গত শতাব্দীর ৮০'র দশকের শেষ দিক থেকে ধাপে ধাপে চীন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের একীভূত কর্মবন্টনের নীতি বাতিল করেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রদের ভর্তি করার মাত্রা অব্যাহতভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যাও দ্রুতভাবে বেড়ে চলেছে। চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের কর্মসংস্থানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কর্মসংস্থানের সচেতনতাও দিন দিন পরিপক্ক উঠছে এবং নিজেদের উদ্যোগে চাকরি বাছাই করার সচেতনতাও অব্যাহতভাবে বেড়েছে।
আমার নাম লি ছেংইয়াও। আমি পেইচিং বিদেশী ভাষা বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলিশ ভাষা বিভাগের একজন স্নাতক ছাত্র। পোলিশ ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে আমার গভীর আগ্রহ আছে বলে আমি এই বিভাগে ভর্তি হয়েছি। পোলিশ ভাষা শিখার সঙ্গে সঙ্গে আমি অন্যান্য ক্ষেত্রের জ্ঞানও শিখেছি। কারণ পোলিশ ভাষার ক্ষেত্রে চাকরি খুঁজে পাওয়া কঠিন।
এই মাত্র আপনারা শুনতে পেয়েছেন, পেইচিং বিদেশী ভাষা বিশ্ববিদ্যালয় পোলিশ ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের চলতি বছরের স্নাতক লি ছেংইয়াও পোলিশ ভাষায় নিজের পরিচয় দিয়েছেন। বহু স্নাতকের মধ্যে তিনি এবং তাঁর সহপাঠিরা একটি বিশেষ গ্রুপ। কারণ তাদের পাঠ করা বিষয় বর্তমানে জনপ্রিয় বিষয় নয়। জনশক্তির বাজারে তাদের কাজ পাওয়ার সুযোগ খুবই কম। বর্তমানে এই রকম বিষয় ব্যবহারকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান বেশী নয়। বর্তমানে চীনের অর্থনীতি দ্রুত উন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছে। জনশক্তির বাজারে অর্থনৈতিক পরিচালনা, বিপণন, কম্পিউটার , অটোমেশন ইত্যাদি বিষয় এবং ইংরেজী ভাষার মতো ব্যাপক পর্যায়ে ব্যবহৃত বিদেশী ভাষার ব্যক্তিদের চাহিদা অনেক বেশী। তাই তাদের কাজ পাওয়ার বেশী সুযোগ থাকবে। কিন্তু লি ছেংইয়াওর মতো শুধু সীমিত পরিসরে ব্যবহৃত বিদেশী ভাষা আয়ত্তকারীদের কর্মসংস্থানের অবকাশ অনেক কম।
অথচ যখন আমাদের সংবাদদাতা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কি আশা করেন যে, রাষ্ট্র স্নাতকদের জন্যে একীভূত কর্ম-বন্টনের নীতি পুনরুদ্ধার করুক, তখন তিনি তাতে অসম্মতি জানানঃ
আমি মনে করি, এর দরকার নেই। কারণ এখন বাজার অর্থনীতি চালু হয়েছে। সব ব্যাপারে প্রতিদ্বন্দ্বিতার দরকার। সুতরাং নিজের সামর্থ্য ও আগ্রহ অনুযায়ী কাজ খুঁজে পাওয়া খুব ভালো।
তিনি বলেছেন, একটি বিশেষ কৌশল আয়ত্ত করা একজন লোকের পক্ষে ভবিষ্যতের উন্নয়নের জন্যে খুব উপকারী। তিনি বিশ্বাস করেন, চীনের বিশ্বমুখী উন্মুক্তির গতি দ্রুততর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পোলিশ ভাষা রপ্তকারীদের ভূমিকা পালনের সুযোগও মিলবে।
কঠোর কর্মসংস্থানের চাপে পড়ে বর্তমানে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্যও বেড়েছে। তারা নিজেদের সামর্থ্য ও নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিজেদের মুল্য প্রতিষ্ঠা করতে ইচ্ছুক।
বর্তমানে পেইচিং, সাংহাই, কুয়াংচৌর মত চীনের বড় বড় শহরে, অন্যান্য প্রদেশের কিছু কিছু স্নাতক আছে। তারা কেন বড় বড় শহরে আসতে চান? কারণ বড় বড় শহরে বড় কাজ পাওয়ার সুযোগ বেশী এবং নিজেদের উন্নয়নের সুযোগও ব্যাপক। যদিও তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখনও উপযোগী কাজ পায় নি, তবুও তারা নিজেদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে পুরোপুরি আস্থাবান।
সাংহাই ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ের স্নাতক ছাত্রী মিস তেং হুয়া আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন,
আগেকার রাষ্ট্রের দ্বারা কর্ম-বন্টনের নীতির চেয়ে এখনকার নীতি ভালো। এখন ন্যায্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলতে পারে। যাদের সামর্থ্য আছে, তাদের ভালো কাজ পাওয়ার সুযোগ বেশি। এই নীতি লোকদের অব্যাহতভাবে লেখাপড়া করতে উত্সাহিত করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্ররা এবং তাদের ভর্তিকারী ইউনিটগুলো পরস্পরকে বাছাই করে। উভয় পক্ষের আশংকা রয়েছে। এটা তরুণদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং অনিবার্য। এই নীতি এই সমাজের জন্যেও কিছু প্রাণশক্তি যুগিয়ে দিতে পারে। এই নীতি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো, সমাজ আর আমাদের ব্যক্তি বিশেষের জন্য যেমন উত্সাহ, তেমনি চাপও বটে। এটি আমাদেরকে অব্যাহতভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া ত্বরান্বিত করবে।
তিনি আরও বলেছেন, এই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কাঠামোতে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদেরও বিন্দুমাত্র শিখিল হওয়া চলবে না। শুধু অনবরত লেখাপড়ার মাধ্যমে একজন লোক ব্রত উন্নয়নের চাহিদার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবেন।
|