ব্যাক পেইন কেন হয় এ প্রশ্নের সদুত্তর এক কথায় দেয়া সম্ভব নয়। তবে আংশিক উত্তর হল পিঠের দিকের হাড় ও পেশীর গঠনগত সমস্যার কারণে ব্যাক পেইন হয়ে থাকে। আমাদের মেরুদণ্ডটি কতকগুলো টুকরো হাড় অর্থাত্ ভার্টিব্রা দিয়ে একের পর এক সাজিয়ে নিউমেরাস মাসল ও ফ্রাইব্রাস লিগামেন্ট দিয়ে জুড়ে সোজাভাবে দাঁড় করানো থাকে। ভার্টিব্রার বিপরীত দিকে থাকে মাসলগুলো। আর এ দুয়ের সমন্বয়ে আমাদের মেরুদণ্ড স্বাভাবিক ভূমিকা পালন করে। এই পেশীগুলো না থাকলে ছোট ছোট হাড়গুলো কোনমতেই সোজা একটা আকার পেত না।
অন্য একটা বিষয় হল ভার্টিব্রার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের জন্য মেরুদণ্ডকে সোজা হয়ে থাকতে সাহায্য করে। মাংসপেশী সবল হলেই কেবল হবে না, কারণ হালকা ভঙ্গুর হাড়কে সোজা এবং দৃঢ় করে রাখা পেশীর একার পক্ষে অসম্ভব। পেশীতেই টান পড়লে এসব হাড়ে চিড় ধরতে পারে। যখন এসব ছোট ছোট হাড় এবং মাংসপেশীর মধ্যে ঠিকমত সামঞ্জস্যের ব্যাঘাত ঘটে তখন পিছনের মেরুদণ্ডের কাঠামোগত বিচ্যুতি ঘটে এবং ব্যাক পেইন দেখা দেয়। মেরুদণ্ডের আশপাশের স্নায়ুগুলো ভার্টিব্রার ব্যালান্সের সমস্যার সৃষ্টি করে। আর হাত পা বা অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্নায়ুগুলোর সঙ্গে মেরুদণ্ডের স্নায়ুর সংযোগ থাকায় ব্যথার অনুভূতি বিভিন্ন পেশীতেও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পিছন দিকের পেশীগুলোতে আস্তে আস্তে অনমনীয় হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।
মানসিক চাপ, বসে বসে কাজ করার অভ্যাস, প্রচণ্ড কাজের চাপ, মন খারাপ হওয়া এসব সমস্যা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হতে পারে; কারণ এগুলো হঠাত্ করে পাল্টানো খুবই কঠিন। কিন্তু ব্যাক পেইনকে সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। কিছু বিষয় রয়েছে যার মাধ্যমে ব্যাক পেইনকে প্রতিরোধ করা যায় এবং ভবিষ্যতের বিপত্তিকে এড়ানো সম্ভব হয়। আবার কিছু বিষয় রয়েছে যা একটানা ব্যাক পেইনকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ অনেক সময় ব্যাক পেইন সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, তাই আপনার প্রতিদিনকার বাড়তি চাপ কমিয়ে ফেলার একটা উপায় বের করুন । হাল্কা পড়াশুনা, প্রিয় গান শোনা অথবা একটু আরাম আয়েশ চাপকে কমাতে সাহায্য করতে পারে। অনেক সময় পরিবার বা অন্য কারও প্রত্যাশা আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে । এসব মানসিক টেনশন একেবারে ঝেড়ে ফেলতে হবে। আপনার পিঠের দিকে অস্বস্তি হয় এমন কোন কাজ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন । এমনকি আপনার কর্মক্ষেত্রেও যদি কোন কাজ আপনার পিঠের দিকে ব্যথার অনুভূতি তৈরি করে তবে সে কাজ থেকে বিরত থাকা দরকার। ব্যাক পেইন থাকলে রাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। যদি সম্ভব হয় দিনের বেলায় সামান্য কিছুক্ষণ গরম পানির ব্যাগের সাহায্যে সেঁক দিন। বিছানার ওপর শুয়ে পা দুটো চেয়ারের ওপর তুলে দিলে পিছনের চাপ কিছুটা শিথিল হবে।
একটা দেয়ালের সঙ্গে পিঠ লাগিয়ে দাঁড়িয়ে পিছন দিকে হাত নিয়ে উপর নিচে করে যদি দেখেন হাত খুব সহজে গলে উপর নিচ হচ্ছে তবে বুঝতে হবে আপনার মেরুদণ্ডের গঠনে একটু সমস্যা রয়েছে।এটা দূর করতে পিছনের মাসলগুলোকে শক্তিশালী করা দরকার, আর এজন্য ব্যায়াম করার প্রয়োজন। যখন দাঁড়িয়ে থাকবেন অথবা হাঁটবেন, তখন মেরুদণ্ড একেবারে সোজা করে রাখুন। এমন বিছানা ব্যবহার করতে হবে যাতে ব্যাক পেইন যেন বৃদ্ধি না পায়। নরম গদিওয়ালা বিছানা ত্যাগ করুন । কার্যক্ষেত্রে সবসময় উপযুক্ত আসবাব পাওয়া যায় না তবে দেখে নিতে হবে যে চেয়ারটা আরামদায়ক সেটাই ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে পিঠের পিছনে চেয়ারের সঙ্গে একটা বালিশ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। দোকানের কাউন্টারে , রান্না ঘরে অথবা কাপড় আয়রণ করার সময় একটানা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করতে হলে একটা পা কোন টুল বা বাক্সের ওপর তুলে দিন। মেঝেতে বসতে অসুবিধা হলে চেয়ারে বসুন।
আর আপনাকে যদি চাকরিস্থলে একটানা চেয়ারে বসে থাকতে দেয়ার জায়গা ছোট, শক্ত গদি এবং বসার জায়গা বেশ একটু বড় আকারের সে রকম চেয়ার বেছে নিন, যাতে প্রয়োজনে সহজে পাস ফিরতে পারেন। মহিলাদের ক্ষেত্রে নিজস্ব বিশেষ ভঙ্গিমায় বসলে তারা বেশ আরাম অনুভব করেন। আপনার সবার আরামদায়ক পজিশন নিজে ঠিক করে নিন। আপনাকে মেঝে থেকে যদি কোন বারি জিনিস তুলতে হয় তবে সরাসরি কোমরের ওপর চাপ না ফেলে এক পা সামনে দিয়ে বসে পায়ের ওপর চাপটা ফেলুন। আর ইতোমধ্যে আপনার মেরুদণ্ডের অবস্থা যদি খুব খারাপ হয়ে থাকে তবে ভারি জিনিস তোলা একেবারে বন্ধ করুন এমনকি ওজনে ভারি শিশুকে কোলে নেয়া এড়িয়ে চলুন। সামনের দিকে ঝুঁকবেন না।
আপনি যদি এ্যারোবিক্স যেমন হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইক্লিং-এর মত ব্যায়াম নিয়মিত অভ্যাস করেন তবে ব্যাপ পেইন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে খুব ভাল সহায়তা পাবেন। প্রতিদিন ৪৫ মিনিট করে সপ্তাহে ৪/৫ দিন হাঁটা খুবই ভাল। মনে রাখবেন জগিং করা থেকে হাঁটা অনেক বেশি ভাল ফল দেবে। কারণ জগিং করলে অনেক সময় ব্যাক পেইন বেড়ে যায়।
পিঠের পেশী দুর্বল হলে যোগব্যায়ামের মাধ্যমে পেশীগুলোকে সবল করে তোলা যায়। তবে যোগ ব্যায়াম কোন ভাল ট্রেনারের কাছে করা উচিত। বিশেষ প্রক্রিয়ায় ব্যায়াম , ডায়েট ও শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যোগব্যায়াম করলে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়।
ম্যাসাজ করলে ব্যাক পেইনের ক্ষেত্রে খুবই উপকার পাওয়া যায়। ম্যাসাজ করলে পিঠের মাংস পেশীতে রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং পেশীগুলো সবল হয়ে ওঠে। ফলে খুব দ্রুত আরোগ্য লাভ করা যায়।
-- ডাঃ মোড়ল নজরুল ইসলাম, দৈনিক ইত্তেফাক
|