঠনের কাজ বিষয়ক কর্মকর্তা নিউ ইয়্যুন সেন বলেছেন ,
কুংপুচিয়াংদা জেলায় এখন ৪ হাজার ৪ শো কৃষক আর পশুপালক পরিবার আছে । বেশির ভাগ জনতা কৃষি আর পশুপালন এলাকায় বাস করেন । তাদের বাসের আচার আচরণ অপেক্ষাকৃত অনুন্নত । বাসার দু'তলায় মানুষ থাকেন , নীচ দিকে গবাদি পশু থাকে । পরিবেশ খুব নোংরা । এই ধরণের থাকার পদ্ধতি যেমন অসভ্য , তেমনি তা মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতিকূল । ২০০৩ সালে চীনের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে আগত তৃতীয় তৃতীয় কিস্তির তিব্বত সাহায্যদানকারী ক্যাডাররা কুংপুচিয়াংদা জেলায় এসেছেন । তারা আমাদের জন্য যেমন পূঁজি , তেমনি উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নত মানের জ্ঞান আর প্রকৌশল নিয়ে এসেছেন । তারা কৃষক আর পশুপালকদের বাড়িঘর পুনর্গঠনের কর্মসূচী উপস্থাপন করেছেন ।
গ্রামবাসী উচিছুমোর বাসায় , তার দু' নাতী একদিকে খেলল , অন্য দিকে স্থানীয় প্রিয় ছড়া গাইলো । প্রাঙ্গনে একটি বড় ট্রাক আর একটি হস্ত-চালিত ট্রাক ছিলো । কয়েকটি মুরগীর বাচ্চা মাঠে খাবার অন্বেষণ করতে করতে খাচ্ছিল । স্বাগতিক সংবাদদাতাকে বলেছেন , আগে পারিবারিক জীবনযাপন যেভাবে চলতো , তা তার স্বামীর বনৌষধি সংগ্রহের উপর নির্ভর করতো । তা ছাড়া তার আত্মীয় স্বজন আর সরকারের আর্থিক সাহায্যও লাগতো । ২০০৩ সালে সরকার ও অভ্যন্তরস্থলের তিব্বত সাহায্যদানকারী সংস্থার অনুদান আর ব্যাংকের ঋণদান ও আত্মীয় স্বজনের আর্থিক সাহায্যের ভিত্তিতে তার ১২টি কক্ষ বিশিষ্ট দু'তলা দালান নির্মিত হয়েছে ।
উচিছুমো বলেছেন , আমরা নতুন বাসায় থাকার জন্য খুব খুশি হয়েছি । আগের বাসা যেমন পুরানো তেমনি রোংরা । এখন আমাদের বাসা খুব পরিস্কার- পরিচ্ছন্ন , বাথরুমও আছে । জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য আমরা আরো বেশি আয় করতে চেষ্টা করবো ।
উচিছুমোর বয়স ৪৭ বছর , তিনি দিদি হয়েছেন । নতুন বাসায় থাকার পর যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে । এই প্রাধান্য কাজে লাগিয়ে তারা আয় করার বহু কাজ করেছেন । তার তিন ছেলে লাসায় চাকরি করছে । স্বামী বনৌষধি সংগ্রহ ছাড়া মাল পরিবহনের কাজও করেন । পরিবারের বার্ষিক আয় ২০ থেকে ৩০ হাজার ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে ।
উচিছুমো সংবাদদাতাকে তার বাসার দু'তলার শয়ণকক্ষ , বৈঠকখানা , খাবার কক্ষ আর নীচ তলার নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য ও খুঁটিনাটি জিনিষপত্র রাখা কক্ষ দেখিয়েছেন । তিনি বলেছেন , ভবিষ্যতে তিনি আরো বেশি আয় করবেন বলে আশা করেন ।
কুংপুচিয়াংদা জেলার কৃষক ও পশুপালকদের বাড়িঘর পুনর্গঠন বিষয়ক কর্মকর্তা নিউ ইয়্যুন সেন বলেছেন , জেলায় উচিছুমোর পরিবারের মতো নতুন বাসায় স্থানান্তরিত হবার কৃষক ও পশুপালক পরিবারের সংখ্যা এক হাজার দু'শোতে দাঁড়িয়েছে । এই ক্ষেত্রে সরকারের অর্থ বরাদ্দ ৮ কোটি ইউয়ানে পৌঁছেছে । কুংপুচিয়াংদা জেলা তিব্বতে কৃষক ও পশুপালকদের বাড়িঘর পুনর্গঠনের আদর্শ জেলায় পরিনত হয়েছে । তাদের লক্ষ্য অনুযায়ী , আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এই জেলায় বাকী ৩২০০টি কৃষক ও পশুপালক পরিবারও নতুন বাসায় স্থানান্তরিত হবে ।
|