চোরের কথা শেষ হতে না হতেই ভান চেন কুন এক টানে নিজের মুখ থেকে কাগজের ঠোঙ্গাঢা ছিঁড়ে ফেললেন, জেলাপ্রধানকে জোরগলায় বললেন: " হুজুর, আপনি ভালোভাবে আমার মুখ দেখুন, আমার মুখে কি বসন্তের দাগ আছে?" তার দীপ্ত মসৃণ মুখ দেখে জেলাপ্রধান বিভ্রান্ত হয়ে পড়লেন। অগত্যা আসল বৃক্তান্ত বের করতে তিনি তক্ষুনী চোরকে প্রচন্ড পিটুনি দেওয়ার জন্যে সেপাইদের আদেশ দিলেন। পিটুনির জ্বালায় অস্থির হয়ে চোর আগাগোড়া আসল ঘটনা বলে ফেললো। সে মোটেই ভান চেন কুনের চাকর নয়। এই এলাকার জমিদাররা ভান চেন কুনকে জব্দ করার মত্লোবে তাকে টাকার লোভ দেখিয়ে বলেছিল সে যেন ভান চেন কুনের চাকর সেজে লোকের জিনিস-পত্র চুরি করতে গিয়ে ইচ্ছে করে ধরা দেয়। জমিদাররা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি যে বুদ্ধিমান ভান চেন কুন এত সহজে তাদের ফন্দীবাজী পন্ড করে দেবেন।
ব্যাপারটা যখন পরিষ্কার হয়ে গেল জেআপ্রধান তখন হেসে হেসে ভান চেন কুনকে সানত্বনা দিতে লাগলেন। কিন্তু ভান চেন কুন তাকে বললেন: " হুজুর, ব্যাপারটা এখানেই শেষ হতে পারে না। যারা চক্রান্ত করেছিল তাদের অবশ্যাই উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার। আপনার হুকুমে খামাখা আমাকে এখানে ধরে আনা হয়েছে, আমার চাকর চুরি করেছে এ খবর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে, এখন আমার ইজ্জত আর থাকে না। আপনি যদি কোনো প্রতিবিধান না করেন তাহলে আমি প্রদেশের প্রশাসকের কাছে নালিশ করবো।" নালিশের কথা শুনে জেলাপ্রধানের ভয় হোলো, তবু তিনি জোর করে মুখে হাসি টেনে এনে বললেন: " এমন ছোটখাঢো ব্যাপার নিয়ে প্রদেশের প্রশাসকের কাছে যাওয়ার কি দরকার। আমিই একটা রিহিত করবো।" ভান চেন কুন বললেন: " বেশ, তা হলে এই ব্যবস্থা করুণ যে এই এলাকায় তিন দিন বেশ বড়গোছের নাচগানের আসর বসবে। উদ্যোগ আপনিই নেবেন। প্রত্যেক দিন আসর আরস্ড হওয়ার সময়ে বলবেন যে, জমিদারদের খপ্পড়ে পড়ে আপনি বোকা বনেছেন এবং তার ফলে ভান চেন কুনকে তাপমানিত হতে হয়েছে, এই কারণে জেলাপ্রধান হওয়া যোগ্যতা আপনার নেই……" আঁত্কে উঠে জেলাপ্রধান শুকনো গরায় বললেন: " এ সব কথা আমি কি করে বলতে পারি? আমি না-হয় আসর বসানোর জন্যে টাকা দিতে পারি।" ভান চেন কুন মাথা নেড়ে বললেন: " তাতে হবে না। নয়তো বলুন, আমি প্রদেশের প্রশাসকের কাছে আপনার বিরুদ্ধে নালিশ করতে যাই।" শেষ পর্যন্ত জেলাপ্রধান বিরাট আসর বসিয়ে ভানের কথা অনুসারে ঘোষণা করতে বাধ্য হলেন।
জেলা প্রধান কিন্তু মহা খাপ্পা হয়ে রইলেন। যখনই তার এসব কথা মনে হোতো তখনই তার রাগ চড়তো। আক্রোশ মেটাতে তিনি জমিদারদের প্রত্যেককেই প্রচন্ডভাবে মারপিট করেছিলেন, আর জরিমানা করে তাদের কাছ থেকে প্রায় পলেরো সের রুপো আদায় করেছিলেন।
|