v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-08-11 15:49:56    
চীনের মূল্যবান দ্বীপ-- তাইওয়ান

cri
    তাইওয়ান দ্বীপ চীনের মূলভূভাগের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সাগরে অবস্থিত, চীনের প্রথম বড় দ্বীপ, এর আয়তন ৩০ হাজারাধিক বর্গকিলোমিটার, একটি প্রণালীর অন্যপার থেকে পরস্পরকে দেখা যায়, দু'তীরের মধ্যে সবচেয়ে নিকটবর্তী স্থানের দূরত্ব মাত্র ১৩০ কিলোমিটার।

    বর্তমানে তাইওয়ানের জনসংখ্যা ২ কোটি ৩০ লক্ষ, চীনের মোট জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ১.৮ ভাগ। তাইওয়ান দ্বীপ খুব বড় নয়, কিন্তু দ্বীপে রকমারি ভূখণ্ড আছে , যেমন পাহাড়, সমতল, অববাহিকা, নদনদী, ঝরণা ইত্যাদি সবই আছে। তাই তাইওয়ান এক বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান । উত্পাদিত পণ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে ধান, আখ, চা, ফল এবং অর্কিড। অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকে তাইওয়ানের কারখানা শিল্প, তথ্য শিল্প, বৈদেশিক বাণিজ্য অপেক্ষাকৃত উন্নত এবং তাইওয়ানের অর্থনীতির স্তম্ভে পরিণত হয়েছে।

    ইতিহাসে তাইওয়ান দ্বীপ আর চীনের মূলভূভাগের সম্পর্ক প্রসঙ্গে পেইচিং সংযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের তাইওয়ান বিষয়ক গবেষণা অ্যাক্যাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক সুই ফু তুং ব্যাখ্যা করেছেন,

    "তাইওয়ানের লিখিত ইতিহাসের সূচনা হয়েছে ২৩০ সালে। তত্কালীন চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রশাসক উয়ের রাজা সুন ছুয়ান দশ হাজার কর্মকর্তা ও সৈন্য তাইওয়ানে পাঠিয়েছেন। এরপর ষষ্ঠ ও সপ্তম শতাব্দীতে তত্কালীন চীনের ক্ষমতাসীন সুই রাজবংশ পর পর তিন বার তাইওয়ানে বাহিনী পাঠিয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে চীনের প্রধান জাতি হান জাতির লোকেরা তাইওয়ানের নিকটবর্তী পাংহু দ্বীপপুঞ্জে স্থানান্তরিত হন এবং তাইওয়ানের দিকে চলে যান, সাথে সাথে উন্নত মানের উত্পাদন প্রযুক্তও সঙ্গে নিয়েছেন। ১৭ শতাব্দীর প্রথম দিকে নেদারল্যান্ডসের লোকেরা তখনকার চীনের মিং রাজবংশের দুর্বল সুযোগ ব্যবহার করে তাইওয়ানে অনুপ্রবেশ করেছে। ফলে তাইওয়ান নেদারল্যান্ডসের উপনিবেশে পরিণত হয়েছে। ১৭ শতাব্দীর ৬০এর দশকে চীনের জাতীয বীর চাং চেন কোংয়ের নেতৃত্বাধীন বাহিনী ডাচ্ ঔপনিবেশিকদের বহিষ্কার করেছে। তাইওয়ান আবার স্বদেশের কোলে ফিরে এসেছে। "

    কিন্তু ১৯ শতাব্দীর শেষ দিকে দুর্ভাগ্যক্রমে তাইওয়ান আবার আগ্রাসীর হাতে পড়েছে। ১৮৯৪ সালে জাপান চীনে আগ্রাসী যুদ্ধ বাঁধিয়েছে। চীনের ক্ষমতাসীন ছিং রাজবংশ হেরেছে বলে বাধ্য হয়ে পরের বছরে জাপানের সঙ্গে "শিমোনোসোকি চীনা-জাপান চুক্তি" স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু ছিলো জাপানের দাবি অনুসারে তাইওয়ানকে জাপানের কাছে ছেড়ে দেয়া। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে জাপান হেরেছে, তাইওয়ান জাপানের অধীনে ৫০ বছর থাকার পর আবার চীনের কোলে ফিরে এসেছে।

    অধ্যাপক সুই ফু তুং আরো জানিয়েছেন, "১৯৩৭ সালে জাপান সার্বিক চীনের আগ্রাসী যুদ্ধ বাঁধায়। চীন দীর্ঘ আট বছর স্থায়ী প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেছে। ১৯৪১ সালে চীন সরকারের "জাপানের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণায়" সারা দেশকে জানানো হয়েছে যে, চীন "শিমোনোসোকি চীন-জাপান চুক্তি" সহ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বাতিল করবে এবং তাইওয়ানকে পুনরায় দখল করবে। ১৯৪৩ সালে চীন, যুক্তরাষ্ট্রএবং ব্রিটেন এই তিন দেশের সরকারের "কায়রো ঘোষণায়" উল্লেখ করা হয়েছে, জাপানকে উত্তর-পূর্ব চীন সহ তাইওয়ান, ফাং হু দ্বীপপুঞ্জ প্রভৃতি চীনের ভূভাগ চীনকে ফেরত দিতে হবে। ১৯৪৫ সালে চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের যৌথ উদ্যোগে স্বাক্ষরিত এবং পরে সোভিয়েট ইউনিয়নের অংশগ্রহণে গৃহীত " পোটস্ডাম ইস্তাহারে" লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যে, কায়রো ঘোষণার শর্তগুলো বাস্তবায়িত হতে হবে। একই বছরের আগস্ট মাসে জাপান আত্মসমর্পণ করেছে, এবং "জাপানের আত্মসমর্পণ সংক্রান্ত ধারায়" আন্তরিকভাবে পোটস্ডাম ইস্তাহারের নিয়মানুসারে কর্তব্য পালন করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। অক্টোবর মাসে চীন সরকার পঞ্চাশ বছর ধরে জাপানের দখলকৃত তাইওয়ানকে পুনরুদ্ধার দখল করেছে, তাইওয়ানের ওপর সার্বভৌম অধিকার পুনর্বার অর্জন করেছে। "

    শ্রোতা বন্ধুরা, উপরোক্ত ব্যাখ্যা শুনে আপনারা হয়তো তাইওয়ান যে চীনের ভূভাগ, এই সত্য সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেলেন। তবে আরো প্রশ্ন জাগতে পারে। যেমন, পরে তাইওয়ান আর চীনের মূলভূভাগের মধ্যে আবার বৈরিতার সূত্রপাত হল কিভাবে ? তাইওয়ান আর চীনের মূলভূভাগ এখনো অঙ্গীভূত হয় নি কেন? এখন আমরা এ প্রসঙ্গে কিছু তথ্য দিবো।

    তাইওয়ান আর চীনের মূলভূভাগের বৈরিতার পড়ার কারণ হচ্ছে গত শতাব্দীর ৪০এর দশকে সংঘটিত চীনের গৃহযুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের অবসানের পরের দ্বিতীয় বছর অর্থাত্ ১৯৪৬ সালে এক সময় মিলিতভাবে জাপানী আগ্রাসীদের প্রতিরোধকারীচীনের কুওমিংটাং পার্টি আর কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে লড়াই হয়েছে। গৃহযুদ্ধ বাঁধার মূল কারণ হচ্ছে চীনের কুওমিংটাং পার্টি কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যৌথ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে প্রত্যাখ্যান করা। তারা চীনের কমিউনিস্ট পার্টিকে নির্মূল করে একদলীয় একনায়কতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টায় যুদ্ধ করেছে। তিন বছর যুদ্ধের পর সামরিক ক্ষেত্রে দুর্বল চীনের কমিউনিস্ট পার্টি জনগণের সমর্থন পাওয়ায় কুওমিনটাং পার্টি হেরেছে। ১৯৪৯ সালে বিজয়ী চীনা কমিউনিস্ট পার্টি গণ-প্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠা করেছে । কুওমিনটাং পার্টি মূলভূভাগ থেকে সার্বিকভাবে সরে গিয়ে চীনের মোট আয়তনের ৩০০ ভাগের এক ভাগ তাইওয়ান দ্বীপ দখল করে নিয়েছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে চীনের কেন্দ্রীয় সরকারের বিপরীত অবস্থানে থেকেছে। গণ প্রজাতন্ত্রী চীন সরকার যে সারা চীনের এক মাত্র বৈধ প্রতিনিধি, সেই মর্যাদাকে তারা অস্বীকার করে। এখন পর্যন্ত দু'পারের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান দিনে দিনে ঘনিষ্ঠ হয়ে চলেছে, কিন্তু দু'পারের বৈরী অবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় নি ।

    তাইওয়ান চীনের এক অংশ, এই সত্যের প্রতি আন্তর্জাতিক সমাজের অধিষ্ঠান স্পষ্ট। চীন গণ প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পঞ্চাশাধিক বছরে ১৬০টিরও বেশি দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। চীন এবং এই সব দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত হলো এই দেশগুলো গণ-প্রজাতন্ত্রী চীন সরকারকে চীনের একমাত্র বৈধ সরকার এবং তাইওয়ানকে চীনের একটি অংশ হিসেবে স্বীকার করে। চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকারী সব দেশই এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে । অবশ্য এখনো গুটিকয়েক দেশের সঙ্গে তাইওয়ান অঞ্চলের তথাকথিত কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। সে সব দেশ আয়তনে ছোট এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে খুবই পশ্চাত্পদ। তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ তা কাজে লাগিয়ে অর্থ দিয়ে এই দেশগুলোর সঙ্গে তথাকথিত কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখে।