v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-08-19 20:55:48    
মধ্যস্থতা-বিশেষজ্ঞ থান হুই-ই

cri
    বহু লোকের চোখে মধ্যস্থতা-বিশেষজ্ঞ এমন একটি চরিত্র যা শুধু হংকং আর তাইওয়ানের চলচ্চিত্রে দেখা যায় । কিন্তু হংকংয়ের পুলিশ বৈঠক গ্রুপ পি-এন-সির সদস্যদের পক্ষে বৈঠক করা তাদের এক স্বাভাবিক জীবন , তারা নিজেদের বুদ্ধি, বাগ্মিতা ,দৃঢসংকল্প আর সাহস দিয়ে একটার পর একটা প্রাণবন্ত জীবন বাঁচিয়েছেন । বৈঠক গ্রুপে নারী সদস্যও আছেন ,থান হুই-ই তাদের মধ্যে একজন ।

    প্রত্যেক দিন সকালে হংকং দ্বীপের রাস্তায় একজন পাতলা গড়নের যুবতী মেয়েকে দেখা যায় , তিনি হাতে টাটকা ফুল নিয়ে রাস্তা পার হয়ে অফিসে যান , তিনিই আমাদের আজকের গল্পের নায়িকা হংকং পুলিশ বৈঠক গ্রুপের নারী বিশেষজ্ঞ থান হুই-ই । যখন তিনি পুলিশ ব্যুরোতে তার প্রথম দিনের কাজ শুরু করেন সেই দিন থেকেই তার এই অভ্যাস বজায় রয়েছে । তিনি বলেছেন , টাটকা ফুল প্রত্যেক দিন তাকে এক সুন্দর ও আনন্দের দিন এনে দেয় । কারণ ফুলের মতো সুন্দর জীবন রক্ষা করা তার কর্তব্য ।

    ৩৪ বছর বয়সের থান হুই-ইর পুতুল পুতুল গড়ন ,দেখতে সুন্দর ,কেউই তাকে সাহসিকতা ও মানস বৈঠক-বিশেষজ্ঞের সঙ্গে সমন্বয় করে দেখতে পারেন না । তিনি বলেছেন , একজন নারী বৈঠক বিশেষজ্ঞের পক্ষে পুরুষ পুলিশের গুনগতমান থাকা ছাড়াও নারীর প্রাধান্য ও গুনগতমান থাকা তার জন্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ , তাকে সবসময়ে মনে রাখতে হবে যে , আমি পুলিশ , প্রাণ বাঁচ্চানো আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য ।

    ২০০৪ সালের অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ের এক দিন , হংকং ওয়াংচিয়াও এলাকার সমুদ্র তীরে অবস্থিত এক ২৫ তলা এক ভবনের উপরের বিলবোর্ডের উপর থেকে একজন পুরুষ আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন । খবর পেয়ে থান হুই-ই ও তার সহকর্মীরা তাড়াতাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছুলে আত্মহত্যাকারী শুধু তাকে একা কাছে যেতে দিতে রাজী হন । বিলবোর্ডটি সমুদ্রের প্রবল বাতাসে নড়াচড়া করছিল , বিলবোর্ডে চড়া পুরুষটি যে কোনো সময়ে পড়ে যাওয়ার বিপদের সম্মুখীন । পুরুষটির মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে দেয়ার জন্যে থান হুই-ই বাধ্য হয়ে বেল্ট বেঁধে বিলবোর্ডে উঠেন ।

    পরিবেশ হাল্কা করার জন্যে থান হুই-ই নিম্নস্বরে আন্তরিকতার সঙ্গে তাকে বলেন , আমি বৈঠক-বিশেষজ্ঞ , আপনার যে কোনো অসুবিধা থাকলে বা যে কোনো সাহায্য দরকার হলে আমাকে বলতে পারেন , আমি আপনাকে সাহায্য করব , এখন ভীষণ বাতাস বইচ্ছে , আমরা নেমে ঘরে কথা বলব কেমন ? পুরুষটি তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানকরল । বৈঠক ২৫তলা অট্টালিকার উপরের বিলবোর্ডে চলছিলো । আধা ঘন্টার কথাবার্তার পর থান হুই-ই জানলেন , প্রেমিকা কিছু দিন আগে মারা গেছেন বলে পুরুষটি দুঃখ-দুর্দশায় আত্মহত্যা করতে চেয়েছেন ।কথাবার্তার মাধ্যমে থান হুই-ই লোকটির চোখ থেকে জীবিত থাকার বিন্দুমাত্র লক্ষণও দেখতে পেলেন না ।লোকটি যে কোনো সময়ে কথাবার্তা বন্ধ করে আত্মহত্যা করতে পারেন ।

    থান হুই-ই মন দিয়ে তাকে বলেন , মারা যাওযার পর মানুষের পুনর্জন্ম হতে পারে না , আমারও বন্ধু হারানোর অভিজ্ঞতা ছিল , ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার এক ঘনিষ্ট বন্ধু আমাকে বলেছিলেন , তুমি সুস্ঠুভাবে জীবিত থাকলেই কেবল আমি শান্তভাবেপৃথিবী ত্যাগ করতে পারি ।

    থান হুই-ই একই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এক পুরনো বন্ধুর মতো তার সঙ্গে প্রায় তিন ঘন্টা ধরে কথাবার্তা বললেন । বৈঠকটি অত্যন্ত কষ্টের মধ্যে চলছিল । প্রায় চার ঘন্টার পর পুরুষটি হঠাত নিচে ঝাঁপিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করলেন । তার পা দুটোফসকে যাবার মুহুর্তে থান হুই-ই হাত বাড়িয়ে সর্বশক্তি দিয়ে তাকে ধরলেন এবং তার সঙ্গে অট্টালিকাটির বাইরে ঝুলে পড়েন ।প্রবল শক্তির টানায় বেল্টটির ক্যাঁচ ক্যাঁচশব্দ হয়ে যায় ।

    এই দৃশ্য স্মরন করে থান হুই-ই বলেছেন , সে সময়ে আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া হল তাকে ধরে রাখব যাতে সে মরে না যায় । প্রত্যেক বৈঠক বিশেষজ্ঞের মনে ঘটনার শিকার ব্যক্তিরনিরাপত্তা সবসময়ে প্রথম স্থানে থাকে । যে কোনো পরিবেশে হোক না কেনো, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিরাপত্তার নিশ্চয়তাবিধান করা চিরকালই প্রতিটি বৈঠক-বিশেষজ্ঞের প্রথম কর্তব্য । বিশেষজ্ঞের চোখে শুধু প্রাণ আছে ।ভাগ্য যে , বেল্টটির গুনগতমান অত্যন্ত ভাল,সেই সকালে আমি পেট ভরে খেয়েছি , নইলে তাকে ধরে রাখতে সক্ষম হতাম না ।

    নানা কারণে আত্মহত্যাকারীদের সম্মুখীনহওয়া ছাড়াও বৈঠক বিশেষজ্ঞকে পণবন্দী আর ছিনতাই করার ঘটনার সম্মুখীনও হতে হয় । এ ধরনের ঘটনার সমাধানে বৈঠক-বিশেষজ্ঞদের ভূমিকা হল বলপ্রয়োগের দ্বারা বলপ্রয়োগ মোকাবেলা করার পদ্ধতির বদলে অ-বলপ্রয়োগের পদ্ধতিতে অপরাধীদের সাধিত ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়েকমিয়ে দেয়া ।

    ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের একদিন হংকং কাউলুং এলাকার একজন জুয়াড়ী জুয়ার বিপুল ঋণের কারণে ছুরি নিয়ে দুজন প্রাথমিক স্কুলবয়সী ছেলেকে ছিতাই করেছে । সে দুই ছেলের অভিভাবকদের মোটা অর্থ দিয়ে ছেলেদের উদ্ধার করার আদেশ দেয় ।

    পুলিশ পক্ষের বলপ্রয়োগ সহ বিভিন্নপদ্ধতি নেয়ার প্রচেষ্টায় কোনো ফল হয়নি ।বৈঠক বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হলে নিরিহ পণবন্দীর জীবন রক্ষা পাবে ।

    কর্তব্য পাওয়ার সময়ে থান হুই-ই বিউটি পার্লারে চুল পরিস্কার করছিলেন । তিনি বিউটি পার্লারের কাছে ৫ মিনিটের মধ্যে তার চুল ধূসরবর্ন করতে বলেছেন । তিনি ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করে এক ছেলের মার ছদ্মবেশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ।

    তিনি লিখিত চিরকুটের মাধ্যমে লোকটিকে জানান যে , তিনি ছেলেটির মা , তার স্বামী পণ যোগাড় করে আসছেন । দরজার ফাঁক দিয়ে গৃহিনীর ছদ্মবেশে থান হুই-ই পুলিশের বৈঠক-বিশেষজ্ঞ নয় বলে প্রমান করার পর ছিনতাইকারীটি তার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে রাজী হয় । থান হুই-ই তার সঙ্গে তার স্ত্রী ও সন্তানের কথা তুললেন ।লোকটা থান হুই-ইকে জানায় , জুয়া খেলার কারণে স্ত্রী তার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করেছে এবং বাচ্চাকে নিয়ে চলে গেছে । সে আসলে স্ত্রী ও বাচ্চাকে অত্যন্ত ভালবাসে । থান হুই-ই বলেন , আপনার স্ত্রী রাগ করে আপনার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করেন । আপনি তাকে এত ভালবাসেন, যদি পরে আপনি আর জুয়া না খেলেন তাহলে নিশ্চয় তিনি আপনার কাছে ফিরে আসবেন ।কিন্তু যদি আপনি আমার ছেলেকে হত্যা করেন ,তাহলে আপনি কোনোদিনইস্ত্রী ও সন্তানকে দেখতে পাবেন না ।

    অনেক ক্ষন ধরে কথাবার্তা বলার পর লোকটি নিজের স্ত্রীকে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করল ।

    আমার ছেলের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করতে পারলে আমি আপনার জন্যে সব কিছু করতে ইচ্ছুক , থান হুই-ই কাঁদার স্বরে বললেন , আমি এখুনি আপনার স্ত্রীকে খুঁজতে লোক পাঠাব ।থান হুই-ইর দেখানো মাতৃত্বের শক্তি ছিনতাইকারীটির আস্থা অর্জন করে ।

    তিন ঘন্টা পার হয়ে গেল, নিজের দাবী পূরণ হয়নি দেখে লোকটি অত্যন্ত উত্তেজিত হয় । তার উত্তেজিত মনোভাব প্রশমিত করার জন্যে থান হুই-ই তাকে বলেছেন , উত্তেজিত হবেন না , আপনার স্ত্রীকে আনতে লোক পাঠানো হয়েছে । ঘরে অনেক সময় ধরে আছেন বলে নিশ্চয় আপনার ক্ষিদেও পেয়েছে ।আপনাকে কিছু খাবার ও পানি পাঠাতে চাই । লোকটি রাজী হয়েছে ।

    খাবার ও পানি পাওয়ার পর লোকটি প্রথমে ছেলে দুটিকে খাওয়ায়, ১০-১২ মিনিটের পর লোকটি খাবার ও পানি খেতে শুরু করে ।

    লোকটির সতর্কতাধীরেধীরে শিথিল হল ,সে ছেলে দুটিকে রুমে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে অনুমোদন দেয় এবং বলে যে, তার স্ত্রীকে দেখতে পেলেই কেবল সে ছেলে দুটিকে ছেড়ে দেবে । এ সময় তার সাবেক স্ত্রীকে পাওয়া গেলো , কিন্তু স্ত্রী তাকে দেখতে আসতে চায় না , পুলিশ তার সঙ্গে একবার দেখা করতে তার স্ত্রীকেপরামর্শ দেয়

    ছিনতাইকারীকে খতম করার আদেশ জানানো হল । থান হুই-ই আরও ১০ মিনিট চেয়েছেন । ৫ মিনিট পর লোকটির স্ত্রী ঘটনাস্থলে পৌঁছলেন ।স্ত্রীর তাগাদায় লোকটি দরজা খুলতে রাজী হয় । যখন লোকটি দরজা খুলে দেয় ঠিক সেই সময়ে থান হুই-ই শিগ্গিরই তার স্ত্রীর আগে প্রবেশ করেন এবং পিস্তল দিয়ে লোকটিকে বশীভূত করেন । এভাবেই ১০-১২ ঘন্টার পণবন্দী ঘটনার অবসান হল ।