আপনারা হয়তো জানেন চীনের খাবার বিশ্ববিখ্যাত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চীনা রেস্তোঁরা দেখতে পাওয়া যায়। তবে চীন একটি বিশাল দেশ বলে বিভিন্ন জায়গার খাবারের বৈশিষ্ট্যও বৈচিত্র্যময়। বর্তমানেচীনের বিভিন্ন জায়গার খাবার পেইচিং, সাংহাইয়ের মতো বড় বড় শহরগুলোতে পাওয়া যায়। কারণ এখন বিভিন্ন জাতির স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন রেস্তোঁরাও চীনের বড় বড় শহরগুলোতে খোলা হয়েছে। প্রতি বছরের বসন্ত উত্সব, পয়লা মে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস, চীনের জাতীয় দিবস ইত্যাদি বড় বড় উত্সবে নানা ধরনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন খাবার আস্বাদনের সুযোগ পাওয়া যায়। আজকের এই আসরে আপনাদের দুটো সংখ্যালঘু জাতির স্ববৈশিষ্ট্যসম্পন্ন রেস্তোঁরায় বেড়াতে যাচ্ছি বাড়তে নিয়ে যাছি।
পেইচিংএ অবস্থিত একটি মিয়াও জাতির রেস্তোঁরা থেকে নেওয়া হয়েছে। অতিথিরা মিয়াও জাতির ঐতিহ্যিক পোশাক পরা এই রেস্তোঁরার কর্মচারীদের সঙ্গে একত্রে নাচ করছেন। তারা "চৌকি নামক" নাচ করছেন। চৌকিগুলো ঘোরে, আর সবাই এক সঙ্গে নাচ করে বলে এই নাচকে চৌকি নাচ বলা হয়। প্রতি দিন রাত সাতটায় এই রেস্তোঁরায় এই নাচের আয়োজন হয়। অতিথিরা খাওয়ার পাশাপাশি এ সব কর্মচারীদের সঙ্গে নাচ করতে পারেন। এই রেস্তোঁরা পেইচিং মহা নগরের পশ্চিমাংশে অবস্থিত। এটা হলো মিয়াও জাতির লোকদের চালানো এটি রেস্তোঁরা। এই রেস্তোঁরায় কর্মরত কর্মচারীদেরসবাই মিয়াও জাতির ছেলে-মেয়ে। এই রেস্তোঁরার পুরাতন শৈলীর সিঁড়িতে উঠার সময় থেকে অতিথিরা মিয়াও জাতির বিশেষ আমেজ অনুভব করতে পারেন। দরজার দু'পাশে দু'জন মেয়ে মিয়াও জাতির পোশাক পরে সুমধুর অভ্যর্থনা-গান গাইছেন। রেস্তোঁরায় প্রবেশ করার পর অতিথিদের তথাকথিত " প্রবেশাধিকার" মদ খেতে হবে। এটা মিয়াও জাতির অতিথিকে অভ্যর্থনা জানানোর সবচেয়ে অতিথিপরায়ন অনুষ্ঠান। মিয়াও জাতির মেয়ে আবিয়েন বললেন, এই মদ খাওয়ার সময় অতিথিদের বিশেষ আদবকায়দা মানতে হবে।
এই মদ খাওয়ার সময় অতিথিদের বিশেষ আদবকায়দা মানতে হবে। প্রথমে আপনার হাত পিছনের দিকে টানতে হবে, তারপর এক চুমুক মদ খান। মদ শেষ হোক বা না হোক কিছু আসে যায় না। তবে আপনার হাত গরুর শিং দিয়ে তৈরী মদের পত্র স্পর্শ করতে পারবে না। যদি শিংয়ের গায়ে স্পর্ষ করেন তাহলে শাস্তি আপনাকে এক শিংয়ের মদ খেতেই হবে। মদ খাওয়ার পর অতিথিরা সোজা প্রধান খাবার হলে যেতে পারেন। এই রেস্তোঁরার প্রধান হলে মোট ১৫টি টেবিল আছে। কয়েক ডর্জন লোক এক সঙ্গে খেতে পারেন। রেস্তোঁরায়যে সব খাবার পাওয়া যায় সে সব খাবারে পুরোপুরি মিয়াও জাতির খাবারের সংস্কৃতি প্রকাশ পেয়েছে। এখানে অনেক খাবারের উপাদান সুদূর মিয়াও জাতি অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে আনা হয়েছে। এই রেস্তোঁরার নিয়মিত অতিথি লি হুয়ে একটি সাক্ষাত্কারে বলেছেন, এখাকার পরিবেশ ভাল এবং পরিসেবাও সন্তোষজনক। বড় বড় শহরে মিয়াও জাতির রেস্তোঁরার মতো রেস্তোঁরায় খাওয়ার সুযোগ পাওয়া সত্যই খুব আনন্দদায়ক। তিনি বললেন , এখানকার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মিয়াও জাতির নাচ সত্যই দেখার মতো। এ থেকে মিও জাতির রীতি-নীতি উপলদ্ধি করা যায়।
পেইচিংএ মিয়াও জাতির রেস্তোঁরার মতো রেস্তোঁরা আরও কয়েকটি আছে। পেইচিং শহরের পশ্চিমাংশে অবস্থিত " বাও ছিন থাই জাতির রেস্তোঁরা" এ সব রেস্তোঁরারমধ্যে অন্যতম।
আমি প্রথম বার এখানে খেতে এসেছি। এখানকার খাবার সুস্বাদু । এখানকার পরিবেসাও প্রথম শ্রেণীর। যদিও এটা আমার প্রথমবার, তবু আমার বিশ্বাস, এটা শেষ বারও নয়। আমি অবশ্যই এখানে আবার আসবো। যে লোক এ কথা বলেছেন তিনি একজন জার্মান । এই রেস্তোঁরায়প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে আপনি মালিকের অতিথেয়তা উপলদ্ধি করতে পারেন।রেস্তোঁরার দরজার উপর ঝোঁলানো এই বোর্ডে থাই জাতির ভাষায় যেন কিছু লেখা আছে। মালিক বললেন, এ সব শব্দের অর্থ হলো , " ব্যাবসা চমত্কার হোক, রেস্তোঁরানে অতিথির ভিড় জুমুক।"দেওয়ালে থাই জাতির কয়েকটি প্রাকৃতিক ছবি ঝোঁলানো আছে। এই রেস্তোঁরার মালিক মা সিও ব্যান হলেন পেইচিংএর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তাঁর বয়স ৭০ বছর। তিনি একজন থাই জাতির নাগরিক। তিনি বললেন,
আমাদের থাই জাতির খাবার বেশী লোনা বা ঝাল নয়। এই ধরনের খাবার আধুনিক মানুষের স্বাদের সঙ্গে খাপ খায়। থাই জাতির খাবারের মধ্যে বেশির ভাগ টক। ভিনিগার , লেবু ইত্যাদি বিভিন্ন খাবারে দেওয়া হয়।
ওই মিয়াও জাতির রেস্তোঁরার কর্মচারী যেমন মিয়াও জাতির ছেলে-মেয়ে, এই থাই জাতি রেস্তোঁরার কর্মচারিও তেমনি থাই জাতির ছেলে-মেয়ে।তাদের পরিসেবাও খুব ভালো। শ্রোতা বন্ধুরা, এতক্ষণ পেইচিংএর দুটো সংখ্যালঘু জাতির রেস্তোঁরা সম্বন্ধে শুনলেন। আজকের চলুন বেড়িয়ে আসি অনুষ্ঠান এখানেই শেষ হলো, শুনার জন্য ধন্যবাদ।
|