বানর রাজ সুন উখোং জন্ম গ্রহণের পর ক্রমে অমরত্ব লাভ এবং নানা ক্ষমতা আয়ত্ত করার জন্য আচার্য বোধির শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল । কয়েক বছর কঠোর পরিশ্রমের ফলে সে অসাধারণ যুদ্ধবিদ্যাও অর্জন করে । তারপর পুষ্পফল পর্বতের জলপর্দা গুহায় তার শক্ত আস্তানা গড়ে তোলে । সেখানে প্রতিদিন সে যুদ্ধবিদ্যার চর্চা করতো বানরদের সঙ্গে নিয়ে ।
একদিন এক খ নিয়ে সে বন্ বন্ করে ঘুরাচ্ছিল । হঠাত্ তা দুটুকরো হয়ে গেলো । তখন এক বুড়ো বনরের পরামর্শে সে পুর্ব সমুদ্রের ড্রাগন রাজা আওকুয়াং-এর কাছে গেলো একটা ভালো অস্ত্র আনার জন্য ।
আওকুয়াং উখোং-কে খুব সমাদর করলেন । তিনি প্রথমে উখোংকে ৪৫ ওজনের নয় কাঁটাওয়ালা এক কুঠার দিলেন । উখোং ওটা হাতে নিয়ে বললো , খুব হাল্কা । আওকুয়াং এবার ৯০ মন ওজনের এক যাদু-কুঠার দিলেন । উখোং বললো , এটাও হাল্কা ।
প্রধানমন্ত্রী কচ্ছপের পরামর্শে আওকুয়াং উখোংকে নিয়ে সাগরের তলায় গেলেন । সেখানে একশো হাত লম্বা এবং নয়শো মন ওজনের একটা যাদু-থাম ছিলো । ড্রাগনরাজা ওটাই উখোংকে নিতে বললেন । উখোং এক টানে সেটা হাতে তুলে নিলো । থামটার দুপাশে সোনা দিয়ে মোড়া । তাতে লেখা "ইচ্ছাধিন লৌহ দন্ড" । উখোং থামটাকে ছোটো এবং বড়ো হতে বললো । ওটা তাই হলো । উখোং লোহার দন্ডটা পেয়ে খুবই খুশি । সে ওটাকে সুঁই-এর মতো করে কানে গুঁজে নিয়ে চলে গেলো ।
উখোং পুষ্পফল পর্বতে ফিরে এলে খুদে বানরেরা খুব খুশি হলো অস্ত্রটা দেখে । প্রয়োজনে ডান্ডাটা মুহুর্তে একশো হাতে লম্বা এবং মুহুর্তে সুঁই-এর মতো ছোটো করা যায় । কি মজার অস্ত্র । খুব সহজে যাদুর থামটা উখোং নিয়ে গেলো । তা দেখে ড্রাগন রাজা রেগে গেলেন । তিনি স্বর্গে গিয়ে যশম রাজাকে মিথ্যে করে বললেন যে , সাগরের পানি ঠিকমতো ধরে রাখার লোহার থামটা উখোং নিয়ে গেছে । তাকে শাস্তি দেয়া হোক ।
অভিযোগ শুনে উখোংকে বন্দি করে আনার জন্য যশম রাজা শ্বেত তারকা দেবকে পাঠালেন । আরও বললেন যে তাঁর কথা মান্য করে চললে উখোং-কে একটি উচ্চপদও দেয়া যেতে পারে স্বর্গরাজ্যে ।
কিছুক্ষণ পরে শ্বেত তারকা পুষ্পফল পর্বতে এসে যশম রাজার আমন্ত্রণ পত্র দিলেন । উখোং খুশি মনেই নতুন অ স্ত্রটা নিয়ে রাজার সঙ্গে দেখা করতে এলো । শ্বেত তারকা দেব উখোংকে নিয়ে গেলেন যশম রাজার অলৌকিক কুয়াশা প্রাসাদে । উখোং সম্ভাষণ বা প্রণাম না করে সামনে দাঁড়িয়ে রইলো ।
যশম রাজা উখোংকে স্বর্গরাজ্যে দেবতাদের ঘোড়ার সহিস নিযুক্ত করলেন । উখোং খুশি মনে তার কাজ বুঝে নিলো ।যশম রাজা অশ্বশালার পরিচালককে দিলো ছেড়ে । তারপর আকাশ থেকে বৃষ্টি এনে গোসল করালো । তাদের যত্ন নিলো খুব । কয়েকদিনের মধ্যেই দেবতাদের ঘোড়াগুলো হয়ে উঠলো তরতাজা । তেজি এবং টগবগে ।
ঘোড়াগুলো সব সময় ছাড়া থাকে দেখে ঘোড়াশালের পরিচালক উখোং-কে ধমক দিলো । উখোং বুঝলো । এখানে কোনো মর্যাদা নেই । তাই রেগে গিয়ে সে তার পোশাক ছিঁড়ে পরিচালকের মুখের উপর ছুঁড়ে দিলো । তারপর ডান্ডা ঘুরিয়ে ঘোড়াশাল তছতছ করে স্বর্গরাজ্যের দক্ষিণ দুয়ার ভেঙে চলে পুষ্পফল পর্বতে ।
|