১. "শিক্ষক, আমরা চিরকাল আপনাকে সমর্থন করি।"
আগে আমি একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছিলাম। যদিও আমার স্কুলে ২০ বছরেরও বেশী সময়ের জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা আছে, কিন্তু আমি সবসময় একজন ছাত্র ছিলাম, কোনোদিন শিক্ষক হই নি। কুই চৌ প্রদেশে আসার আগে, একজন অভিজ্ঞ বন্ধু আমাবে বলেছিলো যে, শিক্ষকের পক্ষে প্রথম পাঠ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রথম পাঠে সবাই উত্তেজনাসংকুল। প্রথম পাঠের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। সত্যি তাই ঘটল। আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী আমার প্রথম পাঠের বিষয়বস্তু ২০ মিনিটের মধ্যে শেষ হয়েছে। বাকী সময়ে আমি কি করবো। হঠাত্ আমার বুদ্ধি এসেছে। আমি প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে একটি কাগজে চীনাভাষায় লেখাপড়া এবং শিক্ষকের প্রতি আশা ও মতামত লিখতে বলেছিলাম। যখন আমি সব ছাত্রছাত্রীদের লেখা কাগজ নিয়ে নিলাম তখন ক্লাস শেষ হওয়ার ঘন্টা বেজে উঠল। আমার শোবার ঘরে ফিরে আসার পর, ছাত্রছাত্রীদের লেখা কাগজপত্র পড়তে শুরু করলাম। কিন্তু আমি ভাবতে পারি নি যে, আমি তারা আমার অনুরোধ অনুযায়ী লিখে নি। কেউ লিখেছে, আমাদের শিখানোর জন্যে"আপনি এতো দূর থেকে কুই চৌয়ে এসেছেন, তাই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই।" কেউ লিখেছে, "আমার চীনা ভাষার ভিত্তি মজবুত নয়, আশা করি, আপনার সাহায্যে এই ক্ষেত্রে আমার উন্নতি হবে"। কেউ লিখেছে, " উত্তেজনাপূর্ণ হওয়ার দরকার নেই। শিক্ষক লিউ, আমরা চিরকাল আপনাকে সমর্থন করি" । এইসব পড়ার পর আমি সত্যিই খুবই মুগ্ধ হলাম। আমার প্রথম পাঠ সফল না হলেও দুঃখ ছিল না। কারণ ছাত্রছাত্রীরা আমার প্রতি এতো বেশি বিশ্বাস ও আশা ব্যক্ত করেছে। হঠাত "শিক্ষক" এই শব্দের পবিত্র দায়িত্ব উপলব্ধি করেছি। আমি কোনোমতেই তাদের হতাশ হতে দেবো না।
তারপর কিছু আমি শিক্ষা তত্ত্ব শিখেছি এবং মনযোগ সহকারে প্রত্যেক পাঠের জন্যে প্রস্তুতি নিয়েছি। অল্প দিনের মধ্যে আমি শিক্ষা কাজের সঙ্গে নিজেকে সংগতিপূর্ণ রেখেছি। গত শিক্ষামেয়াদে আমার ক্লাসের ছাত্রদের চীনা ভাষার ভিত্তি তেমন ভালো ছিল না, কিন্তু এখন এই ক্লাস প্রথম হয়েছে। এটা হচ্ছে কুই চৌ আসার পর আমার জন্যে সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার।
২. "সংখ্যালঘু জাতি"
থিয়ন লুং গ্রামে আসার পর প্রথম দিকে আমরা প্রায়ই পাহাড় ও নদীর সুন্দর দৃশ্যের মধ্যে বিভোর হয়ে যাই। এর সঙ্গে সঙ্গে এখানকার স্থানীয় রীতি-নীতির উপরও আমরা মনোযোগ দেই। এখানকার লোকদের পোশাক উত্তর চীনের থেকে অনেক ভিন্ন। এটা সবার আগে আমাদের চোখে পড়ল। বিশেষ করে বয়স্ক নারীরা আধুনিক পোশাক পরেন না। তারা সবাই ঢিলা পোশাক পরেন এবং মাথায় খোঁপা বাঁধেন। এইসব প্রাচীন রীতিনীতির পরিচায়ক । কুই চৌয়ে আসার আগে আমি শুনেছি এখানে অনেক সংখ্যালঘু জাতি আছে। কিন্তু জানি না, তারা মিয়াও জাতি, না পুই জাতি। এক বার আমি একজন দয়ালু বয়স্ক নারীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম "আপনি কোন সংখ্যালঘু জাতির মানুষ?" উত্তরে তিনি বলেছেন, "আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি! কি অদ্ভূত ব্যাপার। সংখ্যাগরিষ্ঠ জানতে কোথা থেকে এসেছে? "আমরা হান জাতি লোক।" তিনি উত্তরে বলেছেন। পরে আমরা জাতে পারলাম, আগে এই অঞ্চলে সংখ্যালঘু জাতির বাসস্থান ছিল। চীনের মিং রাজবংশের গোড়ার দিকে প্রথম সম্রাট চু ইউয়ান চাং দক্ষিণপশ্চিম চীনের এই অঞ্চলে সৈন্য মোতায়েন করতে শুরু করেন। তাদের পূর্বপুরুষের সবাই সৈন্য ছিলেন এবং দেশ রক্ষার জন্য তারা এখানে আসেন। তারপর বংশ পরম্পরায় এখানে থাকেন। তাই তাদের পোশাক-পোশাক, খাওয়া-দাওয়া ও স্থাপত্য ইত্যাদি এখনো মিং রাজবংশের রীতিনীতি বজায় রেখেছে। তারা এখনো তাদের নিজেদের বিশেষ সংস্কৃতি বজায় রেখেছেন। ঐতিহাসিকরা তাদেরকে "জীবিত জীবাশ্ম" বলে গণ্য করেন।
যখন পশ্চিম চীনের ব্যাপক উন্নয়নের রণনীতি বাস্তবায়নের শুরু। ঠিক সেই সময়ে আমাদের তৃতীয় কিস্তির তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরা কুই চৌয়ে আসেন। এখন বলা যায়, সেই মিং রাজবংশের প্রথম সম্রাট চু ইউয়ান চাং সর্বপ্রথমে পশ্চিম চীনের ব্যাপক উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। মিং রাজবংশের সৈন্যরা মধ্য চীনের উন্নত চিন্তা ধারা ও সংস্কৃতি এই পশ্চাত্পদ অঞ্চলে এনে দিয়েছেন এবং স্থানীয় অর্থনীতি ও সংস্কৃতির উন্নয়ন ত্বরান্বিত করেছিলেন। এটা কি আমাদের তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের এখনকার ঐতিহাসিক দায়িত্ব নয়? আমরা স্বেচ্ছাসেবকরা শুধু "এক বছরের সময় দিয়ে, একটি চির-অবিস্মরণীয় ভাল কাজ করবো। তারা এই সীমান্ত অঞ্চলে ছয়'শ বছর ধরে শেকড় গেঁড়ে বসবাস করে আসছেন। তাদের তুলনায় আমাদের ত্যাগ স্বীকার কিছু নয়।
|