সৌন্দর্যের প্রতি অনুরাগ নারীদের সহজাত । জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ার সংগে সংগে চীনের নারীরা নিজেদের শ্রীবৃদ্ধির উপরে আরো বেশী করে নজর রাখছেন । তাঁদের অধিকাংশই মনে করেন , মেয়েদের তন্বী ও সুগঠিত দেহ কমনীয় । তাই 'সৌসেন ' শব্দটি চীনে ক্রমশই প্রচলিত হয়েছে । চীনা ভাষায় 'সৌসেন ' শব্দটির মানে দেহের স্থুলত্ব কমানো।
মাদাম লিউলিং দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ছংছিং শহরে বসবাস করেন , তিন মাস আগে তিনি মা হয়েছেন । সন্তান জন্ম দেয়ার আগের চেয়ে তিনি অনেক মোটা হয়েছেন । তিন মাসের প্রসুতিকালীন ছুটি কাটানোর পরে তিনি আবার কাজ করতে অফিসে যাবেন ।তাঁর সহকর্মীদের সামনে তাঁর নতুন রুপ যাতে দেখাতে না হয়,তার জন্য তিনি সম্প্রতি ছংছিং শহরে নারীদের একটি ক্রীড়াচর্চা কেন্দ্রে নাম লিখিয়েছেন । তাঁর বাসনা: তিনি মাস ধরে শরীর চর্চার পর তিনি আবার পাতলা হবেন ।তিনি বলেছেন : কিছু দিন আগে আমার সন্তান হয়েছে । মাসখানেক পর আবার অফিসে গিয়ে কাজ করতে হবে । আমি মনে করি , অফিসে যাওয়ার আগে আমার স্বাভাবিক চেহারা ফিরিয়ে আনতে হবে । তাই আমি এখানে শরীরচর্চা করতে এসেছি । শরীর চর্চা করার পর আমার শরীর যদি আগের মত হয়ে যায় তাহলে আমার মনোবৃত্তিও স্বাভাবিক হবে, এবং অনায়াসে সহকর্মীদের মধ্যে মিশে যাওয়া সম্ভব হবে ।
এখন লিউ লিন প্রতিটি সপ্তাহে নিয়মিত ক্রীড়াচর্চা কেন্দ্রে গিয়ে সংগীতের তালে তালে দেহ গঠনের ব্যায়াম করেন । দেহ গঠনের ব্যায়াম করতে দৈহিক শক্তি লাগে বেশী । অনেক বছর হলো দেহ গঠনের ব্যায়াম চীনা নারীদের মধ্যে প্রচলিত হচ্ছে । ক্রীড়াচর্চা কেন্দ্র ছাড়া চীনের অনেক টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠানেও দেহ গঠনের ব্যায়াম দেখানো হয় । বাড়িতে টিভি সেট খুলে দেখতে দেখতেও তা শিখা যায় ।
দেহ গঠনের ব্যায়াম ছাড়া ভারত থেকে আমদানিকৃত "যোগ"ব্যায়ামও চীনের নারীদের কাছে সমাদৃত হয়েছে । সি আর আইয়ের সংবাদদাতা দক্ষিন চীনের কুয়াংতং প্রদেশের সেন জেন শহরের একটি যোগ ব্যায়ামাগারে গিয়ে দেখলেন , চর্চাকারীরা কোর্চের পরিচালনায় যতদুর সম্ভব একটার পর একটা ভংগিমা করছেন, প্রতিটি ভংগিমা করার সংগে সংগে দু থেকে তিনবার দীর্ঘ শ্বাস নিচ্ছেন । পরীক্ষা থেকে জানা গেছে , যোগ ব্যায়ামের সমস্ত ভংগীমা সমাপ্ত করতে দেহে যেটুকু শক্তি ব্যয় হয় তা একটি টেনিস বল খেলায় ব্যয়িত দেহের শক্তির সমান । সুতরাং দীর্ঘকাল ধরে যোগ ব্যায়াম করে দেহের স্থুলতা কমানো যায় । মিস ছেন হং জুন এখন এই যোগ ব্যায়ামাগারে যোগ ব্যায়াম শিখছেন , তাঁর বয়স বিশের কাছাকাছি ,ছিপছিপে চেহারা তাঁর। যোগ ব্যায়ামের সুবাদে তার এখন তাঁর শরীর হয়েছে সুডৌল ।তিনি বলেছেন:আমি মনে করি , যোগ ব্যায়াম আমার পক্ষে প্রজোয্য । আগে আমি মোটা ছিলাম । যোগ ব্যায়াম করার পর আস্তে আস্তা পাতলা হয়েছি । গত বছর থেকে এই বছর পর্যন্ত আমার ওজন অপরিবর্তিত । তাই আমি বিশ্বাস করি , যোগ ব্যায়াম করতে থাকলে নিশ্চয় শরীরের উপকার হয় । এই ব্যায়াম করার সংগে সংগে দেহের পেশী আপনা আপনি আন্দোলিত হয় ।আমি মনে করি , যোগ ব্যায়াম আমার দেহের স্থুলতা কমানোর একটি সফল উপায় ।
যোগ চর্চায় অংশগ্রহণকারী নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধির সংগে সংগে চীনে যোগচর্চার স্থানও বেড়েছে । পুর্বপেইচিংঙের একটি যোগ ব্যায়াম কেন্দ্র খোলা হয়েছে অর্ধেক বছর আগে । এই কেন্দ্র বড় নয় , কিন্তু তার সদস্যসংখ্যা দুশো ছাড়িয়ে গেছে । এই যোগ ব্যায়াম কেন্দ্রের উপদেষ্টা মি: ছেং ছুন সি আর আইয়ের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন , গত দু এক বছরের মধ্যে পেইচিংয়ে প্রায় একশোটি যোগব্যায়াম কেন্দ্র খোলা হয়েছে । তিনি বলেছেন :যোগ ব্যায়ামকে একটি বিশেষ ব্যায়াম বলা যায় । চর্চার সময়ে শরীরের অংগপ্রত্যংগের অবিরাম প্রসারন ও সংকোচনে দেহের ভেতরের নি:সরণের ভারসাম্য সৃষ্টি হয় । ফলে চর্চাকারীদের দেহ স্বাভাবিক হয়ে আসে , কৃশও নয় ,মোটাও নয় ।
গত কয়েক বছরে যোগব্যায়াম ছাড়া চীনের ঐতিহ্যিক অংগমর্দন ও উপযুক্ত খাবার ভোজণের সমন্বয়ে দেহের স্থুলতা কমানোর পদ্ধতিও চীনে প্রচলিত হয়েছে ।
চীনের বৃতততম শিল্প নগর সাংহাইয়ে "প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নামে একটি বিউটি পার্লারে দেহের স্থুলতা কমানোর এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছে অনেক বছর ধরে। মিস লি ওয়েন হুয়া এই বিউটি পার্লারের সদস্য । তিনি দীর্ঘকায়া ,মুখ টকটকে লাল , এক বছর আগে মোটা শরীর নিয়ে তিনি যে চিন্তিত ছিলেন তা এখন কল্পনাতীত ।তিনি বলেছেন :অতীতে কিছুক্ষণ হেঁটে ক্লান্তি বোধ হত ।এখন আমার ওজন মাত্র ৫৫ কিলোগ্রাম । টানা আধ ঘন্টা ব্যায়্যম করেও ক্লান্ত হই না। এখানকার কর্মীরা আমাকে প্রতুল তন্তু বিশিষ্ট যে খাবার খেতে দেন , তা তরকারি ও ফল দিয়ে তৈরী ।তারপর উদ্ভিদ দিয়ে তৈরী বিশেষ ধরনের তেল গায়ে মেখে অংগমর্দন করা হয় ।এর কাজ হয়েছে আশাপ্রদ ।
প্রথম দিকে মিস লি তিনদিনে একবার করে বিউটি পার্লারে যান । এখন সপ্তাহে মাত্র একবার ।
দেহের স্থুলতা কমানোর নানা পদ্ধতির খরচ সমান নয় ।কোনোটির খরচ বিশ-তিরিশ ইউয়ান , কোনোটির খরচ কয়েকশো ইউয়ান। তবে চীনের বহু নারী সৌন্দর্যের জন্য টাকা খরচ করতে দ্বিধাবোধ করেন না । পুর্বচীনের জে জিয়াং প্রদেশের রুই আন শহরের মাদাম হে সিউ হং এই প্রসংগে বলেছেন:এখন মানুষের ভোগ্য পণ্যের অভাব নেই । অভাব শুধু স্বাস্থ্যের ।তাই এখন স্বাস্থ্যের জন্য টাকা খরচ করতে মেয়েদের সংকোচ নেই ।
মাদাম হো সিউ হংও নারীদের জন্য একটি শরীরচর্চা ক্লাব খুলেছেন । তাঁর ক্লাবে ব্যায়াম করতে আসা নারীদের সংখ্যা দিনের পর দিন বাড়ছে ।
ব্যায়াম ছাড়া খাওয়া-দাওয়ার উপরেও চীনের নারীরা নজর রাখছেন । মাংস এবং চিনি আর চর্বি বহুল খাবারের বদলে শাকসবজি, ফল মাছ এখন তাঁদের প্রিয় খাদ্যদ্রব্য । সুডৌল শরীরই তাঁদের অভীষ্ট লক্ষ্য ।
|