v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-08-05 21:13:56    
আনন্দ হচ্ছে বিকাশের সূর্যালোক

cri
    মানুষের জীবন শুধু একটাই আছে , শিক্ষা প্রথম থেকে আবার করা যায় না । এ কারণে শিশুদের শিক্ষা ও লালনপালন অধিকাংশ পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজে পরিণত হয় । কিভাবে প্রাক-স্কুলবয়সী শিশুদের শিক্ষাদান করতে হয়? আরও বেশী জ্ঞান লাভের জন্যে শিশুকে নানা কোর্সে ভর্তি করাতে হয় ,নাকি আনন্দের সঙ্গে খেলার মধ্যে বড় হতে দিতে হয় ? এই প্রশ্ন নিয়ে পেইচিং শহরের ৩০ বছর পুরানো হ্যফিংমেন নামে এক কিন্ডারগার্টেনে গিয়ে দেখা যাক ।

    আনন্দ হচ্ছে বিকাশের সূর্যালোক

    কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষিকা ওয়াং ইং জানিয়েছেন , কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হওয়ার প্রথম দিকে খাবার সময় ফু রাও নামে এক ছোটো ছেলে ভালভাবে খেতো না ।টেবিলে রাখা তরকারী ও ভাত দেখেই বলতো আমি খেতে চাই না , যখন শিক্ষিকা তাকে খাওয়ান তখন সে খাওয়ার সঙ্গেসঙ্গে থুক করে ফেলে দিতো । এ সময় শিক্ষিকা তাকে বলতেন,ভালভাবে খেলে স্বাস্থ্য ভাল হবে এবং তাড়াতাড়ি বড় হতে পারবে । তার খাওয়ার রুচি বাড়ানোর জন্যে শিক্ষিক তার পছন্দসই খেলনা দিয়ে ময়দাজাত খাবারের উপমা দেন এবং ছেলেমেয়েদের মধ্যে "আমার পছন্দের খাবার " শিরোনামে আলোচনা চালান । তার পছন্দসই খেলনা ও খাদ্য সম্পর্কে ছোটো বন্ধুদের আলোচনায় তার খাওয়ার রুচি বেড়ে যায় । সে আনন্দের সঙ্গে বলতো , আমি ডাম্পলিং খেতে চাই , আমি চিংড়ি মাছ খেতে চাই । ধীরেধীরে খাবার সময় সে ভালভাবে খেতে শুরু করে ।শিক্ষিকা ওয়াংইং আনন্দের সঙ্গে ছেলে ফুরাওয়ের পরিবর্তন বনর্না করেন ।

  "কিন্ডারগার্টেন শিশুদের বিনোদনের জায়গা হওয়া উচিত ।আনন্দের মনোভাব বাচ্চাদের সুষ্ঠুভাবে বড় হওয়ার ভিত্তি"। কিন্ডারগার্টেনেরপরিচালিকা হাসিমুখে বলেছেন ,"যদি শিশুরা একেকটা ফুল হয় , তবে তাহলে আনন্দ তাদের বিকাশের সূর্যালোক ।"পেইচিং শহরের প্রাক-স্কুলবয়সী ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা গবেষনা সমিতির সদস্যা হান ফিংহুয়া ২৪ বছর ধরে শিশু-শিক্ষার কাজে জড়িত আছেন ।তিনি প্রায়ই শিক্ষকদের বলতে থাকেন যে,সাজসরন্জামের দিক থেকে কিন্ডারগার্টেনগুলোর মধ্যে পার্থক্য আছে , কিন্তু এ বিষয়ে সবাই সমানভাবে অর্থাত যে কোনো একটি কিন্ডারগার্টেন বাচ্চাদের জন্যে আনন্দময় পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে ।

    একদিন শিক্ষিকা কাও ছুনইং তার ক্লাসের বাচ্চাদের নিয়ে রান্নাঘরে গিয়ে বাবূর্চীদের রান্না দেখতে যান এবং দেখার পর আনন্দের ছোটো বাবুর্চী শিরোনামে এক খাওয়ার তত্পরতা চালান ।তিনি সর্বপ্রথমে বাচ্চাদের বাবুর্চীদের রান্না করা নানা ধরনের খাবার স্মরণ করতে বলেন । তার পর বাচ্চারা যার যার পছন্দের খাবার তৈরী করতে শুরু করে ।বাচ্চারা আনন্দের সঙ্গে রবার , রঙিন কাগজ দিয়ে নিজনিজ পছন্দ-খাবার তৈরী শুরু করে ।কেউ কেউ ময়দা দিয়ে রুটি বানায়, কেউ কেউ সব্জী কাটে । কিছুক্ষন পর বাচ্চাদের তৈরী রুটি , তরকারীতে টেবিল ভরে যায় । বড় লোকের দৃষ্টিতে এসব কাগজের তৈরী খাবার । কিন্তু বাচ্চাদের চোখে এসব সত্যিকারের রুটি , তেলে ভাজা চিংড়ি ,কলার কেক প্রভৃতি সুস্বাদু খাবার ।বাচ্চারা আনন্দের সঙ্গে নিজের তৈরী খাবার খায় । আনন্দের খাবার-তত্পরতায় বাচ্চাদের হাতের তৈরী ক্ষমতা বেড়ে যায় ,তাদের কল্পনা-শক্তিরবিকাশে প্রেরণা যুগানো এবং এদের সমষ্টিগত সহযোগিতা-বোধ লালনপালন হয় ।

    প্রত্যেক শিশুর নিজের বৈশিষ্ট্য আছে

    শিশু-ছেলেমেয়ের বড় হওয়ার নিয়মের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পূর্বশর্তে কিন্ডারগার্টেনটি ভিন্ন শিশুর ভিন্ন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী প্রতিটি শিশুকে নিজের নৈপুন্য দেখানোর সুযোগ দিয়ে শিশুদের স্ববৈশিষ্ট্যের বিকাশ তরান্বিত করে । শিক্ষার অভিন্ন বিষয় ভিন্নপদ্ধতির মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয় ।চিত্র শিল্পের বিষয়ে শিক্ষিকা চাংচিং কাগজ কাটা , ছবি আঁটা , চিত্র আঁকা ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে "আমার ভাল বন্ধু"বা "আমার বাড়িঘর " শিরোনামে একই বিষয়বস্তুর কাজ সম্পন্ন করতে বাচ্চাদের উত্সাহ দেন ।

    লাং ইয়েন আত্ম-পরীক্ষিত চরিত্রের মেয়ে , সে কথা কম বলে এবং চিত্র আঁকতে পছন্দ করে ।তাই তত্পরতার সময় আমি তাকে এবং তার পরিচিত কয়েক ছেলেমেয়েকে একই গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত করি । লোক কম এবং গ্রুপের সবাই তার পরিচিত বন্ধু বলে সে সাহস করে কথা বলতে পারে ।তার আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্যে যখন আমি বাচ্চাদের প্রশ্ন করি তখন তাকে কিছু সহজ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সুযোগ দেই ।সে চমত্কার চিত্র আঁকতে পারে ,তাই আমি তাকে অন্য বাচ্চাদের সামনে নিজের চিত্র আঁকার কথা বলার সুযোগ দেই । ধীরেধীরে তার চরিত্রের পরিবর্তন হয়েছে , সে এখন সমষ্টিগত তত্পরতায় অংশ নিতে আগ্রহী । শিক্ষিকা চাংচিং হাসিমুখে তার ছাত্রছাত্রীদের গল্প শোনান ।

    শিশুদের পার্থক্য নানা ধরনের ।সহজভাবে একই চোখে তাদের দেখতে হয় না এবং যথেচ্ছভাবে তাদের অনুসন্ধানী আচরণের সমালোচনা করতে হয় না । রহস্যের সঙ্গে জ্ঞান অর্জনের প্রয়াসে তারা যে ক্ষতি সাধন করেছে তার জন্যে তাদের ক্ষমা করা উচিত ।শিশুদের স্বতন্ত্র- চেতনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা উচিত ।ওমুক ওমুক অন্য শিশুদের কাছ থেকে আলাদা প্রশংসা করে তাদের কল্পনা করতে উত্সাহ দেয়া উচিত ।" সব শিশুদের মুখোমুখী হও আর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ শিশুর উপর গুরুত্ব দাও" এটাই কিন্ডারগার্টেনের অনুসৃত শিশু-শিক্ষার তত্ত্ব ।

    উত্সাহ দেয়া শিশুদের অগ্রগতি লাভের সিঁড়ি

    এখন খেলার সময় কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা বাচ্চাদের সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান দেন না ,বরং সমস্যা সমাধানের জন্যে তাদের পথ- নির্দেশনা দেন এবং তাদের অনুশীলনকে স্বীকৃতি দেন ।

    একবার প্লাস্টিসিনদিয়ে নানা মুর্তি বানানোর ক্লাস । শিক্ষিকা কাওর নির্দেশানুযায়ী বাচ্চারা প্লাস্টিসিনদিয়ে নানা মুর্তি বানিয়েছে । হ্য ইয়াং নামে ছেলেটি ব্যাঙাচি বানিয়েছে ,ঔমেন টাটকা সিম বানিয়েছে ,তালুং কলা বানিয়েছে ,রোংরোং শামুক বানিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি ।শিক্ষিকা কাও প্রত্যেক বাচ্চার সৃষ্টি দেখেছেন এবং প্রশংসা করে বলেছেন ,চমত্কার বানিয়েছ তোমরা ,ভেবে দেখো তোমরা আর কি কি বানাতে পার !

    বই বাঁধাই করার খেলায় কোনো কোনো বাচ্চা আঁটা দিয়ে , কোনো কোনো বাচ্চা ক্লিপ দিয়ে আর কোনো কোনো বাচ্চা সুতা দিয়ে বই বাঁধাই করে ।শিক্ষিকা তাদের কাজকে সপ্রশংস স্বীকৃতি দেন ।

   চীনের মাধ্যমিক আর প্রাথমিক স্কুলের সৃজনশীল-শিক্ষা গবেষণা কমিশনের সদস্য হান পিংহুয়া মনে করেন যে,কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চাদের তত্পরতাকে বেশী নিষিদ্ধ করতে হয় না ,বাচ্চাদের স্বতন্ত্র আচরণের জন্যে শিথিল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে ,যাতে তারা নিজের উপর নির্ভর করে সমস্যা সমাধান করার আস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় তার জন্যে বাচ্চাদের সক্রিয়ভাবে আবিস্কার করতে উত্সাহ দিতে হবে ।