জাপানের সব ট্যাক্মিই পরিবেশ -সহায়ক।ট্যাক্সিগুলো শুধু যে প্রাকৃতিক গ্যাস চালিত তাই নয় ট্যাক্সিগুলোর বিষাক্ত গ্যাস নি:সরণ রোধেও বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। যার ফলে ট্যাক্সির অতিরিক্ত ব্যয় বাঁচানো হয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের দূষণও কমে গিয়েছে।টোকিওর হাওয়া টাটকা এবং আকাশ পরিষ্কার। পরিবেশ সংরক্ষণে ট্যাক্সির অবদান খুব স্পষ্ট।
প্রতি দিন টোকিওর ছোট-বড় রাস্তায় ৫০ হাজারেরও বেশী ট্যাক্সি যাতায়াত করে। এ সব ট্যাক্সির মধ্যে ৪০ হাজারেরও বেশী বিভিন্ন ট্যাক্সি কোম্পানির , আর অন্য ১০ হাজারেরও বেশী ব্যক্তিগত গাড়ী। ট্যাক্সিগুলোর মধ্যে বেশির ভাগ জাপানের তৈরী টয়োটা ইত্যাদি। বিদেশী গাড়ী রাস্তায় খুব কম দেখা যায়। মেরামতের সুবিধার কারণে জাপানীরা স্বদেশীয়পছন্দ করেন। তা ছাড়া, জাপানের গাড়ীর দাম অপেক্ষাকৃতভাবে যৌক্তিক, নানা ধরনের নিরাপত্তা প্রযুক্তি বিশ্বের শীর্ষমানে বজায় রয়েছে। সুতরাং জাপানীরা স্বদেশী গাড়ী চালাতে পছন্দ করেন।
জাপানের ট্যাক্সির পরিসেবা অত্যন্ত ভাল। প্রয়োজনে এবারকার টেলিফোন করলেই ব্যস। পাঁচ থেকর ৮ মিনিটের মধ্যে ট্যাক্স চলে আসবেই। জাপানের পরিবহণ ব্যবস্থা অগ্রসর তথ্যায়ন প্রযুক্তির দ্বারা পরিচালিত । প্রত্যেকটি গাড়ীতে অবস্থান-নিধার্নের ব্যবস্থা আছে। ব্যবস্থাপনাকমীর্রা অফিসে বসে প্রত্যেকটি গাড়ীর অবস্থান দেখতে পারেন। তারাও জানেন কোন ট্যাক্সি খালি আছে। সুতরাং যাত্রীট্যাক্সি চালককে গন্তব্যস্থান মুখে না বললেও চালক ব্যবস্থাপনা ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানতে পারেন।
জাপানে ঘনঘন ভূমিকম্প ঘটে বলে প্রত্যেক ট্যাক্সিতে জরুরী টেলিফোনের ব্যবস্থা আছে। যে কোনো সময় ত্রাণ কার্যালয় আর সংবাদমাধ্যমগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় এবং প্রয়োজন হলে আশ্রয় নেওয়ার ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যায়। জাপানে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ট্যাক্সি আছে। তারা হুইল-চেয়ারে বসে বসে ট্যাক্মিতে উঠতে পারেন।জাপানে গাড়ী রাস্তারবাম দিকে চলাফেরা করে। গাড়ীর বাম দিকের পিছনের দরজা স্বয়ংক্রিয়। সুতরাং যাত্রীগাড়ীতে উঠার পর গাড়ীর দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়। গ্রীষ্মকালে গাড়ীতে এয়ার কন্ডিশনার আছে, শীতকালে গাড়ীতে হীটার আছে। গাড়ীর ভিতরের চেয়ারের উপর তুষরের সাদা কাপড় বিছিয়ে নেওয়া হয়। অফিসের কর্মচারীদের মতো ট্যাক্মি চালকদের কাপড়-চোপড়ের দিকেও বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। ট্যাক্সি চালকরা সব সময় ফিটফাট থাকেন। গ্রীষ্মকালে তারা সাদা শার্ট এবং টাই পরেন। বসন্ত, শরত এবং শীতকালে তারা কোর্ট পরেন। সাধারণত ট্যাক্সি চালক বেশী কথা বলতে পছন্দ করেন না। তাই যাত্রী তাকে ঠিকানা বলার পর নিশ্চিন্তে গাড়ীতে বিশ্রাম নিতে পারেন। চালক মোটেই করেন না। যদি যাত্রীকিছু প্রশ্ন করতে চান তাহলে চালক সঙ্গে সঙ্গে তার প্রশ্নের উত্তর দেন।
গাড়ীতে অবস্থান নির্ধারনের ব্যবস্থা আছে বলে ব্যবস্থাপনা কর্মীরা সব সময় গাড়ীগুলোর উপর নজর রাখতে পারেন। ট্যাক্মি চালকরা ফাঁকি দেওয়ার সাহস পান না। অতিথি অথার্ত যাত্রীরা থাকলে তারা উপেক্ষা করতে পারেন না। আর যাত্রী না থাকলে তাদের সক্রিয়ভাবে যাত্রীর সন্ধনে করতে হবে। কাজেই জাপানের ট্যাক্সি চালকদের মেজাজ সাধারণত তিরিক্ষি। যদি সামনের গাড়ীর গতি একটু মন্থর হয়, তাহলে তাঁরা গাড়ীর হর্ণ বাজিয়ে থাকেন।
জাপানে ট্যাক্মি চালকদের আয় অপেক্ষাকৃত কম। সুতরাং তাদের খুব পরিশ্রম করতে হবে। ট্যাক্সি চালকদের অধিকাংশের বয়স ষাটের উপর। তাদের মধ্যে অনেকেই অবসর নেয়ার পর বিশ্লাম নেন না। কিন্তু জাপানে ট্যাক্সি চালকদের নিরাপত্তার সমস্যা নেই। জাপানে লুটপাট আর চুরিচামারি মাঝে মাঝে দেখা গেলেও ট্যাক্সি চালকের উপর লুটপাট খুব কম ঘটে। চালক আর যাত্রীর আসনের মাঝখানে লোহার বেড়া নেই। চালক আর যাত্রীর মধ্যে পারষ্পরিক আস্থার সম্পর্ক বিরাজমান।
|