চীন এক বিশাল দেশ। তার লোকসংখ্যার অর্ধেকই নারী। নারীরা চীনদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, নির্মাণ এবং সমাজ-জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বলা যায় চীনদেশে নারীদের বাদ দেয়া অকল্পনীয় ব্যাপার। বলা হয়, তাঁরা চীনের অর্ধেক আকাশ তুলে ধরে আছেন। নানা ক্ষেত্রে তারা পুরুষদের সঙ্গে সমান অধিকার উপভোগ করেন। এ সত্ত্বেও নারীদের অধিকার রক্ষার জন্যে চীনদেশে আলাদা আলাদা নীতিও প্রণয়ন করা হয়েছে।
১৯৮২ সালে প্রকাশিত চীনের সংবিধানের ৪৮ নম্বর ধারায় নির্ধারিত হয়েছে যে, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক আর পারিবারিক জীবনে চীনের নারীরা পুরুষদের সঙ্গে সমান অধিকার উপভোগ করেন। রাষ্ট্র নারীদের অধিকার আর স্বার্থ রক্ষা করে, একই কাজে নারী-পুরুষের সমান বেতন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, নারী-ক্যাডার বাছাই ও লালনপালন করে। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত "নারী-শ্রমিকদের শ্রমনিরাপত্তা সম্পর্কিত বিধিতে" বলা হয়েছে যে, নারী-শ্রমিকদের পরিশ্রম করার অধিকার রক্ষা করা হবে, নারীদের শারীরিক যোগ্যতায় পেশাগত উপাদানের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করা হবে, নারীদের শারীরিক প্রকৃতির ক্ষতি সাধন করে না, এমন কাজে নারী-শ্রমিকদের নিযুক্ত করা হবে, নারীদের শারীরিক ক্রিয়ার পরিবর্তনকালের শ্রমনিরাপত্তা ভালভাবে রক্ষা করা হবে।
১৯৯২ সালে, প্রকাশিত "নারীদের অধিকার আর স্বার্থের নিশ্চয়তাবিধান আইনে" স্পষ্টভাএ ছয় দিক থেকে নারীদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ নিশিত করা হয়েছে। যেমন, পুরুষদের সঙ্গে নারীদের সমান রাজনৈতিক অধিকার, সাস্কৃতিক শিক্ষা লাভ করার অধিকার, শ্রম-অধিকার, সম্পদ-অধিকার, ব্যক্তিগত অধিকার, বিবাহ ও পরিবার সংশ্লিষ্ট অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা হবে। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত "শ্রম আইনের" ১৩ নং ধারায় নির্ধারিত হয়েছে যে, পুরুষদের সঙ্গে নারীরা সমান কর্ম-সংস্থানের অধিকার উপভোগ করেন। নারীদের পক্ষে উপযোগী নয়, রাষ্ট্রের নির্ধারিত এমন কাজ বা পদ ছাড়া শ্রমিক নিয়োগের সময়ে লিঙ্গের কারণে নারীদের নিয়োগ প্রত্যাখান বা অসম মানদন্ড ব্যবহার করা যাবে না।
নারী-শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার অবস্থা সম্পর্কে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট সংস্থা এক মতামত জরিপ চালিয়েছে। জরিপ থেকে জানা গেছে, শতকরা ৭৯.৬ ভাগ নারী-শ্রমিক কর্মসংস্থানের অধিকার উপভোগ করেন, শতকরা ৮০.৬ ভাগ নারী শ্রমিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় অংশ গ্রহন করার অধিকার উপভোগ করেন। শতকরা ৭৭.৬ ভাগ নারী-শ্রমিক সামাজিক বীমার অধিকার উপভোগ করেন। জরিপ থেকে জানা গেছে যে, শতকরা ৭৮.৬ ভাগ নারী-শ্রমিক বৃদ্ধ বয়সের বীমা উপভোগ করেন, শতকরা ৭৪.৫ ভাগ নারী শ্রমিক চিকিত্সা-বীমা উপভোগ করেন, শতকরা ৬৫.৩ ভাগ নারী-শ্রমিক বেকার-বীমা উপভোগ করেন আর শতকরা ৫৫.১ ভাগ নারী শ্রমিক শ্রমাহত বীমা উপভোগ করেন। কিন্তু জরিপটি থেকে জানা গেছে যে, মাত্র ২৬.৫ শতাংশ নারী শ্রমিক প্রসব-বীমা উপভোগ করেন।
জরিপ-ফর্মে অনেক নারী শ্রমিক নিজেদের মনের কথাও ব্যক্ত করেছেন। তারা বলেছেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানে যদি ভাল নেতা থাকেন তাহলে এটা তাদের সৌভাগ্য। কেউ কেউ বলেছেন, রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের একজন নারীশ্রমিক হিসেবে তিনি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিকাশ আর নিজের কর্মসংস্থানের উপর বেশী মনোযোগ দেন।
চীন ট্রেড ইউনিয়ন শ্রমিকদের সংগঠন। জরিপ ফর্মে কোনো কোনো নারী শ্রমিক ট্রেড-ইউনিয়নের প্রতি তাদের আশা প্রকাশ করেছেন যে, ট্রেড-ইউনিয়ন নারী-শ্রমিকদের পক্ষে দাঁড়াবে, ব্যবস্থাপক আর শ্রমিকদের মাঝখানে নয়। নারী-শ্রমিকদের জন্যে দাঁড়িয়ে নারীদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থ রক্ষা করবে এবং তাদের কথা ভাববে। ইত্যাদি ইত্যাদি।
|