v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-08-25 16:57:12    
চাও শিয়েন

cri
    উত্তর চীনের হোপেই প্রদেশের দক্ষিণ অংশে চাও শিয়েন নামে একটি ছোট শহর আছে। এই ছোট শহরের ইতিহাস ২৫০০ বছরেরও বেশী। এমন সুদীর্ঘ ইতিহাসসম্পন্ন শহর বর্তমানে চীনে খুব কম দেখা যায়। এই ছোট শহরে দুটো মূল্যবান জিনিস আছে। একটি হল ১৪০০ বছরেরও বেশী বয়সের চাওযৌ সেতু, আরেকটি হল দেশজুড়ে বিখ্যাত সহস্রাধিক পোলিণ মন্দির। এ দুটো মূল্যবান জিনিস এই ছোট শহরে অবস্থিত বলে চাও শিয়েন অত্যন্ত নাম-করা।এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, দীর্ঘ দিন ধরে চাওযৌ সেতু চীনের মাধ্যমিক স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে অন্তভূর্ক্ত। চাওযৌ সেতু চাও শিয়েন অথার্ত চাও জেলার দক্ষিণাংশে অবস্থিত। পৃথিবীতে বিদ্যমান সেতুগুলোর মধ্যে চাওযৌ সেতুর ইতিহাস সবচেয়ে প্রাচীন, সংরক্ষণের দিক থেকে ও এই সেতু সবচেয়ে অক্ষত।চাওযৌ সেতু সম্পূর্ণভাবে পাথরের তৈরী। স্থানীয় লোক তাকে "বড় পাথর সেতু" বলে ডাকে।বিগত এক হাজার চার শোরও বেশী বছরে চাওযৌ সেতু ১০টি বন্যা , ৮টি যুদ্ধ এবং বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প অতিক্রম করে এসেছে। কিন্তু এই সেতু বিধ্বস্ত হয়নি। চাওযৌ সেতু একটি পাথরের তৈরী ধনুকাকৃতি সেতু। বিশ্ব সেতু নির্মানের ইতিহাসে এ ধরনের নকশা নজিরবিহীন । ১৮ শতাব্দীতে ইউরোপে এ ধরনের সেতু দেখা যায়। ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, চীনের প্রাচীন কালের বিখ্যাত মিস্ত্রি লি ছুনের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক মিস্ত্রির মিলিত প্রচেষ্টায় চাওযৌ সেতু নির্মিত হয়।কিন্তু অনেক লোক মনে করেন, এই সেতু এত মজবুত হয়েছে যে কেবল তাদের সামর্থ্যে নির্মান করা কঠিন। কিংবদন্তীতে বলা হয় চাওযৌ সেতু চীনের স্থাপত্য শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা লুবানের কর্মকান্ড।গাইড উ পিন শিয়া সংবাদদাতাকে বলেন, এই কিংবদন্তী অনুযায়ী, লুবান মাত্র এক রাত্রে চাওযৌ সেতু নিমার্নের কাজ সম্পন্ন করেন। দেবতা এই খবর পাওয়ার পর এই সেতুর ভার বহনের ক্ষমতা যাচাই করতে চান। দেবতা তাঁর একজন দূতকে পৃথিবীতে পাঠান। যখন এই দূত তাঁর এক চাকা গাড়ী চালিয়ে সেতুর উপর অতিক্রম করেন

তখন অজানতে মাটিতে পড়ে যান। গাইড বলেন,

    " এখানে গাড়ীর চাকা চাপানোর একটি দাগ আছে। দেবতার এই দূতের এক চাকা গাড়ীতে ৫টি পাহাড় বোঝাই করা হত। তাঁর গাড়ী সেতুর উপর পার হওয়ার সময় এই দাগ পড়ে। এই গোল গর্ত হাঁটুর চিহ্ন।কারন এই দূতের গাড়ী এক চাকার। উনি অজানতে এখানে নতজানু হওয়ার পর তাঁর হাঁটুর ছাপ পড়ে। "

    এই সেতুর উপর আমরা সত্যই কিংবদন্তীতে বর্ণিত চাকার দাগ এবং হাঁটুর চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। অবশ্যই আমরা ভালভাবে জানি এটা মোটেই দেবতার রেখে-যাওয়া কোনোচিহ্ন নয়। কিংবতন্দীতে বর্ণিত চাকার দাগ দেখার পর, আপনি এই পাথরের তৈরী সেতুতে নানা ধরনের ভাষ্কর্য দেখতে পারেন। এ সব ভাষ্কর্যে যে প্রাণীগুলোখোদাই করা হয় তারা প্রাণরসে পরিপূর্ণ। চাও গুওয়াং গেই যিনি প্রথম বার চাওযৌ সেতু দেখেছেন তিনি এই সেতুর খুব প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন,

    " আমার মনে হয় এই সেতু খুব সুন্দর । আমার খুব পছন্দ হয়েছে। চীনা জাতির ইতিহাস সুদীর্ঘকালের । আমাদের চীনা লোকের মেধা প্রশংসনীয়। ২৪০০ বছর আগে এ ধরনের সেতু নির্মান করা আদৌ সহজ কাজ নয়। তা ছাড়া, সেতুতে যে ভাষ্কর্য খোদাই করা হয়েছে তা পুরোপুরি প্রাণবন্ড।"

    এতক্ষণ চাওযৌ সেতু সম্বন্ধে কিছু বলেছি। চলুন পোলিন মন্দির দেখতে যাই। প্রাচীনকালের এই মন্দির চাওযৌ সেতুর কাছাকাছি। তার বয়স চাওযৌ সেতুর চেয়েও বেশি। মন্দিরর ইতিহাস ১৭০০ বছরের। মন্দিরের ভিতরে প্রাচীনকালের বৃক্ষের সমাবেশ। প্রত্যেক দিন বিপুল সংখ্যক ধর্মাবলম্বী এখানে পূজা করতে আসেন। পর্যটক জেন রন সংবাদদাতাকে বলেন, তিনি এই মন্দির খুব পছন্দ করেন। তিনি বলেন,

    "আমি দ্বিতীয় বার এখানে পরিদর্শন করতে এসেছি। এখানে আমি খাটি বৌদ্ধ ধর্মের সংস্কৃতি অনুভব করতে পেরেছি। উপরন্তু এই মন্দিরে প্রবেশ করার কোনো নিষেধ নেই। পর্যটকদের মধ্যে অনেকেই শুধু মন্দিরের স্থাপত্য দেখতে এসেছেন তাই নয়, মন্দিরের বৌদ্ধ ধর্মের আমেজও অনুভব করতে চেয়েছেন। যেমন তাদের মধ্যে কেউ কেউ মন্দিরের ঘন্টা বাজাতে চান, কেউ কেউ বৌদ্ধশাস্ত্র শুনতে চান। ছানজন হচ্ছে চীনের বৌদ্ধ ধর্মের একটি দল। খালি মন নিয়ে নীরবে বসে ধ্যান করা তাদের চর্চার পদ্ধতি। বতর্মানে মন্দিরের মৌলিক শাস্ত্রের ভিত্তিতে "জীবনযাত্রা ছ্যানের" ধারণা উপস্থাপিত হয়। "জীবনযাত্রা ছ্যান" মানে বৌদ্ধ ধর্মের শাস্ত্রকে মানুষের দৈনিক জীবনে প্রয়োগ করা । যাতে আধুনিক মানুষের জীবনের নানা ধরনের উদ্বেগ আর মানসিক কষ্ট দূর করা হয়। ১৯৯৩ সাল থেকে, প্রত্যেক বছরে এক বার করে এই " জীবনযাত্রা ছ্যানের গ্রীষ্মকালীণ ক্যাম্প" আয়োজন করা হয়।যারা এই ক্যাম্পে অংশ গ্রহণ করেন তারা সন্ন্যাসীদের সঙ্গে খালি মান নিয়ে নীরবে বসে ধ্যান করেন এবং মত বিনিময় করেন। সন্ন্যাসীরা তাদের দৈনিক জীবনের উদ্বেগ দূর করার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেন। শ্রোতা বন্ধুরা এতক্ষণ চাওযৌ সেতু এবং পুলিন মন্দির সম্বন্ধে শুনলেন। সুযোগ পেলে ওখানে একবার বেড়িয়ে আসবেন কিন্তু।