v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
পর্যটনসংস্কৃতিবিজ্ঞানখেলাধুলাকৃষিসমাজঅর্থ-বাণিজ্যশিক্ষার আলো
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-08-23 20:26:09    
আনন্দঘন পারিবারিক পরিবেশে শিশুদের গড়ে তোলার প্রচেষ

cri
    গত কয়েক বছরে চীনের মা-বাবারা ক্রমে ক্রমে বাড়িতে তাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদানের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন এবং বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তাঁদের ছেলেমেয়েদের লালনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

    সু ই পেইচিং শহরের হাইডিয়ান ডিস্ট্রিক্ট একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ।শিক্ষক শিক্ষিকারা তার প্রশংসা করে বলেছেন , এই মেয়ে সুর্যালোকের মত নিষ্কলংক , লেখাপড়ায় একনম্বর না হলেও সে প্রাণচঞ্চল , আস্থাভরপুর , এবং সহপাঠীদের সাহায্য করতে সবসময়ে প্রস্তুত ।শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সহপাঠীরা সবাই তাকে পছন্দ করেন । সু ইর মা মাকুইলিং মনে করেন , সু ইর অমায়িক প্রকৃতি মেয়ের সঙ্গে মায়ের সদব্যবহারের অনিবার্য সাফল ।

    তিনি বলেছেন , আমার মেয়ে আমাকে শ্রদ্ধা করে , আমিও ওকে সম্মান করি , আমি ওর সামনে কখনো মাতব্বরী করি না । আমরা একেবারে সহৃদয় বন্ধুর মত ।

    মাদাম মাকুইলিং সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , তিনি তাঁর মেয়েকে বন্ধু বলে গণ্য করেন , ছোটো বলে তাকে কখনো অসম্মান করেন না ।   তাই তার সঙ্গে ভাব বিনিময় সহজ হয়েছে । তাঁর পরিবারের সবাই মাঝে মাঝে একসঙ্গে সিনেমা হলে গিয়ে নতুন ছবি দেখেন , অথবা একসঙ্গে নাচগানের হলে গিয়ে জনপ্রিয় গান গান । কেউ কোনো প্রবন্ধ পাঠযোগ্য বলে মনে করলে অবিলম্বে পরিবারের অন্য সদস্যকে তা পড়তে বলেন। মাদাম মাকুইলিং বলেছেন , দৈনন্দিন জীবনে এটা নেহায়েত মামুলি ব্যাপার হলেও , তা তাঁর পরিবারের নিবিড় অন্তরঙ্গতা ও ভালোবাসার পরিচায়ক ।

    সু ইও বলেছে, মা-বাবা ছোটো বেলা থেকে ধৈর্য সহকারে তার কথা শোনেন , বাড়িতে তার মন সব সময়ে উত্ফুল্ল ও প্রসন্ন ।

    সু ই আরো বলেছে , বাবা-মার সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো । মা-বাবা কোনো নতুন কাজে হাত দেওয়ার আগে আমার মত শোনেন , আমার সঙ্গে পরামর্শ করেন । বাবা-মার সঙ্গে থাকা অনেকটা সহৃদয় বন্ধুদের সঙ্গে থাকার মত । কাজেই বাড়িতে আমি সব সময় হাসিখুশি ।

    মাদাম মা মাকুইলিংয়ের মত চীনের অসংখ্য অভিবাবক তাঁদের সন্তানদের শ্রদ্ধা করার গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন । তাঁরা মাঝেমধ্যে প্রাণ খুলে তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে মত বিনিময় করেন এবং সন্তানদের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য মাধুর্যময় পারিবারিক পরিমণ্ডল সৃষ্টির চেষ্টা করেন ।

    তবে মাদাম মা কুই লিং মনে করেন , তাঁর কথা শুনে যত সহজ মনে হয় বাস্তবে তা তত সহজ নয় ।কারণ , চীনাদের পরিবারে ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদানের চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী যে কোনো অবস্থায় পিতামাতা যা বলেন সন্তানদের তা মানতে হবে । মেধা বৃদ্ধিকে সবসময় অগ্রাধিকার দেয়া হতো । সন্তানদের সঙ্গে ভাব বিনিময় ছিল অবহেলিত । কালক্রমে অনেক পিতামাতা নিজেদের জীবনবৃত্তান্ত থেকে এই কথা বুঝতে পেরেছেন যে , সন্তানদের কঠোর শাসন তাদের লালনের শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি নয় । সন্তানদের কথা বলার সমান সুযোগ ও স্বাধীনতা দিলেই সন্তানদের মহত চরিত্র গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

    সন্তানদের বয়সের নানা পর্যায়ে নানা ধরনের সমস্যা উদ্ভুত হয় । নতুন সমস্যা সঠিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ না নেয়া হলে সন্তানদের সঙ্গে পিতামাতার সংঘর্ষ অপরিহার্য ।তখন উপদেশ নিতে তাঁদের অনেককেই অভিভাবক- প্রশিক্ষন-স্কুলের দ্বারস্থ হতে হয় ।

    পশ্চিম চীনের শানসি প্রদেশের সি আন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধীনস্থ অভিভাবক- প্রশিক্ষন স্কুল সারা চীন দেশে বিখ্যাত। অভিভাবক- প্রশিক্ষন স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাদাম ওয়াং লান জুন সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , সন্তানদের শিক্ষাদানে পিতামাতাদের সাহায্য করা তাঁরই প্রশিক্ষন স্কুলের প্রধান উদ্দেশ্য ।

    তিনি বলেছেন , আমাদের প্রশিক্ষন স্কুলে ক্লাস করার পর অভিভাবকরা জানতে পেরেছেন যে , তাঁদের ছেলেমেয়েদের জীবনের কোন পর্বে কি সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং সমস্যা সুরাহার জন্য আগে থেকে প্রস্তুত থাকতে হবে ।

    ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মেলামেশার ভিত্তিতে চীনের অনেক অভিভাবক ছেলেমেয়েদের নির্ভুল মুল্যবোধ ও জীবনবোধ গড়ে তোলার উপরও নজর রাখছেন। চীনের হোনান প্রদেশের সাংচৌ শহরের উপকণ্ঠের কৃষক জাং সাও খুন সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , তাঁর ছেলে জাং সিয়াং ফেং স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র , সে বুদ্ধিমান ও চঞ্চল । বাড়িতে তার পড়া শেষ হলে জাং সাও খুন ও তাঁর স্ত্রী সচেতনভাবে তাকে কিছু ঘরকন্নার কাজ করতে দেন । আস্তে আস্তে সে পরিশ্রমের কঠোরতা বুঝতে পেরেছে এবং কাজ করার সদোভ্যাস তার হয়েছে

    জাং সাও খুন বলেছেন ,তাঁর ছেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এলে শাকসবজি পরিস্কার করতে ও রান্না করতে তাঁদের সাহায্য করে । ঘর পরিস্কারও করে । ভবিষ্যতে ওর আত্মনির্ভরতার অভ্যাস যাতে গড়ে ওঠে ,তার জন্যই এখন রোজ ওকে কিছু না কিছু কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে ।

    ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদান প্রসঙ্গে চীনের জাতীয় নারী ফেডারেশনের শিশু বিভাগের পরিচালক জিয়াং ইয়ু এ সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , বাড়িতে ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদানে মায়েদের সাহায্য করাই তাঁর প্রধান কর্তব্য

    তিনি বলেছেন , আমাদের বিভাগের উদ্যোগে প্রায়ই পারিবারিক শিক্ষা বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করা হয় । শিশু শিক্ষার উপর আমাদের রচিত কিছু পাঠ্যবই সারাদেশে বিক্রি হচ্ছে । আমাদের এই সব কাজের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো শিশুদের মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা ।