চীনা জনগণের জাপানী আগ্রাসন বিরোধী যুদ্ধে বিজয় লাভের ষাটতম বার্ষিকী এবং বিশ্বের ফ্যাসিবাদ বিরোধী যুদ্ধে বিজয় লাভের ষাটতম বার্ষিকী উপলক্ষে জাপানী যুদ্ধাপরাধীদের স্বীকারোক্তি নামে দশখন্ডবিশিষ্ট একটি বই পেইচিংয়ে প্রকাশিত হয়েছে । চীনে যে ৪৫জন জাপানী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয়েছিল তাঁদের স্বীকারোক্তি এই বইতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ।
১৯৪৯ সালে নয়াচীন প্রতিষ্ঠার পর চীনের বন্দীশালায় এক হাজারেরও বেশী জাপানী যুদ্ধাপরাধী আটক ছিলেন ১৯৫৪ সালে চীনের সর্বোচ্চ অভিসংসক বিভাগ তদন্ত চালানোর পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে । অধিকাংশ যুদ্ধাপরাধী খোলাখুলিভাবে তাদের অপরাধ স্বীকার করেছিলো । তাদের অপরাধ অপেক্ষাকৃত লঘু বলে ১৯৫৬ সালে তাদের মুক্তি দেয়া হয় । চীনের সর্বোচ্চ গণ আদালত প্রকাশ্যে যে ৪৫জন জাপানী যুদ্ধাপরাধীর বিচার করেছে উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসার হিসেবে তারা গুরুতর অপরাধ সাধন করেছিল । তাদের মধ্যে ছিল জাপানী স্থল বাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট জেরারেল সুজুকি কেইকুরো । সে চীনে পৈশাচিক নির্মুলীকরণ অভিযান পরিচালনা করেছিল ।
চীনের কেন্দ্রীয় ঐতিহাসিক দলিল সংরক্ষণাগারের কর্মকর্তা মাদাম চাও ইয়ু জিন এই প্রসঙ্গে বলেছেন :জাপানী সাম্রাজ্যবাদীরা যে চীনের সার্বভৌমত্ব কুক্ষিগত করেছিল ও চীনে আগ্রাসী নীতি কার্যকরী করেছিল এবং জাপানী বাহিনী জীবানু অস্ত্র তৈরী করেছিল , চীনের গ্রামগঞ্জ ধ্বংস করেছিল , নির্বিচারে চীনাদের গুলি করে হত্যা করেছিল আর চীনা নারীদের ধর্ষন করেছিল তা এই সব যুদ্ধাপরাধীদের স্বীকারোক্তিতে প্রতিফলিত হয়েছে ।তবে তারা যে সব অপরাধ স্বীকার করেছে তা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে জাপানী সাম্রাজ্যবাদীদের অপরাধের একটি অংশ মাত্র ।
জাপানী যুদ্ধাপরাধীদের স্বীকারোক্তি নামক পুস্তকে প্রচুর ঐতিহাসিক ছবিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । এই পুস্তকের প্রধান সম্পাদক, চীনের কেন্দ্রীয় ঐতিহাসিক দলিল সংরক্ষণাগারের গবেষক মাদাম লিউ মেই লিং এই পুস্তকের প্রকাশনা প্রসঙ্গে বলেছেন:এই পুস্তকে যুদ্ধাপরাধীদের স্বীকারোক্তি ও চীনা ভাষার অনুবাদ ছাপানো হয়েছে । চীনের কেন্দ্রীয় ঐতিহাসিক দলিল সংরক্ষণাগার গত শতাব্দির আশির দশক থেকে চীনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানী হানাদার বাহিনীর চালানো আগ্রাসী যুদ্ধ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক দলিল সুবিন্যাস্ত করে একাধিক বই প্রকাশ করেছে । তবে জাপানী যুদ্ধাপরাধীদের স্বীকারোক্তি নামক পুস্তকে সংগৃহীত তথ্যাদি অধিক পরিপূর্ণ ও মুল্যবান । তিনি মনে করেন , জাপানের দক্ষিণপন্থীরা ইচ্ছাকৃতভাবে ইতিহাসের পাঠ্যবই বিকৃত করে আগ্রাসী যুদ্ধকে শোভনীয় করে দেখানোর যে অপচেষ্টা চালাচ্ছে জাপানী যুদ্ধাপরাধীদের স্বীকারোক্তি নামক পুস্তক তাকে ব্যর্থ করে দেবে ।
তিনি বলেছেন ,গত শতাব্দির আশির দশক থেকে জাপান সরকারের মুষ্টিমেয় নেতা ও দক্ষিণ পন্থী শক্তি উন্মত্ত হয়ে সমরবাদের পুনর্জীবনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে । আমি ও আমার সহকর্মীরা ঐতিহাসিক দলিল পড়ে জানতে পেরেছি যে , এই সব জাপানী যুদ্ধাপরাধী নৃশংস অপরাধ করেছিল এবং নি:সংকোচে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করেছে ।কিন্তু জাপানের দক্ষিণ পন্থীরা জাপানী সমরবাদীদের পাশবিক অপরাধ স্বীকার করতে চায় না । জাপানের দক্ষিণ পন্থীদের চীন বিরোধী অভিযানের উপর পাল্টা আক্রমন চালানোর জন্যই আমারা ৪৫জন জাপানী যুদ্ধাপরাধীর স্বীকারোক্তি প্রকাশ করেছি ।
|