v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-08-16 21:55:17    
গীতাঞ্জলী নামে পেইচিংয়ের একটি বৈশিষ্ট্যময় দোকান

cri
    চীনের রাজধানী পেইচিংয়ের একটি রাস্তার নাম ইয়েনতাই সিয়েচিয়ে । ইয়েনতাই-র অর্থ তামাক খাওয়ার পাইপ , সিয়ের অর্থ বাকাঁ - টেরা , চিয়ের অর্থ রাস্তা । এই রাস্তার ধরণ ঠিক যেন তামাক খাওয়ার পাইপের মতো । তাই এই রাস্তার নাম দেওয়া হয়েছে ইয়েনতাই সিয়েচিয়ে । এই রাস্তা পেইচিং শহরের পুরনো বানিজ্য এলাকায় অবস্থিত। এই রাস্তায় বড় বড় দোকানপাট কম । তবে প্রচুর ছোট ছোট দোকান রয়েছে । ধৈর্য নিয়ে এইসব ছোট ছোট দোকানগুলো পরিদর্শন করলে আপনি আবিষ্কার করবেন প্রতিটি দোকানের রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট। আজকের সংস্কৃতি সম্ভার আসরে এই রাস্তার একটি বৈশিষ্ট্যময় দোকান নিয়ে শ্রোতাবন্ধুদের কিছু বলবো , দোকানটির নাম ' গীতাঞ্জলি ' ।

    ' গীতাঞ্জলি ' নামের এই দোকানে প্রধানতঃ ভারতের দ্রব্য-সামগ্রী বিক্রয় হয়। দোকানের সাইনবোর্ডটি ততো বড় নয় , প্রবেশ দরজার পাশে আলোকসজ্জার উপর হালকাভাবে 'গীতাঞ্জলি ' লেখা । দোকানের প্রবেশ দরজা পার হলেই টের পাওয়া যায় ভারতের কোনও দোকানে প্রবেশ করেছি । সেখানে সব সময় ভারতীয় আধুনিক ও লোকসংগীত বাজানো হয় আর পরিবেশে রয়েছে ভারতীয় ধুপের গন্ধ। দোকানটিতে ভারতের নানান ধরনের পোশাক ও অলংকার রয়েছে । সি আর আই বাংলা বিভাগের পক্ষ থেকে এই দোকানের মালিকের একটি সাক্ষাতকার নেওয়া হয়েছে । দোকানের পন্যসামগ্রী নিয়ে দোকান মালিক আমাদের প্রতিনিধিকে বলেছেন , আমার দোকানে বেশির ভাগই ভারতের চাদর , শাড়ী , লিনেন কাপড় ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক আর অলংকার রয়েছে । দেখুন ওই পাশের দুটি কাঁচের আলমারিতে রয়েছে ভারত থেকে আমদানিকৃত রুপার অলংকার । এগুলোর মধ্যে আছে , ভারতের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্রেসলেট ও নুপুর ইত্যাদি । ঘরের উপরভাগে নানান ধরনের ভারতীয় বাতি টাঙ্গানো রয়েছে । ভারতের হাতে তৈরী বাতির ঢাকনা ভারী সুন্দর। আমাদের প্রতিনিধি দোকান মালিকের কথা শুনতে শুনতে বারো বর্গমিটারের ছোট দোকানটি পরিদর্শন করছিলো । লক্ষ্য করেছিলো দোকানের বাঁ পাশের একটি লম্বা টেবিলে সুন্দর সুন্দর টুপির পাশে বেশ কিছু কাঠের তৈরি পুতুল দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে , প্রতিটি পুতুলের নির্মাণ শৈলী আলাদা । টেবিলের অন্য পাশে রয়েছে কয়েকটি ভারতীয় বাদ্যযন্ত্র। একটি বাদ্যযন্ত্র দেখতে অনেকটা চীনা বাদ্যযন্ত্র ফিফার মতো । এছাড়া রয়েছে ভারতীয় বাদ্যযন্ত্র একতারা , দোতারা , সেতার ও তবলা । এ গুলোর পাশে রাখা বিজ্ঞপ্তীথেকে জানা গেলো এইসব বাদ্যযন্ত্র বিক্রির জন্য নয় । আমাদের প্রতিনিধির প্রশ্নে দোকান মালিক হেসে বললেন , চীনা মানুষ যাতে আরও ভালোভাবে ভারতের সংস্কৃতি ও সভ্যতা উপলব্ধি করতে পারেন , আমি আমার দোকানে সেজন্য ভারতের বাদ্যযন্ত্রও বইপত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছি । ভারতের বইপত্রের মধ্যে রয়েছে ভারতের সাহিত্যের বই , যোগশাস্ত্রের বই ও বৌদ্ধ ধর্মের কাহিনীর বই । এইসব বইয়ের ছবিতে ভারতের মনোরম দৃশ্য ও রহস্যময় কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে , আমি যদি এইসব বইপত্র বিক্রয় করি , তাহলে কি করে চীনা মানুষদের ভারতের সংস্কৃতি প্রদর্শন করবো ? এই দোকানের বইগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি ভারত থেকে পাঠানো । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বই তিনি চীনের বিভিন্ন বইয়ের দোকান থেকে কিনে নিয়েছেন । আমাদের প্রতিনিধি লক্ষ্য করেছে , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতা সংগ্রহে কোনো পাঠকের দাগ কাটার নোটিশ আছে । জিজ্ঞেস করে জানা গেলো , দোকান মালিক রবীন্দ্রনাথের কবিতা বেশ পছন্দ করেন । আমরা তাকে ঠাকুরের একটি কবিতা আবৃত্তির অনুরোধ জানানো হলো । দোকান মালিকের কবিতা আবৃত্তি উপভোগ করার সময় তার মুখের ভঙ্গী দেখে আমাদের প্রতিনিধি বুঝতে পেরেছে পেরেছি তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা এবং ভারতের সংস্কৃতি কি পরিমাণ পছন্দ করেন । এই থেকেই বুঝা যায় এই চীনে ' গীতাঞ্জলি ' নামে একটি দোকান খুলেছেন কেন তিনি ।

    কথা বলার সময় দোকানের দরজা খুলে একজন মেয়ে প্রবেশ করলেন। তাকে দেখে মনে প্রশ্ন জাগলো , দোকান মালিকের সঙ্গে দীর্ঘ সময় আলাপ করেছি , কিন্তু এর মধ্যে কোনো ক্রেতা আসে নি কেন ? প্রশ্ন শুনে দোকান মালিক বলেছেন , এই দোকান সকাল বেলায় খোলা হয় না , সাধারণতঃ বিকেল দুটা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত দোকানটি খোলা থাকে । আপনারা যদি সন্ধ্যা বেলায় আসেন , তাহলে অনেক ক্রেতা দেখতে পাবেন । তার কথা শুনে মনে হলো ছোট দোকানটি যেন একজন অপরূপা নারী । দুপুর বেলার স্নিগ্ধ পরিবেশে চোখ খুলে ক্রেতাদের স্বাগত জানায় , আর সন্ধ্যাবেলায় আলোকসজ্জায় দোকানের সব জিনিস আরো সুন্দর হয়ে উঠে । দোকানে প্রবেশ করা মেয়েটিকে এই দোকান সম্বন্ধে কিছু বলার অনুরোধ করলে মেয়েটি বলেছেন , আমি এই প্রথমবার এই দোকানে এসেছি । এই রাস্তায় আমি প্রায়ই বেড়াতে আসি ,আজ এই দোকান চোখে পড়লো , তাই কৌতুহল নিয়ে ঢুকেছি । ভারতের সংস্কৃতির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে , এখানে রাখা ভারতীয় জামা-কাপড় ও অলংকারগুলো খুবই সুন্দর । তবে দাম একটু বেশি। দোকানটির নাম জিজ্ঞেস করলে মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে গীতাঞ্জলি বলেছেন। তিনি ভারতের সংস্কৃতি পছন্দ করেন ,তাই এই দোকানের বৈশিষ্ট্যময় নামের আকৃষ্টে এখানে এসেছেন । মেয়েটি আরো বলেছেন , আমি জানি বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ' নৌকা ডুবি ' নামে একটি উপন্যাস লিখেছেন , আমি ওই উপন্যাস খুব পছন্দ করি । আমি ভারতের সিনেমা দেখতে পছন্দ করি । ছোট বেলা থেকেই ভারতীয় সিনেমা দেখি , ভারতের সিনেমায় নাচ গান বেশী। আমি ভারতের নাচ গান দেখতে পছন্দ করি । তাই পেইচিংয়ে ভারতের ঐতিহ্যিক সংস্কৃতিসম্পন্ন এই দোকান আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে । এই কথা বলে তিনি দোকানের পোশাক ও অলংকার উল্টেপাল্টে দেখতে শুরু করেন ।