v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-08-10 21:06:07    
উইগুর জাতির কন্ঠশিল্পী রোচিআমুতি

cri
    শীতকালের এক দিন আমাদের সংবাদদাতা কন্ঠশিল্পী রোচিআমুতির বাসায় গিয়েছেন । উইগুর জাতির অধিবাসীদের চরিত্রের এক বৈশিষ্ট্য হলো আন্তরিকতা ও অকপটতা । তার বাসায় বসে সিংচিয়াংয়ের লোকসংগীত উপভোগ করার সংগে সংগে সুগন্ধী দুধ চা খেতে খেতে আমাদের সংবাদদাতা যেন দূর দূরান্তের সিংচিয়াংয়ে গিয়েছেন । রোচিআমুতি বলেছেন , তার বহু বছরের একটি স্বপ্ন হলো নিজের গাওয়া সিংচিয়াংয়ের লোকসংগীত একত্র করে একটি সি ডি বের করা । এবছরের অক্টোবর মাসে তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে । 'দূরদূরান্তের স্থান ' নামে তার এক গানের সিডি প্রকাশিত হয়েছে , এতে তার সবচেয়ে পছন্দনীয় সিনচিয়াংয়ের সিংচিয়ানের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ১১ টি লোকসংগীত সংগ্রহ করা হয়েছে । ৪৪ বছর বয়স্ক রোচিআমুতি পেইচিংয়ের কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু জাতির সংগীত ও নৃত্য দলের কন্ঠশিল্পী , সিংচিয়াংয়ের উরুমুচি শহরে তার জন্ম , ছোট বেলা থেকেই রোচিআমুতি নাচগান পছন্দ করেন । তিনি বলেছেন , উইগুর জাতির অধিবাসীরা নাচগান পছন্দ করেন । ছোট বেলায় উত্সবের সময় আমরা বন্ধুদের সংগে গান করার সংগে সংগে নাচতাম । আমি এই ধরণের পরিবেশে বড় হয়েছি । রোচিআমুতির বয়স যখন ১৬ বছর , তিনি পরীক্ষার মাধ্যমে উরুমুচি শহরের নাচগান দলে নাচ শিখতে শুরু করেন , অবসর সময় তিনি গান চর্চা করতেন । পরে রোচিআমুতি সৌভাগ্যক্রমে সংগীতের প্রফেসার ফান এন চের সাহায্য পান । প্রফেসার ফান এন চের মতে রোচিআমুতির গলা লোকসংগীত গাওয়ার পক্ষে উপযোগী , তাই রোচিআমুতি তার কাছ থেকে গান শিখতে শুরু করেন । প্রফেসার ফান এনচের সাহায্যে ১৯৮৫ সালে রোচিআমুতি পরীক্ষার মাধ্যমে সাংহাই সংগীত ইন্সটিটিউট ভর্তি হন । ইন্সটিটিউটের পড়াশুনা শেষ করে রোচিআমুতি তার জন্মস্থান সিংচিয়াং ফিরে উরুমুচি সংগীত-নৃত্য দলে ভর্তি হন । এই সময় তিনি চীনের বিখ্যাত সুরকার ওয়াং লো পিনের সংগে পরিচিত হন এবং তার সাহায্য পেয়েছেন । ওয়াং লো পিং চীনের লোকসংগীতের একজন বিখ্যাত গীতিকার- সুরকার , তিনি সিংচিয়াংয়ের অনেক লোকসংগীত সংগ্রহ করে সুর দিয়েছেন । রোচিআমুতি যখন সিংচিয়াংয়ের লোকসংগীত চর্চা করেন , ওয়াং লো পিং তার জন্য গানের সুর ও কথাগুলো ব্যাখ্যা করেন , যাতে রোচিআমুতি গানটি আরো ভাবে উপলব্ধি করতে পারেন । এ সম্বন্ধে রোচিআমুতি বলেছেন , সিংচিয়াংয়ের লোকসংগীতের সুর প্রানবন্ত, গানের কথা রসে টই-টম্বুর । গানের সুরের বৈশিষ্ট্য ও কথা উপলব্ধির ক্ষেত্রে ওয়াং লো পিং আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন । আমি উচু সুরের গান গাইতে পারি এবং গানের সংগে নাচও করতে পারি । বহু বছরের গান চর্চার মধ্য দিয়ে আমি নিজের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শৈলী সৃষ্টি করেছি ।

    ১৯৯৪ সালে রোচিআমুতি চীনের জাতীয় যুব কন্ঠশিল্পী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন এবং পেশাদার শিল্পী গ্রুপের প্রথম শ্রেণীর পুরষ্কার পেয়েছেন । ১৯৯৭ সালে রোচিআমুতি রাজধানী পেইচিংয়ের কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু জাতির সংগীত ও নৃত্য দলে ভর্তি হন । চীনের কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু জাতির সংগীত ও নৃত্য দল হচ্ছে চীনে একমাত্র জাতীয় পর্যায়ের সংখ্যালঘুজাতির শিল্পী দল , এই দলে চীনের সব কটি সংখ্যালঘু জাতির শ্রেষ্ঠ কন্ঠশিল্পী ও নৃত্য শিল্পীরা আছেন । এই দলে গান অনুশীলন ও পরিবেশনের মধ্য দিয়ে রোচিআমুতির গান পরিবেশনের নৈপুন্যের অনেক উন্নতি হয়েছে ।

    দু' বছর আগে তিব্বত স্বায়তশাসিত অঞ্চলে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু জাতির সংগীত ও নৃত্য দলের অনুষ্ঠান রোচিআমুতি কোনো দিনই ভুলবেন না । তিন হাজার মিটার উচু ছিংহাই তিব্বত মালভুমিতে গিয়ে বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমান কম বলে দলের অনেক সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়েন , অনেকেই ঠিক মতো নাচগান করতে পারেন না । রোচিআমুতি কিন্তু শারিরীক অসুবিধা সহ্য করে আগের মতো গানের সংগে সংগে নাচ করেছেন । তার মধুর গান ও উত্সাহ উপস্থিত এক আশি বছর বয়সী তিব্বতী বৃদ্ধাকে মুগ্ধ করে , গান পরিবেশন শেষ করার সংগে সংগে বৃদ্ধা নিজের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য রোচিআমুতির গলায় এক পবিত্র হাদা পরিয়ে দিয়েছেন । হাদা অর্পন তিব্বতী জাতির এক রীতি , শুধু নিজের প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিই এই ধরনের মর্যাদা পেতে পারেন । তার এই অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে রোচিআমুতি বলেছেন , গলায় তিব্বতী বৃদ্ধার দেয়া হাদা দেখে আমি অত্যন্ত খুশী । আমি উইগুর জাতির একজন কন্ঠশিল্পী ,তিব্বতী বৃদ্ধার দেয়া হাদা আমার পরিবেশিত গানের পুরষ্কার ও উত্সাহ স্বরুপ , এই কথা আমি কখনো ভুলবো না ।

    ১৯৯৭ সাল থেকে রোচিআমুতি কেন্দ্রীয় সংগীত ও নৃত্য দলের সংগে চীনের ছোটবড় শহর ও পল্লী অঞ্চলে গিয়ে গান পরিবেশন করেছেন এবং ফ্রান্স , জার্মানী , তুরস্ক ,জাপান প্রভৃতি দশ-বারোটি দেশে সফর করেছেন , তিনি যেখানেই যান , তার গান দর্শকদের সমাদর পায় । গান ছাড়া , রোচিআমুতি বন্ধুদের সংগে চা খেতে খেতে গল্প করতে পছন্দ করেন । মাঝেমধ্যে তিনি বন্ধুদের সংগে ছায়াছবি ও অপেরা দেখতে যান । ভবিষ্যত সম্বন্ধে রোচিআমুতি বলেছেন , নিজের জন্মস্থানের প্রতি তার মমতা বেশী , তাই তার একটি পরিকল্পনা আছে যে ভবিষ্যতের একদিন তিনি সিংচিয়াংয়ে ফিরে যাবেন , নিজের জন্মস্থানে তিনি সংগীত অনুরাগীদের গান শিখাবেন , যাতে আরো বেশী লোক সিংচিয়াংয়ের লোকসংগীত গাইতে পারেন , যাতে সিংচিয়াংয়ের লোকসংগীত গোটা চীনে তথা গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে ।