শিশু একবারে যে খাবার খেতে পারে সেই পরিমাণ খাদ্য তৈরী করতে হবে। তৈরী অতিরিক্ত খাবার পরিবারের অন্যরা খেয়ে নেবে। শিশুদের খাবার দাবার সহজেই নষ্ট হয়ে যায়, বিশেষ করে দুধ। মায়ের দুধে অবশ্য এসব ঝামেলা নেই। তবে যে সকল মা চাকরি করেন বা বেশীর ভাগ সময় ঘরের বাইরে কাটান , তাঁরা বুকের দুধ হাত দিয়ে চেপে বের করে কাপ বা বাটিতে রেখে যেতে পারেন। মায়ের বুকের দুধ বাইরে রাখলে ৮ ঘন্টা এবং ফ্রীজে রাখলে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত ভাল থাকে। গরুর দুধ খাওয়ানোর পূর্বে প্রতিবারেই অন্ততঃ ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিতে হবে। খোলা রাখলে কৌটার গুড়ো দুধ সহজে নষ্ট হয়ে যায়। কৌটার গায়ে "ব্যবহার সীমার তারিখ" (Expiry Date) দেখে নেবেন এবং কৌটা সর্বদা শুকনো ও ঠান্ডা জায়গায় রাখবেন। নতুন কৌটা খোলার পর ৩ সপ্তাহের বেশী ব্যবহার করা উচিত নয় এবং প্রতিবার খোলার পর ভালভাবে ঢাকনা লাগিয়ে বন্ধ করে রাখবেন। কৌটার দুধ শিশুকে খাওয়ানোর পূর্বে প্রতিবার তৈরী করবেন। ২/৩ বার খাওয়ানোর জন্য একবারে দুধ তৈরী করবেন না। তরল বা গুঁড়ো দুধে কখনো হাত লাগাবেন না। তরল দুধে কখনও আঙ্গুল ডুবিয়ে গরম পরীক্ষা করবেন না। নিজের হাতের পিঠে কয়েক ফোঁটা দুধ ঢেলে গরম পরীক্ষা করুন । সুজি খিচুড়ী ইত্যাদি বা অন্যান্য রান্না করা খাবার ফ্রীজে না রাখলে রান্নার ২ ঘন্টা পর থেকে নষ্ট হওয়া শুরু করে। অতএব রান্না করা খাদ্য দুই ঘন্টা পরে শিশুকে খাওয়াবেন না। আর রান্নার ২ ঘন্টার মধ্যে ফ্রিজে রাখলে ভাত ব্যতীত অন্যান্য খাবার প্রায় ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত রেখে খাওয়ানো যায়, তবে ২৪ ঘন্টার বেশি না রাখাই ভাল। ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টার বেশী সময় রেখে কোন খাবার খাওয়ানোর ইচ্ছে থাকলে তা ডিপ ফ্রিজে রাখুন। মনে রাখবেন বার বার ফ্রিজ খুললে বা ফ্রিজের দরজা অনেকক্ষণ ধরে খুলে রাখলে ফ্রিজের ভেতরের ঠান্ডা তাপমাত্রা সঠিক থাকে না। খাওয়ানোর আধঘন্টা পূর্বে ফ্রীজ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য বের করে ঢেকে রাখুন, ঠান্ডা কেটে গেলে শিশুকে খেতে দিন অথবা ফ্রিজ থেকে বের করার পর খাবারের পাত্রটি একটি গরম পানির পাত্রে আধাআধি ডুবিয়ে রেখে ঠান্ডা কাটিয়ে নিন।
অবশেষে মনে রাখবেন আপনি যত যত্ন করেই শিশুর খাবার বানান না কেন সংরক্ষণ করুন না কেন খাওয়ানোর সময় অপরিষ্কার হাতের স্পর্শ, দূষিত পানিতে ধোয়া, অপরিষ্কার পাত্র বা চামচ দিয়ে খাওয়ালে শিশুর পেটের অসুখ হবে। আরো লক্ষ্য করুন যে, ডিপ ফ্রিজে রাখা খাদ্যের মধ্যেও কিন্তু জীবাণু সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পাএ। তাই কাটা মাছ মাংস ইত্যাদি ডিপ ফ্রিজ থেকে বরে করে রেখে পুরোপুরি ঠান্ডা কাটিয়ে নেবেন, তা না হলে রান্না করার সময় মাছ বা মাংসের বড় টুকরার মধ্যবর্তী স্থানে ঠান্ডার কারণে ভালোভাবে তাপ নাও পৌঁছাতে পারে। তাপ ভালভাবে না পৌঁছার কারণে ঐ মধ্যবর্তী স্থানের জীবাণু ধ্বংস হবে না এবং ঐ খাদ্য শিশু খেলে অচিরেই পেটের অসুখে আক্রান্ত হবে।
---ডাঃ মাহমুদ এ. চৌধুরী (আরজু) , চট্টগ্রাম মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতাল, দৈনিক ইত্তেফাক
|