কিছু দিন আগে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের মসজিদ ও ইসলাম ধর্ম শাস্ত্রীয় প্রশিক্ষন ইন্সটিটিউট থেকে আগত ইমাম, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীরা পেইচিংয়ে "ওয়াজ"নামক একটি বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন।
"ওয়াজ"আরবী ভাষার উচ্চারন থেকে নেয়া হয়েছে। এর অর্থ পরামর্শ। অর্থাত মানুষের দয়ার পরামর্শ এবং দুরাচার ঠ্যাকানো। "ওয়াজ"ক্রিয়াকর্ম এমন এক ধরনের ঐতিহ্যিক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের ইমাম ও মোল্লারা ইসলাম ধর্মবলম্বীদের কাছে শাস্ত্রীয় শিক্ষা প্রচার করেন। "ওয়াজ"-এর বিষয়বস্তু খুবই ব্যাপক এবং তা ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত। এর আগে চীনের ইসলাম ধর্ম সমিতির উদ্যোগে ১৯৯৬ সাল আর ১৯৯৮ সালে পর পর দু'বার দেশব্যাপী "ওয়াজ" প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
এবারকার "ওয়াজ" প্রতিযোগিতায় চীনের মোট ২৫টি প্রদেশ, শহর ও স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের ৫ জন নারীসহ মোট ৫৪ জন বক্তা অংশ নিয়েছেন। তাঁরা সবাই অল্পবয়সী ইমাম আর ইসলাম ধর্ম শাস্ত্রীয় ইন্টিটিউটের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী। এই সব বক্তা চীনের বর্তমান পরিস্থিতি ও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক বিষয়ে গভীর আর ব্যাপকভাবে বক্তৃতা দিয়েয়েছেন। বক্তারা ইসলাম ধর্মের মানবাধিকার বোধ, চীনের উত্তর পশ্চিমাংশের ব্যাপক উন্নয়নের রননীতি, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করা, পুরুষ ও নারীদের সমতা, মুসলমানদের জীবনযাপনের বোধ প্রভূতি বিষয়কে তাঁদের বক্তৃতার বিষয়বস্তু হিসেবে বাছাই করেছেন। তাঁদের বক্তৃতায় কোরান আর হাদিসের সঙ্গে ও সব বিষয় যথাযথভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে এবং প্রচারের ভাল ফলাফল অর্জিত হয়েছে।
চীনের কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু জাতি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসার, হান ভাষায় কোরানের অনুবাদক লিন সুং এবারকার "ওয়াজ" বক্তৃতা প্রতিযোগিতার বিচারক কমিটির একজন সদস্য। তিনি বলেছেন, চীনের ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সঙ্গে "ওয়াজ" প্রতিযোগিতার প্রচলন ১৩০০ বছর পুরানো। যদিও " ওয়াজ" বক্তৃতায় কোরান আর হাদিসের বিষয়বস্তু প্রচার করা হয়, কিন্তু যেহেতু এতে মধ্য যুগের ইসলামী পন্ডিতদের মতবাদ ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সেহেতু তা যুগের অগ্রগতি আর ইসলাম ধর্মের সংস্কৃতির উন্নয়নের সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না। সুতরাং এমন "ওয়াজ" প্রতিযোগিতা শুনে মুসলমানরা বেশি উপকুত হবেন না।
প্রফেসার লিন বলেছেন, সংস্কার চালানো চীনের ইসলাম ধর্ম সমিতির উদ্যোগে "ওয়াজ" প্রতিযোগিতা আয়োজনের প্রধান লক্ষ্য। চীনে কিছু সংখ্যক ইমাম কয়েক শো বছল এমন কি এক হাজার বছরেরও বেশি সময় আগেকার শাস্ত্রীয় পন্ডিতদের মতবাদ প্রচার করছেন, তা প্রৌঢ় ও অল্পবয়সী মুসলমানদের পক্ষে বোঝা খুব কঠিন। এই পরিস্থিতিতে "ওয়াজ" প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তু আর পদ্ধতির দিক থেকে সংস্কার চালানো খুব প্রয়োজন। যাতে তা বর্তমান যুগের মুসলমানদের পক্ষে সহজে বোঝা যায়।
তিনি মনে করেছেন, এবারকার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের বক্তৃতা খুবই সফল হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন, এমন প্রতিযোগিতা বিভিন্ন অঞ্চলের মসজিদ ইমামদের "ওয়াজ" প্রচার করার জন্যে কল্যানকর। বর্তমান সমাজের বাস্তবতার ভিত্তিতে প্রচার করায় তা নতুন যুগের চাহিদার সঙ্গেও খাপ খাবে।
বক্তৃতা প্রতিযোগিতা তিন দিন চলার পর এবারকার প্রতিযোগিতা বিচারক কমিটির পরিচালনায় পুরুষ, নারী ও উইগুর ভাষাভাষী বক্তার মধ্যে একজন করে প্রথম শ্রেনীর পুরস্কার আর দ্বিতীয় শ্রেনী, তৃতীয় শ্রেনী ও বিজয়ী শ্রেনী পুরস্কার প্রাপ্ত বক্তাদের নির্বাচন করা হয়েছে। হোনান প্রদেশের চেনচৌ শহরের ইমাম লিউ স্যু ছাং প্রতিযোগিতায় দয়ার পরামর্শ, দূরাচার ঠ্যাকানো আর সত্যতার প্রশংসা নামক একটি বক্তৃতা দিয়ে পুরুষ বিভাগের প্রথম শ্রেনীর পুরস্কার জয় করেছেন।
এবার পেইচিংয়ে এসে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার যে সুযোগ পেয়েছি, তার সবচাইতে বড় উপকার পুরস্কার পেয়েছি তা নয়, বরং প্রতিযোগিতায় নানা ধরনের বক্তৃতা শুনে উপকৃত হয়েছি।
"ওয়াজ" প্রতিযোগিতাকে সাধারণত: পুরুষ ইমাম ও মোল্লাদের কাজকর্ম বলে মনে করা হতো। মুতরাং এবারকার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী পাঁচজন নারী ইমাম আরো আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছেন। নারী বিভাগের বিজয়ী পুরস্কার প্রাপ্ত নিম্রসিয়া স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলের উ চুন শহরের নারী ইমাম ওয়াং সুইয়ান বলেছেন, চীনে উইগুর জাতি, হুই জাতি, কিরগিজ জাতি, তাজিক জাতি, তুংসিয়াং জাতি, পাওআন জাতি প্রভৃতি দশটি সংখ্যালঘু জাতি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে। মুসলমানদের সংখ্যা ২ কোটিরও বেশি হয়েছে। বর্তমানে চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে মোট ৩০ হাজারটিরও বেশি মসজিদ আছে। সাপ্তাহিক পবিত্র জুমা এবং ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উল-আজহা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ দিবসে ইমাস আর মোল্লারা যার যার জাতির ভাষায় হাজার হাজার মুসলমানদের কাছে ইসলাম ধর্ম শাস্ত্রীয় শিক্ষা প্রচার করেন।
|