সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন জোরদার করা হয়েছে। পশ্চিম চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিবেশ উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অধিক থেকে অধিকতর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রছাত্রীরা চীনের পশ্চিমাঞ্চলে গিয়ে তাদের উন্নয়নের সুযোগ খুঁজতে চান। তাঁদের মধ্যে অনেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পশ্চিমাঞ্চলে গিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য রক্ষা ও কৃষি প্রযুক্তি জনপ্রিয় করে তোলার মত পরিসেবামূলক কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সেসব অঞ্চলের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখার সঙ্গে সঙ্গে তারা নিজেরাও পরিশীলিত হয়েছে।
২৩ বয়স বয়সী মোও ফেং হলো চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিরোধমূলক চিকিত্সা বিভাগের স্নাতক ছাত্র। গত বছর তিনি দক্ষিণ চীনের শিল্পোন্নত শেন জেন শহরের একটি চমত্কার চাকরির সুযোগ ত্যাগ করেন। চীনের উত্তরাঞ্চলের অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের একটি প্রাথমিক স্তরের চিকিত্সা সংস্থায় গিয়ে একজন স্নাতক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। নিজের পছন্দের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন,
প্রকৃতপক্ষে আমি অধিকাংশ লোকের মত বড় বড় শহরে একটি স্থিতিশীল চাকরি পেয়ে আরামপ্রদ জীবন কাটাতে চাই। কিন্তু অন্যদিকে আমি আশা করি আমি সমাজের জন্যে অবদান রাখবো এবং নিজের উদ্যোগে কিছু করবো। আমি বিবেচনা করেছি যে, শেন জেনে অনেক ছাত্র ও ডক্টর, স্নাতকোত্তর ডিগ্রী ধারী আছে। ওখানে আমার ভূমিকা প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ খুবই সীমিত। তাই আমি পশ্চিমাঞ্চলে গিয়ে আমার নিজের মূল্য হাসিল করতে ইচ্ছুক।
মোও ফেংর মত এই ধারণা পোষণকারী আরো অনেক স্নাতক ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তাঁদের ইচ্ছা মেটানো এবং চীনের পশ্চিমাঞ্চলে আরো বেশী সুযোগ্য ব্যক্তিদের পাঠানোর জন্য গত বছর চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের পশ্চিমাঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবা দানের পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই পরিকল্পনার অধীনে স্বেচ্ছায় আবেদন জানানো,প্রকাশ্যে ভর্তি হওয়া এবং যারা শ্রেষ্ঠ ,তাদেরকে বাছাই করার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবককে বাছাই করা হবে। তারা পশ্চিমাঞ্চলের ১২টি প্রদেশ ও শহরের দরিদ্র এলাকায় গিয়ে দুই এক বছরের জন্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য রক্ষা, কৃষি প্রযুক্তি , দারিদ্র্য বিমোচন এবং যুব কেন্দ্র গঠন ও পরিচালনা ইত্যাদি পরিসেবামূলক কাজে নিয়োজিত হবে। এই পরিকল্পনা চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ৪০ হাজার লোক এর জন্যে দরখাস্ত করেছে।
পশ্চিমাঞ্চলে গিয়ে স্বেচ্ছায় পরিসেবারত স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের নিয়োজিত হওয়ার তত্পরতা চীনের সমাজের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছা পরিসেবা ও গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক মিঃ তিং ইউয়ান চু বলেছেন, পশ্চিমাঞ্চলে স্নাতকদের যাওয়াটা যেমন পশ্চিমাঞ্চলের জন্যে সুযোগ্য ব্যক্তিদের সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তেমনি স্নাতকদের জীবনের অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্যেও সক্রীয় ভূমিকা পালন করে।
গত এক বছরে চীনের পশ্চিম অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের স্বেচ্ছামূলক পরিসেবার কজে নিজের জ্ঞানের সদ্ব্যবহার করে । কেউ কেউ গ্রাম বাসীদের মধ্যে গিয়ে শিক্ষক বা চিকিত্সক হিসেবে কাজ করেছে, নিজের নিজের কর্মস্থলে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। নিজের অভিজ্ঞতা বলার সময়ে মো ফেং বলেছেন, আমরা অবদান রাখার মনোভাব নিয়ে পশ্চিমাঞ্চলে এসেছি। অবদান রাখার প্রক্রিয়ায় আমরা অনেক উপার্জন করেছি। বিশেষ করে, আমরা সমাজ সম্বন্ধে আরো বেশী জানতে পেরেছি, কিন্তু যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ,তা হচ্ছে মনের উপার্জন । আমরা মনে করি, নিজের বলিদান অত্যন্ত মূল্যবান, অন্য লোকদের অনেক উপকার করেছি এবং তার মধ্য দিয়ে নিজের কর্তব্যবোধ গড়ে তোলা হয়েছে।
চীনের পশ্চিমাঞ্চলে স্বেচ্ছায় স্নাতকদের পরিসেবা তত্পরতায় অর্জিত ইতিবাচক অগ্রগতিতে এই পরিকল্পনার উদ্যোক্তা সন্তোষ বোধ করেন। চীনের কমিউনিস্ট যুব লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমন্ডলীর প্রথমসম্পাদক চাও ইয়ুং বলেছেন,
পশ্চিমাঞ্চলে গিয়ে স্বেচ্ছায় স্নাতক ছাত্রছাত্রীদের পরিসেবায় নিয়োজিত হওয়ার পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে এবং প্রবল প্রাণশক্তি প্রদর্শিত হয়েছে। বাস্তব অনুশীলনে প্রমাণিত হয়েছে যে, পশ্চিমাঞ্চলে গিয়ে স্বেচ্ছায় স্নাতকদের পরিসেবায় নিয়োজিত হওয়ার পরিকল্পনা হলো স্নাতকদের কর্মসংস্থান ও কর্ম সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা , পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নের পরিসেবার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং শ্রেষ্ঠ ও সুযোগ্য যুবকদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা।
|