v চীন আন্তর্জাতিক বেতারv বাংলা বিভাগv চীনের বিশ্ব কোষ
China Radio International
চীনা সংবাদ
বিশ্ব সংবাদ
চীনের কণ্ঠ
সংবাদ ব্যক্তিত্ব
সংবাদের প্রেক্ষাপট
নানা দেশ
কুইজ
আবহাওয়া

মহা মিলন ২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমস

ভয়াবহ ভূমিকম্প দক্ষিণ-পশ্চিম চীনে আঘাত হেনেছে

লাসায় ১৪ মার্চ যা ঘটেছিল

ইয়ুন নান প্রদেশ

দক্ষিণ এশিয়া

তৃতীয় নয়ন
আরো>>
(GMT+08:00) 2005-08-02 11:20:32    
অতীতের যুদ্ধাপরাধী আজকের শান্তির দূত

cri
    উত্তর পুর্ব চীনের লিয়াউনিং প্রদেশের ফু সেন শহর কয়লা উত্পাদনের জন্য প্রসিদ্ধ । যে নদী ফু সেন শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তার দক্ষিন ধারে রয়েছে পিং তিং সান গণ হত্যাকাণ্ড স্মৃতি ভবন । দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে হানাদার জাপানী বাহিনী নির্বিচারে সেখানকার তিন হাজারেরও বেশী নিরীহ অধিবাসীকে হত্যা করেছিল । তাঁদের কংকাল এখনো দেখা যায় । নদীটির উত্তরধারে একটি বন্দীশালায় প্রায় এক হাজার জাপানী যুদ্ধাপরাধী আটক ছিল ।তাদের কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় নি । ছ'থেকে আট বছর ধরে আত্মসংশোধনের পর তাঁরা সবাই ক্ষমা পেয়ে স্বদেশে ফিরে গেছেন ।

    একটি নদীর দু ধারে দুদেশের মানুষের ভাগ্য একেবারে আলাদা । আজ থেকে ৬০ বছর আগের সেই যুদ্ধে জাপানী সমরবাদীরা লিয়াউনিং প্রদেশে চীনাদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে সেখানকার কয়লা লুট করে গর্হিত অপরাধ সাধন করেছিল , যুদ্ধোত্তরকালে চীন সরকার মানবতাবাদী নীতিতে আটক জাপানী যুদ্ধাপরাধীদের শিক্ষা দিয়ে এই সব উন্মাদকে শান্তির দূতে রুপান্তরিত করে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে ।

    ইয়ামাগুচি ইজো তাঁদের মধ্যে একজন ।এখন তাঁর বয়স আশিরও বেশী । চীনে আত্মসংশোধনের ইতিবৃত্ত স্মরন করে তিনি বলেছেন : ফুসেন বন্দীশালায় সাধারণ মানুষের মত আমাদের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হত তা কখনো ভুলবার নয় । গভীরভাবে আত্মসংশোধন করে আমি যুদ্ধের কদর্যতা আর আমাদের জঘন্য অপরাধ উপলব্ধি করেছি । ফুসেন আমার পুনর্জন্মের মাতৃভূমি ।

    গত শতাব্দির পঞ্চাশের দশকে ইয়ামাগুচি ইজোর মত যে ১০৬২ জন জাপানী যুদ্ধাপরাধী চীনে আটক ছিল তাদের মধ্যে ৯৬৯ জনই ফুসেন বন্দীশালায় বাস করতেন । এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী তাঁদের পরিচালিত সৈন্যদের সঙ্গিনের ঘায়ে ও গুলিতে চীনের প্রায় দশ লক্ষ মানুষ ও সেনা প্রাণ হারিয়েছিলেন ।

    চীন সরকার জাপানের সমরবাদী ভাবনাকলুষিত এই সব উন্মত্ত যুদ্ধাপরাধীকে মানবতাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ করার জন্য যথাসাধ্য প্রচেষ্টা চালায় । মি: ছুই রেন জি তখন ফুসেন বন্দীশালার একজন চীনা কর্মী । প্রথমে জাপানী যুদ্ধাপরাধীদের শিক্ষাদানের কাজে অংশগ্রহণের এতটুকু ইচ্ছা তাঁর ছিল না ।কিন্তু অন্যান্য কর্মীর মত তিনি ব্যক্তিগত ঘৃনা পাশে রেখে যুদ্ধাপরাধীদের ব্যক্তিত্বকে সম্মান করে অন্নবস্ত্র, সাংস্কৃতিক জীবন ইত্যাদি দিক থেকে যতদূর সম্ভব তাদের সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন ।

    তিনি বলেছেন , যুদ্ধাপরাধীদের জীবনযাত্রার মান চীনাদের থেকে অধিক উন্নত ছিল । তাঁদের প্রধান খাবার ভাত ও রুটি । টাটকা মাংস ,শাকসবজি ও ডিম দিয়ে তাদের পার্শ্বখাদ্য তৈরী করা হত । তাঁরা প্রতিসপ্তাহে দু একটি সিনেমা দেখতেন । এ ছাড়া তাঁরা বইপুস্তক ও ম্যাগজিন পড়তেন , সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন এবং ক্রীড়াচর্চা করতেন ।

    ফুসেন বন্দিশালার চীনা কর্মীরা সবাই জাপানী ভাষা জানেন । তাঁরা দৈনন্দিন জীবনে যুদ্ধাপরাধীদের যে যত্ন নিতেন তাতে যুদ্ধাপরাধীদের মৃত মনুষ্যত্ব আস্তে আস্তে পুনর্জীবিত হয়েছে । তাত্বিক পুস্তক অধ্যয়ন করতে করতে তাঁরা জাপানী আগ্রাসী যুদ্ধের প্রকৃতি অনুধাবন করেছিলেন । তাঁরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছিলেন এবং তাদের কঠোর শাস্তি দিতে চীন সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন।

    ১৯৬৫ সালের গ্রীষ্মকালে চীনের সর্বোচ্চ গণ আদালতের অধীনস্থ বিশেষ সামরিক আদালত ১০১৭ জন জাপানী যুদ্ধাপরাধীকে ক্ষমা সহ মুক্তি দেওয়ার রায় ঘোষণা করে । শুধু গুরুতর অপরাধ সাধনকারী ৪৫জন যুদ্ধাপরাধীকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে ।

    বিশেষ সামরিক আদালত রায় ঘোষণা করার পর যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে কেই আপিল করে নি । তাঁরা সবাই নিজদের অপরাধ স্বীকার করেছেন । আসামীদের কাঠগড়ায় মাঝেমধ্যে অনুতাপ আর কৃতজ্ঞতা মেশানো কান্না শোনা যায় । আদালতে উপস্থিত থাকা একজন বিদেশী সংবাদদাতা মন্তব্য করে বলেছেন, বিচারপতি ও আসামীর অবস্থান পৃথক , কিন্তু আদালতে উভয়পক্ষই একবাক্যে যে জাপানী সাম্রাজ্যবাদের হিংসাত্মক কার্যকলাপের নিন্দা করেছেন তা আন্তর্জাতিক বিচারের ইতিহাসে অদ্বিতীয় ।

    দেশে প্রত্যাবর্তনের পরবর্তী ৫০ বছর জাপানী যুদ্ধাপরাধীরা জাপান-চীন মৈত্রী জোরদার করা ও বিশ্বশান্তি রক্ষার প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন ।১৯৫৭ সালে সাবেক যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে চীন ফেরত জাপানী সমিতি গঠিত হয় । এই সমিতির সদস্যরা যে চীনে জাপানী সমরবাদীদের অপরাধ উদঘাটন করেছেন তার প্রভাব পড়েছে জাপানের নতুন বংশধরদের উপর । ২০০২ সালে তাঁদের ছেলেমেয়ে ও শান্তিপ্রিয় জাপানীদের নিয়ে যে ফুসেন বিস্ময় স্মরণ কমিটি গঠিত হয়েছ তা জাপান-চীন মৈত্রীর পতাকা উর্ধ্বে তুলে ধরেছে ।

    ফুসেন যুদ্ধাপরাধীশালা এখন একটি প্রদর্শনী ভবনে পরিণত হয়েছে । এই বছরের মে মাসে একদল সাবেক জাপানী যুদ্ধাপরাধী এখানে ফিরে এসে আবার অতীতের অপরাধের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করেছেন । এই প্রদর্শনীভবনের পরিচালিকা মাদাম হৌ গুই হোয়া সম্প্রতি জাপান সফর করে চীনে ফিরে এসে জাপানে চীন ফেরত জাপানী সমিতির ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেছেন:

    তথ্য সংগ্রহ ছিল আমাদের এবারের জাপান সফরের উদ্দেশ্য । জাপানের দক্ষিণপন্থী শক্তির স্পর্ধা উপেক্ষা করে চীন ফেরত জাপানী সমিতির সদস্যরা দৃঢ়ভাবে আগ্রাসনের বিরোধিতা করে যে শান্তি রক্ষা করছেন এবং দু দেশের বন্ধুত্বের উন্নতি সাধনের নিরলস প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তাতে আমরা গভীরভাবে মুগ্ধ হয়েছি ।

    ফুসেন বন্দিশালার অন্যতম কর্মী চুই রেন জির বয়স এখন আশির উপর । তিনি জাপানী আগ্রাসন বিরোধী যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন ।চীন -জাপান সম্পর্কের উন্নয়নের বন্ধুর পথের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন ,তিনি তাঁর ভরসা রেখেছেন দুদেশের যুব সমাজের উপর ।

    তিনি আরো বলেছেন , ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে আমি আশা করি , চীন ও জাপানের তরুনতরুণীরা অতীতের ইতিহাস ভুলবেন না এবং বর্তমানের শান্তিময় পরিবেশ সযত্নে রক্ষা করে বিশ্বের উজ্জ্বল ভবিষ্যত সৃষ্টির ব্যাপারে অবদান রাখবেন