v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-08-24 14:57:32    
চিত্রশিল্পী ছেন চিয়েন

cri
    কিছু দিন আগে চীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে ' ১৯৪৫ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর সকাল নয়টা ,নাংচিং ' নামে একটি তৈলচিত্র এই প্রদর্শনীর স্বর্ণ পুরষ্কার জয় করেছে । এই তৈলচিত্র দর্শক ও বিশেষজ্ঞ উভয় পক্ষের প্রশংসা পেয়েছে , চিত্রশিল্পী ছেন চিয়েন এই বৈশিষ্ট্যময় চিত্র একেঁছেন । এই ছবিতে ১৯৪৫ সালে চীন সরকারের কাছে জাপানের আত্মসমর্পণের দৃশ্য চিত্রিত হয়েছে । এই তৈলচিত্রের উচ্চতা দু মিটার , চওড়া ছয় মিটার , ছবিটির পরিবেশ সুগম্ভীর , আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া দু পক্ষের প্রতিনিধিরা দেখতে জীবন্ত । এটা এক বিরাট ঐতিহাসিক তাত্পর্য সম্পন্ন ছবি , ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এই ছবিতে স্তব্ধ হয়েছে । এই ছবি চীনা জনগণের আট বছর স্থায়ী জাপ আক্রমন বিরোধী সংগ্রামের সারসংকলন করেছে । চিত্রশিল্পী ছেন চিয়েন বলেছেন , জাপানের আক্রমনের বিরোধীতার আট বছরের কথা চীনা জনগণের কোনো- দিনই ভোলা উচিত নয় , বর্তমান যুগের নাগরিকদের এই সময় পর্বের ইতিহাস দেখানোর জন্যই আমি এই ছবি একেঁছি । তিনি বলেছেন , যদিও জাপানের আক্রমনের বিরোধীতা আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা , কিন্তু আমরা ইতিহাসের কথা স্মরণ করে ইতিহাসের আসল রুপ আমাদের উত্তরসূরীদের দেখাতে চাই । দর্শকরা এই ছবির উচ্চ মূল্যায়ন করেছেন , এতে চীনা জনগণের জাতীয়তাবাদী মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে ।

    চিত্রশিল্পী ছেন চেনের বয়স ৫৪ বছর , পূর্ব চীনের চিয়াং সু প্রদেশে তার জন্ম । তিনি চিয়াং সু প্রদেশের রাজধানী নানচিংয়ে চিত্রকর্ম সৃষ্টি করেন । তার ছবি আকাঁর ঘর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীনা যুদ্ধ অঞ্চলের আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানের সভাকক্ষের কাছে , এই ঐতিহাসিক সভাকক্ষ পরিদর্শন করে ছেন চেনের মনে এই ছবি আকাঁর প্রাথমিক আকাঙ্খা জাগল । ঠিক এই সময় অর্থাত গত শতাব্দীর আশির দশকে চীনের সাহিত্য মহলে প্রচুর বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনী কাহিনী লেখার হিড়িক পড়ে , এই সব জীবন কাহিনী পাঠকদের মাঝে বিরাট প্রভাব বিস্তার করেছে । ছেন চিয়েন আশা করেন , তার আকাঁ জাপানের আত্মসমর্পণ সংক্রান্ত তৈলচিত্র ইতিহাসের প্রকৃত রুপ প্রতিফলিত করেছে , কাজেই ইতিহাসের এক নির্দিষ্ট সময়পর্বের সাক্ষ্য হিসেবে এই তৈলচিত্রের ঐতিহাসিক অবস্থান বজায় থাকবে ।

    চীনা জনগণের জাপ-আক্রমণ বিরোধী সংগ্রামের ইতিহাসে জাপানের আত্মসমর্পণের এই মুহূর্ত সঠিকভাবে প্রতিফলনের জন্য এবং নিজের আকাঁ ছবি ইতিহাসের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করার জন্য ছেন চেন প্রস্তুতির কোনো ত্রুটি করেন নি। তিনি ইতিহাস সংক্রান্ত সরকারী দলিলপত্র সংরক্ষনাগারে গিয়ে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করেন , এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী কর্মীর সাক্ষাত্কার নেন এবং তাদের কাছ থেকে এই অনুষ্ঠানের নানা বিষয় জানার চেষ্টা করেন ।

    ১৯৯৩ সালে ছেন চিয়েন এই ছবি আকঁতে শুরু করেন । এই ছবি সম্পন্ন করতে ছেন চিয়েনের মোট দশ বছর সময় লেগেছে । তিনি বলেছেন , আমি প্রথম দিকে নিজেকে এক কড়া মাণদন্ড দিয়েছি , এই মানদন্ড হলো আমাকে অবশ্যই ইতিহাসের এই মুহূর্ত সঠিকভাবে প্রতিফলিত করতে হবে । পরে যদি কোনো শিল্পকর্ম এই ঐতিহাসিক ঘটনা প্রতিফলন ঘটাতে চায় , ইতিহাসের দলিলপত্র সংরক্ষনাগারে না গিয়েও আমার এই চিত্র থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায় ।

    ছেন চিয়েনের আঁকা তৈলচিত্র ' ১৯৪৫ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর সকাল নটা, নানচিং ' তে প্রায় এক শ লোক আছে , প্রধান প্রধান চরিত্রের মুখের ভাবভঙ্গি ও চালচলন থেকে চরিত্রগুলোর পদের মর্যাদা , মেজাজ ও মনের জটিল মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে । ছেন চিয়েন বলেছেন , ছবিটির ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোর বৈশিষ্ট্য নির্ভুলভাবে প্রতিফলনের জন্য তিনি পুরনো পত্রিকা ও ম্যাগাজিনগুলো থেকে এই সব চরিত্রের ছবি সংগ্রহ করেছেন , তার পর তিনি এই সব ছবি অনুসারে এই সব চরিত্রের প্রতিকৃতি তৈরী করেন এবং বাস্তব জীবন থেকে এই সব চরিত্রের মডেল খুঁজে বের করেন । এই সব কাজের ভিত্তিতেই তিনি তার বিরাটাকারের তৈল চিত্রে তাদের ছবি আকেঁন । নিজের আকাঁ ছবি যাতে আরো ভালোভাবে ইতিহাসের আসল রুপ প্রতিফলন করতে পারে , ছেন চিয়েন এই ঐতিহাসিক ঘটনার ভিত্তিতে রচিত অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির জীবন কাহিনী পড়েছেন , তিনি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনকারী প্রতিটি লোকের জটিল মানসিক অবস্থা ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন ।

    তা ছাড়া ছেন চিয়েন এই ছবি আকাঁর সময় আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের প্রতিটি খুটিঁনাটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছেন , যেমন চীনের সৈনিকদের ইউনিফর্ম ও তাদের কাঁধের রিবন , টেবিল- ক্লথের রঙ ,জাপানী সৈনিকের ইউনিফর্ম ও তাদের কলার ও কাঁধের রিবন ইত্যাদি ছেন চিয়েন সব বিস্তারিত খোঁজখবর নিয়েছেন , পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত হওয়ার আগে তিনি ছবি আকেঁন না ।

    ছেন চিয়েন চীনের বিখ্যাত তৈল চিত্রশিল্পী চিন সান ইর কাছ থেকে ছবি আকাঁ শিখেছেন এবং তার শিক্ষকের নিষ্ঠার সংগে ছবি আকাঁর শৈলীও শিখেছেন । ছেন চিয়েন এই ছবি আকাঁর সময় বাস্তবতাবাদী শৈলী ব্যবহার করেছেন , এই শৈলীর কল্যানে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের গুরুগম্ভীর পরিবেশ চমত্কারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । তিনি বলেছেন , আমি মনে করি এই ছবির বিষয়বস্তু এক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ঘটনা , গোটা অনুষ্ঠান মাত্র বিশ মিনিট স্থায়ী ছিল বলে অনুষ্ঠানের পরিবেশ গম্ভীর , আমি একটি তথ্য থেকে জানতে পেরেছি , অনুষ্ঠান চলাকালে সভাকক্ষ ছিল পিন -পতন নিস্তব্ধ । এই ধরনের একটি ঐতিহাসিক তাত্পর্যসম্পন্ন ঘটনা প্রকাশের জন্য আমার ধারনা বাস্ততাবাদী চিত্রশৈলী সবচেয়ে উপযুক্ত ।

    চীনের জাতীয় চারুকলা গ্যালারীর প্রধান ফোং ইউয়ান এই তৈলচিত্রের মূল্যায়ণ করে বলেছেন , ছেন চিয়েন দশ বছর সময় নিয়ে এই ছবি একেঁছেন এবং বার বার সংশোধন করেছেন , এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক বিষয়ক বিরাটাকার তৈল চিত্র সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খুব কম ।