v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-08-12 15:11:02    
দারিদ্র্য মুক্ত ও সমৃদ্ধ হওয়ার আশার সৃষ্টিকারী লি ছুংফেনের গল্প

cri
    কুইচৌ প্রদেশের দক্ষিন বুইজাতি ও মিয়াওজাতি স্বায়ত্তশাসিত বিভাগের লোতিয়েন জেলা চীনের এক অতি গরিব জেলা ছিল। দরিদ্র ,অজ্ঞ ও পশ্চাদপদতার বিরুদ্ধে কঠোর ও দুরুহ সংগ্রাম চালানোর সময় শাকসব্জিরখাতের বিজ্ঞানীও প্রযুক্তিবিদরা শাকসব্জি চাষের কৌশল বুইজাতি আর মিয়াওজাতির কৃষক-ভাই-বোনদেরশিখিয়েছেন , তারা অনুর্বরপাহাড়ী অঞ্চলের মাঠে দারিদ্র্য বিমোচন ও ধনী হওয়ার আশা সৃষ্টি করেছেন এবং সেখানকার মানুষের সঙ্গে মিলিতভাবে ফসলের আনন্দ উপভোগ করেন ।

    লোতিয়েন জেলার শাকসব্জি উত্পাদন কেন্দ্রের প্রধান লি ছুংফেন এই সব বিজ্ঞানী আর প্রযুক্তিবিদের মধ্যে একজন ।তিনি ১৯ বছর ধরে দরিদ্র পাহাড়ী অঞ্চলে থেকে সংখ্যালঘূজাতির অধিবাসীদের সঙ্গে সুখ-দুঃখ উপভোগ করে আসছেন এবং তাদের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সভ্যতা প্রচার করে আসছেন ।

    ১৯৮৬ সালের জুলাই মাসে ১৮ বছর বয়সী লিছুংফেন হুয়াসি বৃত্তিমূলককৃষি বিদ্যালয় থেকে স্নাত্তক হন , তিনি কয়েকজন সহপাঠির সাথে লোতিয়েন জেলায় যাওযার পদক্ষেপ নিলেন । এর পর থেকে এপর্যন্ত তিনি লোতিয়েন জেলায় বদ্ধহয়েছেন ।

    সে বছর সেপ্টেম্বর মাসে জেলাটির কৃষি ব্যুরো তাকে কুয়াংসি চুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সঙ্গে সংলগ্ন হোংসুইহো নামক জেলার এক প্রত্যন্ত পাহাড়ী গ্রামে কাজ করতে পাঠায় । সে সময় থাকা আর খাওয়া সহ সেখানকার কাজের অবস্থা ও পরিবেশ অত্যন্ত কষ্টকর ছিল। এ অবস্থায় লি ছুংফেন প্রায় এক বছর কাটিয়েছেন । লি ছুংফেন কান্না-কাটি করেছিলেন এবং বাসায় ফেরার কথাও ভেবেছিলেন । কিন্তু হাজার বছর ধরে স্থানীয় জনসাধারণ কোনো দিন টাটকা সব্জি খাননি কথাটা শুনে লি ছুংফেন মনে মনে ভাবতেন , না ,আমার এখান থেকে চলে যাওয়া যাবে না ।

    সে সময়কালের কথা স্মরণ করে লি ছুংফেন বলেছেন , এখানে আসার দু দিন পর আমি দেখেছিলাম যে ,এখানকার জনসাধারণ হোংসুই হো নদীর ক্ষুদ্রাকার পাথর লবন দিয়ে রান্না করে তরকারী হিসেবে খেতেন । তারা পাথরগুলো মুখে রেখে চুষতেন এবং তার পর ফেলে দিতেন । এ দৃশ্য দেখে আমি মর্মাহত হই । সত্যিই এখানকার কুষকদের শাকসব্জি অতি প্রয়োজন । এরপর লি ছুংফেন বাড়ি ফেরার চিন্তাছেড়ে দরিদ্র পাহাড়ী এলাকায় শেকড় গাঁড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন ।"আমি শুধু এখানকার সাধারণ মানুষকে শাকসব্জী খাওয়াব না বরং এখানকার শাকসব্জী জেলা ও স্বায়ত্তসাশিত বিভাগের বাইরেও বিক্রি করব ।লি ছুংফেনকে কেন্দ্র করে গঠিত শাকসব্জীর প্রকৌশলীদের কঠোর পরিশ্রমে গোটা লোতিয়েন জেলার ১ লক্ষ ৫০হাজার সংখ্যালঘূ অধিবাসীরা পরপর শাকসব্জী উত্পাদনের মাধ্যমে দারিদ্র মুক্ত হয়ে স্বচ্ছল-জীবনযাপনের পথে প্রবেশ করেছেন।

    নাফিং থানা মিয়াওজাতি অধ্যূষিত এলাকা ,এখানকার কৃষি অত্যন্ত অনুন্নত ছিল । ২০০১ সালের শেষদিকে লি ছুংফেন জেলার শাকসব্জী অফিসের কর্মীদের নিয়ে নাফিং থানায় যান । তারা মিয়াওজাতির অধিবাসীদের সঙ্গে থাকেন , একসঙ্গে খান এবং একসঙ্গে পরিশ্রম করেন ।দ্বিতীয় বছর এখানকার ৫৬টি পরিবারের কৃষকরা ৬৬ হেক্টর জমির শাকসব্জী বিক্রি করে ১ লক্ষ৪০ হাজার রেনমিনপি উপার্জন করেন । নাউ গ্রামের ৫১ বছর বয়সের লুং চিংপাং উদ্বেগের সঙ্গে বলেছেন," শাকসব্জী বিক্রি করে আমি ৫০০০ রেনমিনপি উপার্জন করেছি,আমি ভাবতেও পারি নি ,আমার জীবনে এত বেশী টাকাপয়সা আসবে । এখন আমার বহু বছরের বাড়িঘর মেরামত করার আশা-আকাংক্ষার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে ।

    ১৯৯৭ সালে লি ছুংফেন লোতিয়েন জেলার কৃষি ব্যুরোর উপ-পরিচালক হন।তিনি তার সহকর্মীদের নিয়ে অধ্যাবসায়ের সঙ্গে গবেষনা চালান । প্রথমে তারা ৬৬ হেক্টর জমিতে তার পর ২০০ , ৩০০ এমনকি ৭০০০ হেক্টর জমিতে মরিচ উত্পাদন করেন ।অবশেষে ২০০২ সালে তাদের ধারাবাহিক মরিচ উত্পাদনের পরিমান ২৫ কোটি কেজি হয়েছে এবং উত্পাদনমূল্য ৩০ কোটি রেনমিনপি হয়েছে ।

    দরিদ্র পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষকদের বিজ্ঞানও প্রযুক্তির মান উন্নত করার জন্যে লি ছুংফেন তার সহকর্মীদের সঙ্গে ১৮হাজার কৃষককে প্রশিক্ষন দিয়েছেন এবং এক দল কৃষিবিদ গড়ে তুলেছেন । তাদের প্রচেষ্টায় লোতিয়েন জেলার শাকসব্জীর প্রকার তিন-চার থেকে বাড়তে বাড়তে বর্তমান১৬০-এ দাড়িয়েছে ।এগুলোর মধ্যে ৮০শতাংশ বাজারে সমাদৃত হয়েছে ।

    উত্পাদনের সঙ্গে সঙ্গে লি ছুংফেন পূঁজি আকর্ষণ করার প্রচেষ্টাও করেন ।যার ফলে লোতিয়েন জেলার শাকসব্জীর উত্পাদন পরিমান বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে শাকসব্জী উত্পাদন-শিল্প হাইটেকের দিকে পদার্পন করেছে ।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লোতিয়েন জেলা ৩০ লক্ষইউয়ান মূল্যের সবুজ-প্রকল্প পেয়েছে এবং চারা-লালন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠায়২০ লক্ষ ইউয়ান বিনিয়োগ করেছে ।গোটা জেলার ২৫০০কৃষক পরিবার ২ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সবুজ-শাকসব্জী চাষ করেছেন। গোটা জেলার শাকসব্জীর আয়তনের মধ্যে লোতিয়েন জেলার সবুজ শাকসব্জী-আয়তনের অনুপাত ৫০ শতাংশ । চারালালন কেন্দ্র বছরে দেড় কোটি শাকসব্জী-চারা সবরাহ করায় লোতিয়েন জেলার শাকসব্জীর শিল্পায়নে বিরাট অগ্রগতি হয়েছে ।বতর্মানে লোতিয়েন জেলার ২২টি থানার ১৮৬টি গ্রামের ৩২৮০০কৃষক পরিবার শাকসব্জী চাষ করে। ২০০৪ সালে শাকসব্জী বিক্রি থেকে অর্জিত১৫ কোটি রেনমিনপির আয় ইতিহাসের নতুন রেকর্ড ।

    শাকসব্জীর উত্পাদন পরিমান বেড়ে যায় বলে লি ছুংফেন কৃষকদের জন্যে তাদের শাকসব্জী কিক্রি করার পথ খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা চালান। ২০০১ সালে তিনি গ্রামাঞ্চলে তত্পর স্থানীয় এজেন্টদের নিয়ে শাকসব্জী কিক্রি-সমিতি গঠন করেন । সমিতিটিতে সিছুয়ান,ছুংছিং,হুনান,কুইইয়াং,চুনই,পিচিয়ে প্রভৃতি এলাকার শাকসব্জীর এজেন্ট ও ব্যবসায়ীরাও অন্তর্ভুক্ত হন । প্রত্যেক বছরে শাকসব্জী সমিতি গোটা জেলার ৮০ শতাংশের শাকসব্জী জেলার বাইরে বিক্রি করে ,ফলে কৃষকদের আয়ের বৃদ্ধির নিশ্চয়তাবিধান হয়েছে ।

    শাকসব্জী বিক্রয়ের পথ সুগম হওয়ার পর লিছুংফেন শাকসব্জী-ব্যবসায়ীদের সেবা করার দিকে বেশী মনোযোগ দেন ।তার প্রস্তাবে জেলাশহরের খোলা বাজারের নানা কর মৌকুব হয়েছে ।সুবিধাজনক নীতি আর শ্রেষ্ঠ সেবা আরও বেশী ব্যবসায়ীকে লোতিয়েন জেলায় আকৃষ্টকরেছে ।

    অল্পকালে পরিপক্ক হওয়া মরিচ কেনার জন্যে শাকসব্জীর ব্যবসায়ী চাং থিয়ে-চুন লোতিয়েন জেলায় আসেন ।তিনি বলেছেন,শাকসব্জী সমিতি আমাদের জন্যে সু পরিবেশ সরবরাহ করেছে । তাদের আন্তরিকতার কারণে আমরা শাকসব্জীর অর্ডার করতে এসেছি ।

    লোতিয়েন জেলার রূপের পরিবর্তন হয়েছে ,এখানকার মানুষের জীবনে আকাশ-পাতাল পরিবর্তন এসেছে ।বিরাট সাফল্যের সামনে লি ছুংফেন বলেছন,এই সাফল্য আমি একা করি নি ,সব শাকসব্জী-বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীর প্রচেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রমে এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে ।