দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের তিব্বত স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের লাসা শহরে অবস্থিত তাচাও সি নামে একটি প্রসিদ্ধ মন্দিরে উপাসনার জন্য প্রতিদিন সহস্রাধিক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ভীড় করেন। মন্দিরে নিমাছিরেন নামে একজন অল্পবয়সী কর্মী আছেন। তাঁর বর্ণনা থেকে বহু দেশ বিদেশের পর্যটকরা তাচাও মন্দির আর তিব্বতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বেশি জেনে নিয়েছেন। সুতরাং লোকেরা আন্তরিকভাবে তাঁকে এই মন্দিরের প্রতিনিধি বলে অভিহিত করেন।
তাচাও মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় ১ হাজার তিন শো বছর আগের থাং আমলে। চারতলাবিশিষ্ট এই মন্দিরের মেঝের আয়তন ২৫ হাজার বর্গ মিটার। মন্দিরটিতে তিব্বতী ও হান জাতি এবং নেপাল ও ভারতের স্থাপত্য নিদর্শনের রয়েছে। মন্দিরটিতে প্রায় এক হাজার মিটার দীর্ঘ তিব্বতী চিত্র, বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা সাক্যমুনির মূর্তি প্রভূতি বৌদ্ধ মূতি সংরক্ষিত রয়েছে। এয়োদশ শতাব্দি থেকে মন্দিরটি দিন দিন সমৃদ্ধিশালী হয়ে উঠে এবং ধীরে ধীরে ধর্মীয় তীর্থস্থলে পরিণত হয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সন্ন্যাসী হিসেবে এই মন্দিরে সারা জীবন কাটানোর বাসনা সবচেয়ে প্রবল। নিমাছিরেনও এমন একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী।
লাসা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে লিন্চৌ জেলার একটি কৃষক পরিবারে ৩৭ বছর বয়স্ক নিমাছিরেনের জন্ম হয়। তাঁর বাবা মাও নিছক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। পরিবারের প্রভাবে তিনি ছোট বেলা থেকেই সন্ন্যাসী হওয়ার প্রতিজ্ঞতা করেন। তিনি বলেছেন, ছোট বেলা থেকেই আমি বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারে প্রভাবিত হয়েছি। স্কুলে ভর্তি হবার পর আমি আবিস্কার করেছি যে, তিব্বতের ইতিহাসের যারা জ্ঞানী এবং শ্রদ্ধেয় তাদের বেশির ভাগই মন্দির থেকে এসেছেন। আমি তাঁদের খুব সম্মান করি এবং আমি সন্ন্যাসী হওয়ার জন্য একটি মন্দিরে প্রবেশ করার আশাও প্রকাশ করেছি। তাচাও মন্দির তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের একটি কেন্দ্র, এখানে আসতে পেরে আমি গৌরব বোধ করেছি।
১৯৮৫ সালে মন্দিরটিতে সন্ন্যাসী হওয়ার পরবর্তী কিছু দিনের মধ্যে নিমাছিরেন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তার পর তিনি মন্দিরের অভ্যর্থনা বিভাগে একজন গাইডের দায়িত্ব পালন করেছেন।
তখন যেহেতু তিনি শুধু তিব্বতী ও হান ভাষা জানতেন, সেহেতু বিদেশী পর্যটকদের ব্যাখ্যা করার জন্য আরেকজন ইংরেজি দোভাষী লাগতো। তিনি ইংরেজি জানতেন না বলে কাজে দারুন অসুবিধা অনুভব করতেন। তিনি কৃর্তপক্ষের কাছে ইংরেজি শেখার আশা প্রকাশ করেন। পরের বছরে তিনি ন'মাস মেয়াদী একটি ইংরেজি প্রশিক্ষণ কোর্সে যোগ দিয়েছেন। মন্দিরে ফিরে যাওয়ার পর বিদেশী পর্যটকদের সংগে আদান-প্রদান তার ইংরেজি মান আরো উন্নত হয়েছে এবং তিনি পুরোপুরি গাইডের কর্তব্য সম্পন্ন করতে সক্ষম।
বৌদ্ধ ধর্মের জ্ঞান আর তিব্বতী ও হান জাতির সংস্কৃতির মান উন্নত করার জন্য কর্তৃপক্ষ তাকে উচ্চ পর্যায়ের তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্ম ইনস্টিটিউটে পাঠিয়েছে। দু'বছর ধরে অধ্যয়নের মাধ্যমে এ সব ক্ষেত্রে তার সার্বিক উন্নতি হয়েছে। এখন তার কাজ পর্যটকদের উচ্চ মূল্যায়ন পেয়েছে।
৬৯ বছর বয়স্ক তেবাচ্যুংসে তিব্বতের পশ্চিম সীমান্তের একটি গ্রাম থেকে এসেছেন। তিনি একজন নিছক তিব্বদী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তিনি প্রতিবছর তাচাও মন্দিরে উপাসনা করতে আসেন এবং নিমাছিরেনের ব্যাখ্যা শুনেন । তিনি বলেছেন, নিমাছিরেনের প্রচুর বৌদ্ধ ধর্মীয় জ্ঞান আছে। তিনি একাগ্রচিত্তে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বহু পর্যটক তার কথা শুনতে পছন্দ করেন। নিমাছিরেন মন্দিরের শ্রেষ্ঠ গাইডে পরিণত হয়েছেন। তিনি পর পর চীনের প্রাক্তন প্রেসিডেণ্ট চিয়াং জেমিন,বর্তমান প্রেসিডেণ্ট হু চিনথাও আর বহু বিদেশী বিশিষ্ট অতিথিদের জন্য মন্দির সম্পর্কিত বর্ণনা করেছেন। তার কাজ দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ব্যাপক প্রসংশা পেয়েছে।
কাজের অবসরে তিনি মন দিয়ে বৌদ্ধ মাস্ত্রীয় পুঁথি অধ্যয়ন করেন। তিনি বলেছেন, আমার সবচাইতে বড় আশা আকাংক্ষা একজন নীতিপরায়ন ও জ্ঞানী লামা হওয়া। শাস্ত্রীয় পুঁথি অধ্যয়নের সংগে সংগে আমি প্রচুর তিব্বতী জাতির সংস্কৃতি ও বৌদ্ধ ধর্মীয় জ্ঞানের অধিকারী হবো, যাতে এ সব তথ্য দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে তুলে ধরা যায়।
ছবি
|