v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-08-12 16:34:17    
ছিতেইয়াংচিং আর তার তিব্বতী মুরগি

cri
    প্রতিদিন যখন ভোর হতে না হতে , তখন ছিতেনিয়াংচিং তাড়াহুড়া ঘুম থেকে উঠেন । তাকে তার গৃহপালিত দুশাধিক তিব্বতী মুর্গীকে খাবার পোষতে হয় । তিব্বতী মুরগ-মুরগী খাবার নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তার কাছে দৌঁড়াদৌঁড়ি করে , তারা সংগে সংগে ক্ ক্ ক্ শব্দে ডাকে । এই সব দেখে তিনি খুব খুশি হন । তিনি তার সযত্নে পালিত মুরগ-মুরগী দিন দিন বড় হওয়ার অপেক্ষায় আছেন । এ সব মুরগী বিক্রি করে বেশি আয় পাওয়া যাবে ।

    ৪১ বছর বয়স্ক ছিতেননিয়াংচিং লাসা শহরের ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ - পূর্বে অবস্থিত কুংপুচিয়াংদা জেলার চুংশা গ্রামে বাস করেন । এটা মালভূমির এমন একটি উপত্যকা, যার উচ্চতা সমুদ্র-সমতলের তুলনায় সাড়ে তিন হাজার মিটার উঁচু । তার দু' সন্তান লেখাপড়া করছে । বড় ছেলে দক্ষিণ পূর্ব চীনের ফুচিয়েন প্রদেশের সিয়ামেন মেডিকেল ইনষ্টিটিউটে পড়ছে । তিব্বতী মুরগী লালন পালন না করার আগে তিনি ও তার স্বামী তাদের দু'সন্তানের শিক্ষার ফি বহন করতে পারতেন না । প্রতি বছরের মে ও জুন মাস তিব্বতে মূল্যবান বনৌষধি ওষুধ সংগ্রহের মৌসুম । স্বামী দু'সন্তানকে নিয়ে পাহাড়ে উঠে বনৌষধি ওষুধ সংগ্রহ করতেন । এগুলো বিক্রি করে যে আয় করা হতো , তা দিয়ে সন্তানদের শিক্ষার ফি জমা দেয়া হতো এবং পারিবারিক জীবনযাপনের ভার বহন করা হতো ।

    ২০০২ সালে স্থানীয় সরকারের উত্সাহ আর সাহায্যে ছিতেনিয়াংচিং তিব্বতী মুরগী পালন করতে শুরু করলেন । তিনি থানা সরকারের দেয়া ৫ শো ইউয়ান ঋণ ব্যবহার করে কয়েক ডজন মুরগীর বাচ্চা কিনেছেন । তিনি সযত্নে মুরগীর খাবার তৈরী করে তাদের পোষেন । মুরগীর বাচ্চারা ধীরে ধীরে বড় হয়েছে , তাদের ডিমও অধিক থেকে অধিকতর হয়েছে । পরের বছর তিনি শুধু তিব্বতী মুরগী আর ডিম বিক্রির উপর নির্ভর করে ৫ হাজার ইউয়ান আয় করেছেন । তার পর শুধু বনৌষধি সংগ্রহ আর বিক্রি করার জীবন শেষ , তার পারিবারিক জীবনযাপনের মান দিন দিন উন্নত হয়েছে ।

    ছিতেনইয়াংচিং-এর দু'তলাবিশিষ্ট বাসায় স্বাগতিক সংবাদদাতাকে সুস্বাদু মাখন চা খেতে দিলেন । বৈঠকখানায় দু'মিটার উঁচু একটি রিফ্রিজ্যারেটর আর একটি ২৫ ইঞ্চি রঙ্গিণ টেলিভিশন রাখা হয় । পাশে একটি ভি সি ডি আর একটি টেলিফোন আছে । তিনি এই টেলিফোনে দক্ষিণ চিনের সিয়ামেন শহরে শিক্ষারত ছেলের সংগে কথাবার্তা বলেন । তার পালিত দুশতাধিক তিব্বতী মুরগী প্রসংগে তিনি বলেছেন ,

    তিব্বতী মুরগী পালিত হবার পর আমার পরিবারের জীবনযাপনের মান অনেক উন্নত হয়েছে । আমরা মুরগী আর ডিম বিক্রি করে অনেক আয় করেছি ।

    কুংপুচিয়াংদার তিব্বতী মুরগী তিব্বতে সমুদ্র-সমতলের তুলনায় ৩ হাজার মিটারেরও বেশি উঁচু মালভূমিতে পালিত হয় । তারা বাইরে স্বচ্ছন্দে চরে । ছোট হলে তাদের মাংস খুবই উত্কৃষ্ট । স্থানীয় অধিবাসীরা গৌরবের সংগে বলেন , তাদের তিব্বতী মুরগী মালভূমির মূল্যবান বনৌষধি আর দূষণমুক্ত বিশুদ্ধ পানি খায় । গত কয়েক বছরে তিব্বতে তিব্বতী মুরগী খুব পরিচিত হয়েছে এবং জাপানের কাছে রফতানি করা হয়েছে । বিদেশের কাছে একটি তিব্বতী মুরগী রফতানি করা হলে ৪০ থেকে ৫০ ইউয়ান আয় করা হয় । ডিমের দাম এক ইউয়ান একটি । এই অঞ্চলের উন্নয়নে তিব্বতী মুরগী পালন করার ব্যাপক ভবিষ্যত-সম্ভাবনা আছে । স্থানীয় কর্মকর্তা ইয়াং তু সিয়াং বলেছেন ,

    কৃষক আর পশুপালকদের নগদ আয় বাড়ানোর জন্য আমাদের কুংপুচিয়াংদা জেলায় স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন তিব্বতী মুরগী পালনের ব্রত বিকশিত হয়েছে । এর সংগে সংগে শাক শবজি বপনের কাজও সম্প্রসারিত হয়েছে । এই সব কাজ চালানোর জন্য যেমন কোম্পানি তেমনি কৃষক পরিবারের শক্তির ওপর নির্ভর করা হচ্ছে । এখন দক্ষিণ পশ্চিম চীনের মহানগরী ছুংছিং শহরের সিছুয়ান নামে কোম্পানি এই দুটো কাজে যোগ দিয়েছে । তারা এখানে কারখানা স্থাপন করেছে । কৃষক পরিবারের কাছ থেকে তিব্বতী মুরগী কিনে যে পণ্য দ্রব্য তৈরী হয়েছে , তা জাপানের কাছে রফতানি করা হয়েছে । গত বছরে এই কারখানা চালু হবার পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে আমাদের জেলায় এই ক্ষেত্রে ১ লক্ষ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার আয় করা হয়েছে ।

    চুংশা থানার দায়িত্বশীল ব্যক্তি কাও কুও ছুং সংবাদদাতাকে বলেছেন , তার থানায় ছিতেনইয়াংচিং একজন ধনী কৃষকে পরিনত হয়েছেন । তিব্বতী মুরগী পালনের মাধ্যমে ধনী হবার জন্য থানা সরকার আরো বেশি কৃষককে উত্সাহ দেবে । তাদের সহায়তা দেয়ার জন্য যেমন ভরতুকী দেয়া হবে , তেমনি প্রযুক্তির দিক থেকে তাদেরকে আরো বেশি সাহায্য দেয়া হবে ।তিনি বলেছেন ,

    আমাদের জেলার কৃষি আর পশুপালন ব্যুরো তাদের প্রত্যক্ষ প্রযুক্তিগত সমর্থন দেয় । তাদের তিব্বতী মুরগী পালনের প্রক্রিয়ায় যদি সংক্রামক রোগ প্রকোপ দেখা দেয় , তাহলে এ সম্পর্কিত তথ্য থানা সরকারের কাছে রিপোর্ট করা হবে । তার পর জেলার বৈজ্ঞানিক আর প্রযুক্তিগত বিভাগের মাধ্যমে রোগ প্রাদুর্ভাব রোধ করতে তাদের কাছে প্রযুক্তিবিদদের পাঠানো হবে ।

    কুংপুচিয়াংদা জেলার একজন কর্মকর্তা ইয়াং তু ইয়াং বলেছেন , তাদের জেলায় তিব্বতী মুরগী পালন শিল্প এ পর্যন্ত শুধু প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। সমগ্র জেলায় তিব্বতী মুরগী পালনের পরিবার মাত্র ৩ শোরও কম । সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক আর পশুপালকের জীবনযাপন বনৌষধি আর বেঙের ছাতা সংগ্রহের ওপর নির্ভর করে । সুতরাং আরো বেশি স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন তিব্বতী মুরগী পালন পরিবার সৃষ্টি করার জন্য স্থানীয় সরকার কতকগুলো সহায়তা আর উত্সাহমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে ।

    আমাদের কুংপুচিয়াংদা জেলায় ব্যাপকভাবে কৃষক আর পশুপালকদের তিব্বতী মুরগী পালন পরিবারকে যথেষ্ট সাহায্য দেয়া হয়েছে । সেজন্য জেলায় সংশ্লিষ্ট উত্সাহ আর পুরস্কারমূলক নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে । যেমন যারা একটি তিব্বতী মুরগী বিক্রি করে তাদেরকে ৫ ইউয়ানের পুরস্কার দেয়া হয় ।

    ছিতেনইয়াংচিং কুংপুচিয়াংদার এই লোক সংগীত গাইতে খুব পছন্দ করেন । যখন সংবাদদাতা তার কাছ থেকে বিদায় নিলেন , তখন তিনি বলেছেন , তিনি ভবিষ্যতে একটি তিব্বতী মুরগী পালন খামার গড়ে তুলবেন বলে আশা করেন । ভবিষ্যতে তিনি একটি তিব্বতী মুরগী প্রক্রিয়াকরণ কারখানাও স্থাপন করতে চান । যাতে তিব্বতী মুরগী বিশ্বের বিবিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা যায় ।