v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-08-12 11:34:53    
লাসা শহরের সবুজায়ন ব্যুরোর পরিচালক

cri
    সূর্যাস্তে লাসা শহর মনোরম পরিবেশে ডুবে গেল। এই শহরের পোতালা ভবনের মহাচত্বর গাছপালায় ঘেরাও। এক বাচ্চা বনাঞ্চলে খেলছিলো , পাশে তার মায়ের মুখে মৃদু হাসি আর তৃপ্তি বিরাজমান ছিলো । মহাচত্বরে সবুজ তৃণাবৃত মাঠ আর অজস্র ফুলে সজ্জিত হওয়ায় জাঁকজমক পোতালা ভবন প্রাণবন্ত আর স্ফুর্তিপূর্ণ হয়ে উঠেছে । এই একটির পর একটির সৌন্দর্য্যময় দৃশ্যের পেছনে লাসা শহরের সবুজায়ন ব্যুরোর কর্মীদের পরিশ্রমী কাজ তুলে ধরা হয়েছে।

    এবছর তিব্বত স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের ৪০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী । সবুজায়নের কাজ আগের চেয়ে আরো বেশি হবে । ঝাও কুই রোংয়ের কার্যালয় বড় নয় , ভেতরে আসবাব পত্রও কম । শুধু একটি টেবিল আর কয়েকটি চেয়ার আছে । সবুজায়ন প্রকল্পের যে কতটুকু সম্পন্ন হয়েছে , দেয়ালে টাঙ্গানো একটি সাদা রংয়ের বোর্ডে তা দেখানো হচ্ছিলো । যখন তারা কাজ নিয়ে আলোচনা করছিলেন , তখন টেবিলের উপরে ফোনের ঘন্টা বহুবার বেজেছিলো ।

    ঝাও কুই রোং মান জাতির লোক । তার জন্মস্থল উত্তর-পশ্চিম চীনের লিয়াও নিন প্রদেশে অবস্থিত । তিরিশাধিক বছর আগে লেখাপড়ার জন্য তিনি লাসায় গিয়েছিলেন এবং সব সময় এই শহরে বাস করতেন । তিনি তিব্বত কৃষি ও পশুপালন ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক হয়েছেন এবং বিশাধিক বছরে সবুজায়ন বিভাগে চাকরি করেছেন ।

    বহু বছর ধরে প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে লাসা শহরে সবুজায়নের কাজ বেশ উন্নত হয়েছে । গত বিশ বছরে আমি সবুজায়ন কাজে ব্রতী হয়েছি । অনুশীলনে আমার বহু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে । নেতাদের প্রযত্ন আর সমর্থনে আমাদের কাজ অনেক উন্নত হয়েছে ।

    বহু বছরে প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে ঝাও কুই রোং এখন সবুজায়ন ব্যুরোর প্রধান হয়েছেন । তিনি কর্মনিষ্ঠ এবং কাজের ব্যাপারে কড়াকড়িভাবে নিয়মবিধি মেনে নিন ।

    প্রতিদিন তিনি সকলের আগেই অফিসে যান । নির্মাণস্থলে যখন তাকে লাগে , তিনি তখনই আসেন । তিনি মিষ্ত্রীদের সবুজায়নের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা পরিচয় করে দেন ।

    আগে ঘাস কাটার জন্য মিষ্ত্রীদের শ্রম শক্তি ব্যবহার করা হতো । সারা দিন পরিশ্রম করলে মাথাপিছু শুধু ২ শো বর্গ মিটার ঘাস কাটা যেতো । এখন লাসা শহরে ঘাস কাটার জন্য যন্ত্র ব্যবহার করা হয় । শুধু দশ দিনের মধ্যে সারা শহরের ঘাস কাটা যায় । ব্যুরোর অর্থনৈতিক কার্যকরীতা ভাল হবার সংগে সংগে শ্রমিকদের আয়ও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে । এখন কিছুসংখ্যক শ্রমিক নিজের গাড়ি কিনেছেন । গত বিশাধিক বছর ধরে সবুজায়নের কাজে নিয়োজিত প্রবীণ শ্রমিক মাদাম ফুচেন বলেছেন , আজ লাসা শহরের সবুজায়ন ব্যুরোর সুনাম অধিক থেকে অধিকতর সম্প্রসারিত হয়েছে । শ্রমিকদের আয়ও বেড়ে গেছে।

    এখন লাসার শহরাঞ্চল সবুজ গাছপালা আর বৈচিত্র্যময় ফুলে ভরপুর । এ পর্যন্ত লাসা শহরে সবুজায়ন হার ৩০ শতাংশ ছাড়িযে গেছে । সবুজায়নের মাথাপিছু আয়তন প্রায় ১০ বর্গ মিটারে দাঁড়িয়েছে । সবুজায়ন ব্যুরোর কাজকর্মের সাফল্য অন্যান্য প্রদেশ ও শহরের প্রশংসা পেয়েছে । গত বছর পূর্ব চীনের কতকগুলো শহরের সবুজায়ন কর্মীরা লাসায় পরিদর্শন করতে এসেছিলেন । তারা লাসার পরিপার্টি রাস্তাঘাট , রংবেরংয়ের ফুলগাছ দেখেছে । তারা বলেছেন , রাস্তাঘাটে এক বেশি লামা না দেখলে তারা একদম বিশ্বাস করতে পাতেন যে , এটাই সমুদ্র সমতলের তুলনায় ৩ হাজার ৭ শো মিটার উঁচু একটি মালভূমির শহর ।

    যেহেতু লাসা মালভূমিতে অবস্থিত আর তার আবহাওয়া পরিবর্তনশীল , সেহেতু দীর্ঘকাল ধরে এই শহরে শুধু কয়েক প্রজাতির গাছ লাগানো হতো । এই সব গাছের রংও একঘেঁয়ে ছিলো । এই অবস্থার রুপান্তর করার জন্য ঝাও কুই রোং বহুবার সিছুয়াং প্রদেশ , পেইচিং মহানগরী প্রভৃতি অঞ্চলে গিয়ে বৃক্ষ লালন পালন আর রোপনের কৌশল শিখেছেন । এই সব প্রদেশ ও শহর থেকে তিনি যে সবুজায়নের অভিজ্ঞতা আমদানি করেছেন , তা লাসার সজুজায়নের কাজে লাগানো হয়েছে ।

    সবুজায়নের কাজ সম্প্রসারিত করার জন্য নতুন রকমারি বৃক্ষ , ফুল আর ঘাস পরীক্ষামূলকভাবে লাগানোর সময় তিনি সব সময় শ্রমিকদের সংগে এক সাথে পরিশ্রম করেন । তাদের মধ্যে কে শ্রমিক আর কে ক্যাডার , তা আলাদা করা খুব কঠিন । লাসার প্রসিদ্ধ তিব্বতী বৌদ্ধ মন্দির-- জোকহান মন্দিরের সবুজায়ন কাজে ঝাও কুই রোং বিপুল পরিমাণে নতুন প্রকার বৃক্ষ , ফুল আর ঘাস রোপণ করেছেন । তিনি প্রতি দিন দশাধিক ঘন্টা ধরে কাজ করতেন । এই সব নতুন বৃক্ষ , ফুল আর ঘাস যে কতটুকু জীবিত আছে , তিনি তার ওপর খুব নিবিড় নজর রাখতেন । তিনি আর শ্রমিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জোকহাং মন্দিরের সবুজায়ন কাজে স্থানীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দর্শনীয় কার্যকরীতা দেখা দিয়েছে।

    যারা লাসায় দশ বছরেরও বেশি সময় বাস করেছে , তাদের মনে অবশ্যই আছে আগের রাস্তাঘাটে শুধু দু'এক ধরণের গাছ লাগানো ছিলো সেই একঘেয়ে পরিবেশ । এখন তার পরিবর্তে বৈচিত্র্যময় পরিবেশ ও সবুজায়ণ দেখা দিয়েছে । শহরের এই রংবেরংয়ের দৃশ্যে বসন্তকালের স্ফূর্তিপূর্ণ পরিবেশ জীবন্ত হয়ে উঠেছে । তাতে শহরবাসীদের একটি আরামদায়ক আর আনন্দিত জীবণযাপনের পরিবেশ যোগানো হয়েছে । শহরবাসী কুনগা বলেছেন , আগে উপভোগ করার জন্য শুধু নিজের বাসার উদ্যানে ফুল লাগানো হতো । রাজপথের দু'পাশে কোনো ফুল , গাছ আর ঘাস দেখা যেতো না । এখন রাজপথের দু'পাশ আর অন্যান্য জায়গা ফুল , গাছ আর ঘাসে সজ্জিত হচ্ছে । শীত্কাল ছাড়া সারা বছরে রংবেরংয়ের ফুল আর পরিবেশ দেখা যায় ।

    তিব্বত আর লাসায় সর্বত্র সবুজায়ণ দেখা যায় । এটা দেখে আপনার মন আশায় ভরপুর ।